ব্যর্থতা ভুলে ধোনির দৃষ্টি বিশ্বকাপে
বিশ্বকাপের আগে অস্ট্রেলিয়ার কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার খুব ভালো সুযোগ পেয়েছে ভারত। গত নভেম্বরের শেষ থেকে অস্ট্রেলিয়ায় আছে মহেন্দ্র সিং ধোনির দল। কিন্তু প্রায় আড়াই মাস বিশ্বকাপের সহ-আয়োজকদের মাটিতে থাকার সুফল তারা কতটা পেয়েছে, তা বলা বেশ কঠিন। ভারত অধিনায়ক ধোনি অবশ্য ব্যর্থতা নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে তাকিয়ে আছেন বিশ্বকাপের দিকে।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে চার ম্যাচের টেস্ট সিরিজে ২-০ ব্যবধানে হেরে যাওয়ার পর ওয়ানডেতেও ব্যর্থ বিশ্বকাপের বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা। অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ত্রিদেশীয় সিরিজের চারটি ম্যাচেই হার মেনেছে ভারত। ওয়ানডের সেরা টুর্নামেন্ট শুরু হওয়ার আগে তাই বেশ চাপের মধ্যে ‘টিম ইন্ডিয়া’। ভারতের কোনো কোনো ক্রিকেট-বিশেষজ্ঞের আশঙ্কা, একটানা খেলার ক্লান্তি বিশ্বকাপে দলের পারফরম্যান্সে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।
তবে ধোনি এসব নিয়ে চিন্তিত নন। ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে বিশ্বকাপে অংশ নেওয়াই জরুরি বলে মনে করছেন ভারতের ক্রিকেট-ইতিহাসের অন্যতম সফল অধিনায়ক। ২০১৩ আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফির অভিজ্ঞতা প্রেরণা জোগাচ্ছে তাঁকে। সেবার একটানা অনেক ম্যাচ খেলে ইংল্যান্ডে গিয়েছিল ভারত। ফাইনালে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে শিরোপাও জিতেছিল তারা।
ধোনির দৃঢ় বিশ্বাস, সেবারের মতো অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের মাটিতেও তাঁর সতীর্থরা জ্বলে উঠতে পারবেন। শনিবার প্রাক-বিশ্বকাপ সংবাদ সম্মেলনে সেই দৃঢ়তাই ফুটে উঠল তাঁর কণ্ঠে, ‘২০১৩ সালের চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতেও আমরা প্রায় একই রকম পরিস্থিতিতে অংশ নিয়েছিলাম। আর সেই টুর্নামেন্টে ছেলেরা ভালোই খেলেছিল। আমার কাছে এটাই জরুরি বলে মনে হয়। এ রকম একটা আসরে আমরা কী রকম আত্মবিশ্বাসী মনোভাব নিয়ে অংশ নিচ্ছি, সেটাই অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’
এবারের বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়া আর দক্ষিণ আফ্রিকাকে ফেভারিট বলে মনে করছেন অনেকে। তবে ধোনির মতে দুটি নয়, অনেক দল শিরোপার দাবিদার, ‘আমার মনে হয় এই বিশ্বকাপে বেশির ভাগ দলই খুব ভারসাম্যপূর্ণ আর তারা খুব ভালো অবস্থায় আছে। বেশির ভাগ বলতে আমি ছয় বা সাতটি দলের কথা বলছি। মনে হয় সব দলের জন্যই এটা বিশেষ একটা বিশ্বকাপ হতে যাচ্ছে।’
১৫ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে শুরু হবে ভারতের বিশ্বকাপ-অভিযান। বিশ্বকাপের সূচি চূড়ান্ত হওয়ার পর থেকেই দুই দেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের মধ্যে ম্যাচটিকে ঘিরে তুমুল আগ্রহ, ভীষণ উত্তেজনা। ধোনি অবশ্য ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় আসরে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর ষষ্ঠ লড়াইকে ‘সাধারণ’ একটা ম্যাচ হিসেবে দেখতেই আগ্রহী, ‘এই ম্যাচ নিয়ে অনেকের অনেক রকম দৃষ্টিভঙ্গি। আমি ব্যক্তিগতভাবে অবশ্য এই ম্যাচকে অস্ট্রেলিয়া-শ্রীলঙ্কা বা অন্য কোনো টেস্ট খেলুড়ে দেশের সঙ্গে লড়াইয়ের মতো দেখতে চাই। কারণ যখনই আপনি ম্যাচটাকে ঐতিহ্যবাহী লড়াই বা এ ধরনের চিন্তা-ভাবনা থেকে দেখা শুরু করবেন, তখনই আপনার ওপর বাড়তি চাপ তৈরি হবে।’
বিশ্বকাপ শুরু হওয়ার ঠিক আগে একটা সুখবর পেয়েছেন ধোনি। শুক্রবার তাঁর স্ত্রী সাক্ষী এক কন্যাসন্তানের জন্ম দিয়েছেন। সংবাদ সম্মেলনে ভারতের অধিনায়ককে অভিনন্দন জানিয়ে একজন প্রশ্ন করেছিলেন, ‘জীবনের এমন গুরুত্বপূর্ণ সময়ে অস্ট্রেলিয়ার বদলে ভারতে থাকলেই কি আপনার জন্য ভালো হতো না?’ এমন প্রশ্নের সামনে দাঁড়িয়েও অবিচল ভারতকে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শিরোপা এনে দেওয়া ধোনি। তাঁর উত্তরে খুঁজে পাওয়া গেল এক আপাদমস্তক পেশাদার খেলোয়াড়কে, ‘একদমই না। আমি এখন জাতীয় দায়িত্ব পালন করছি। সব কিছুর জন্যই অপেক্ষা করা সম্ভব। কিন্তু বিশ্বকাপের মতো গুরুত্বপূর্ণ টুর্নামেন্ট জীবনে খুব বেশি আসে না।’