সিন্ধু ফিরে পাচ্ছেন ফোন, খেতে পারবেন আইসক্রিম!
এবারের মিশন শেষ। পি ভি সিন্ধু নিজের স্মার্টফোনটি ফেরত পাবেন। হোয়াটস অ্যাপ করতে পারবেন বন্ধুদের। ইচ্ছেমতো খেতে পারবেন আইসক্রিম।
মানে কী? হ্যাঁ। গতকাল শুক্রবার রিও অলিম্পিকে ব্যাডমিন্টনের ফাইনালে স্পেনের ক্যারোলিনা মারিনের সঙ্গে লড়াইয়ের আগে এসব থেকে বঞ্চিত ছিলেন পুসারলা ভেঙ্কাটা সিন্ধু। কোচ পুল্লেলা গোপীচাঁদের কঠোর অনুশীলনে নিজেকে প্রস্তুত করেছেন সিন্ধু।
ফাইনালে মারিনের সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছে সিন্ধুর। শেষ মুহূর্তে এসে হেরে যান। তাতে কি? প্রথম ভারতীয় নারী হিসেবে জিতে নিয়েছেন অলিম্পিকের রৌপ্যপদক। জমজমাট এক লড়াইয়ে বিশ্ব র্যাংকিংয়ের দশ নম্বরে থাকা সিন্ধুকে হারিয়ে স্বর্ণ জিতে নেন এক নম্বরে থাকা ক্যারোলিনা মারিন।
সিন্ধুর অর্জনে পুরো ভারতই খুশি। টাইমস অব ইন্ডিয়া জানিয়েছে, ভারতীয় ব্যাডমিন্টন দলের কোচ পুল্লেলা গোপীচাঁদের প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হয়। গোপীচাঁদ শুরুতেই বলেছেন, ‘সিন্ধুর কাছে গত তিন মাস ধরে কোনো ফোন ছিল না। প্রথম কাজটি যেটা করব, সেটা হচ্ছে তার ফোনটা ওকে ফেরত দেব। দ্বিতীয়ত, ব্রাজিলে আসার পর থেকে ওকে কোনো আইসক্রিম বা মিষ্টিজাতীয় খাবার খেতে দেইনি আমি। এখন সে যা ইচ্ছে খেতে পারে।’
কঠোর পরিশ্রম করার জন্য সিন্ধুর প্রশংসা করেন তাঁর কোচ ও সাবেক ব্যাডমিন্টন তারকা গোপীচাঁদ।
গোপীচাঁদ বলেন, ‘গত সপ্তাহটা তার দারুণ ছিল। গত দুই মাসে সিন্ধু যা করেছে তা দুর্দান্ত। এখন প্রতিটা ক্ষণ উপভোগ করার অধিকার আছে ওর। আমি যা চেয়েছিলাম, একদম তাই করেছে সিন্ধু। আমি সত্যিই অনেক খুশি।’
তবে স্বণ চলে এলে, জাতীয় সংগীত বাজলে গোপীচাঁদ খুশি হতেন বেশি। তিনি বলেন, ‘জাতীয় পতাকা উড়লে, জাতীয় সংগীত বাজলে দারুণ হতো। কিন্তু এরপরও সিন্ধুকে হ্যাটস অফ।’
এবার রিও অলিম্পিকে প্রিলিমিনারিতে র্যাংকিংয়ের ২০ নম্বরে থাকা কানাডার মিশেইলি লি কে, রাউন্ড পর্বে র্যাংকিংয়ে ৮ নম্বরে থাকা চায়নিজ তাইপের তাই জু-ইয়ংকে, কোয়ার্টার ফাইনালে র্যাংকিংয়ে ২ নম্বরে থাকা চীনের ওয়ান ইহানকে এবং সেমিফাইনালে র্যাংকিংয়ে ৬ নম্বরে থাকা জাপানের নজমি ওকুহারাকে পরাজিত করেন সিন্ধু।
আসছে নতুন সিনেমা!
সিন্ধুকে নিয়ে হৈ চৈ তো পড়েছেই, সেখানে বাদ পড়ছেন না সিন্ধুর কোচ গোপীচাঁদও। উভয়েই হায়দরাবাদের বাসিন্দা। পুল্লেলা গোপীচাঁদ নিজেও ছিলেন তারকা ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড়। ২০০১ সালে অল ইংল্যান্ড ওপেন ব্যাডমিন্টন চ্যাম্পিয়নশিপ জয় করে হৈ চৈ ফেলে দেন তিনি। ১৯৮০ সালে প্রকাশ পাড়ুকোনের পর দ্বিতীয় ভারতীয় হিসেবে ওই খেতাব জিতেন তিনি।
১৯৭৩ সালে জন্ম নেওয়া গোপীচাঁদ হতে চেয়েছিলেন ক্রিকেটার। কিন্তু বড় ভাইয়ের উৎসাহে খেলেন ব্যাডমিন্টন।
হিন্দুস্তান টাইমস জানিয়েছে, সফল ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড় গোপীচাঁদের জীবন নিয়ে চলচ্চিত্রের পরিকল্পনা হয় সেই ২০১১ সালে। অল ইংল্যান্ড জয়ের পরই ওই পরিকল্পনা করা হয়।
ওই চলচ্চিত্রের প্রযোজক অভিষেক নামা বলেন, ‘গোপীচাঁদের জীবনটা সিনেমা হওয়ার মতো। তাঁর শুরুর দিকের সংগ্রাম, মায়ের আবেগ, আঘাত আর আঘাতের কারণে ক্যারিয়ার প্রায় শেষ হয়ে যাওয়া, ফিরে এসে ভারতের ব্যাডমিন্টন দলকে বদলে দেওয়া- এক কথায় অসাধারণ।’
জাতীয় পুরস্কার পাওয়া পরিচালক প্রবীণ সাত্তারুর হাতেই পরিচালিত হবে গোপীচাঁদের কাহিনী। আগামী নভেম্বরেই শুরু হবে চলচ্চিত্রের শুটিং।
এ ব্যাপারে গোপীর স্ত্রী লক্ষ্মী খুব খুশি। তিনি বলেন, ‘বেশ উৎসাহমূলক চলচ্চিত্র হবে এটি। কঠোর পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে গোপী আজ এ পর্যন্ত এসেছে।’ লক্ষ্মী নিজেও জাতীয় পর্যায়ে ব্যাডমিন্টন চ্যাম্পিয়ন ছিলেন। ২০০২ সালে তাঁদের বিয়ে হয়।
বলিউডে এর আগে মিলখা সিং, বক্সার মারি কম, ক্রিকেটার আজহার ও ধোনিকে নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। তবে চলচ্চিত্রে গোপীচাঁদ নায়ক নয়, ব্যাডমিন্টনের ঘুরে দাঁড়ানোকেই প্রাধান্য দেওয়া হবে।
কিন্তু গোপীর অধীনে সিন্ধুর অলিম্পিক জয়ে চলচ্চিত্রটা কেমন দাঁড়ায় সেটা এখন দেখার বিষয়।