মুশফিকের গৌরবোজ্জ্বল এক দশক
ঠিক ১০ বছর আগে, ২০০৫ সালের ২৬ মে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয়েছিল ১৮ বছর বয়সী এক তরুণের। অনেকেই সেটাকে দেখেছিলেন নির্বাচকদের ‘জুয়া’ হিসেবে। কিন্তু পরবর্তী ১০ বছরে সেই তরুণ নিজেকে প্রমাণ করেছেন জাতীয় দলের অপরিহার্য সদস্য হিসেবে। তাঁর ব্যাট হয়ে উঠেছে নির্ভরতার প্রতীক। তিনি মুশফিকুর রহিম। মঙ্গলবার মুশফিক পূর্ণ করলেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ারের এক দশক।
২০০৫ সালে ক্রিকেট-তীর্থ লর্ডসে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অভিষেক হয়েছিল মুশফিকের। সেই ম্যাচে অভিষেক হয়েছিল শাহাদাত হোসেনেরও। ১০ বছর পর এই দুজনের পারফরম্যান্স বিচার করলেই বোঝা যায় মুশফিক কত সফলতার সঙ্গে পার করলেন ১০টি বছর। গত ১০ বছরে শাহাদাত খেলতে পেরেছেন ৩৮ টেস্ট ও ৫১টি ওয়ানডে। সেই জায়গায় মুশফিক খেলেছেন ৪৫ টেস্ট ও ১৪৯টি ওয়ানডে।
১৯ বছর বয়স হওয়ার আগে অভিষেক হয়েছে এমন খেলোয়াড়দের মধ্যে মুশফিকই সবচেয়ে সফলভাবে পার করেছেন প্রথম ১০টি বছর। টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে সবচেয়ে কম বয়সে অভিষেক হয়েছিল মোহাম্মদ আশরাফুলের। অভিষেক টেস্টে সেঞ্চুরি করে রাতারাতি তারকাও হয়ে যান। কিন্তু দুর্নীতির ফাঁদে পা দিয়ে সম্ভাবনাময় ক্রিকেট ক্যারিয়ারের অকালমৃত্যু ঘটিয়েছেন আশরাফুল। ২০০৩ সালে অভিষেকের পর মাত্র ১৫টি টেস্ট খেলতে পেরেছেন বাঁ-হাতি স্পিনার এনামুল হক। মাশরাফি বিন মুর্তজাও আছেন এই তালিকায়। ২০০১ সালে ১৮ বছর বয়সে অভিষেক হয়েছিল বাংলাদেশের বর্তমান ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি অধিনায়কের। কিন্তু ইনজুরির সঙ্গে লড়াই করতে-করতে ২০০৯ সালে সর্বশেষ টেস্ট খেলেছেন তিনি। পাঁচ দিনের ক্রিকেটে মাশরাফিকে আর দেখতে পাওয়ার সম্ভাবনাও কম।
২০০৫ সালে মুশফিককে দলে নেওয়ার সময় যে অনেকেই ভ্রু কুঁচকেছিলেন, সেটা স্বীকার করে নিয়েছেন সেই সময় এবং বর্তমানের প্রধান নির্বাচক ফারুক আহমেদও, ‘মুশফিককে নির্বাচন করার সময় আমরা এমন কাউকে নিতে চাইছিলাম যার ব্যাটিং টেকনিক ভালো আর যে সাহসী। আমাদের মনে হয়েছিল এই ছেলেটা (মুশফিক) ভালো করতে পারবে। তখন উইকেটরক্ষক ছিল খালেদ মাসুদ পাইলট। মুশফিককে সুযোগ দেওয়া হয়েছিল ব্যাটসম্যান হিসেবে।’
নির্বাচকদের আস্থার প্রতিদান দারুণভাবে দিয়েছেন মুশফিক। বাংলাদেশের ব্যাটিং নির্ভরতার প্রতীক ও বর্তমান টেস্ট অধিনায়ক উইকেটরক্ষণের দায়িত্বও সামলাচ্ছেন আস্থার সঙ্গে। তবে আজও অভিষেক ম্যাচ মুশফিকের স্মৃতিতে উজ্জ্বল, ‘সেদিনের অনুভূতিটা ছিল দুর্দান্ত। লর্ডসে নামার ভীষণ রোমাঞ্চ বোধ করছিলাম। আমাদের প্রতিপক্ষ ছিল দারুণ একটা দল। তবে ব্যাট হাতে মাঠে নামার সময় আমি কোনো বোলারের দিকে তাকাইনি। আমি শুধু বল দেখেছি আর খেলেছিল।’
অভিষেকটা অবশ্য ভালো হয়নি মুশফিকের। দুই ইনিংসে ১৯ আর তিন রান করেছিলেন তিনি। বাংলাদেশ ম্যাচটা হেরেছিল এক ইনিংস ও ২৬১ রানে।
তবে শুরুর হতাশা পেছনে ফেলে আজ তিনি স্বমহিমায় উজ্জ্বল। ৪৫ টেস্টে তিনটি শতক ও ১৪টি অর্ধশতকসহ ৩২.৩৪ গড়ে দুই হাজার ২৫৫৫ রান করেছেন মুশফিক। ২০১৩ সালে বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে দ্বিশতক করার কৃতিত্বও তাঁর। টেস্টের মতো ওয়ানডেতেও মুশফিক সফল। ১৪৯ ওয়ানডে খেলে তিনটি শতক ও ২২টি অর্ধশতকসহ ৩১.৩৭ গড়ে তিন হাজার ৬৭১ রান সেই সাক্ষ্যই দিচ্ছে। পাশাপাশি টেস্টে ৮৭ আর ওয়ানডেতে ১৫২টা ডিসমিসাল তো আছেই।
মুশফিকুর রহিমকে ছাড়া আসলে বাংলাদেশ দল কল্পনা করাই কঠিন!