বাংলাদেশের বিদায় ঘণ্টা বাজিয়ে সেমির পথে ভারত
সুপার এইটের শুরুটা ছিল হতাশায় মোড়ানো। ফলে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচটি হয়ে ওঠে বাঁচা-মরার। এমন কঠিন ম্যাচে বল হাতে খেই হারান মুস্তাফিজরা। দেদারসে রান বিলিয়ে ভারতকে তুলে দেন রানের পাহাড়ে। যা টপকে জয় তো দূরে কাছাকাছিও যেতে পারেনি বাংলাদেশ। ফলাফল, আরেকটি পরাজয়।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সুপার এইটে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে বাংলাদেশকে ৫০ রানে হারিয়ে সেমিফাইনালের পথে এক পা বাড়িয়ে রাখল ভারত। অন্যদিকে এই হারে বিদায়ের ঘণ্টা বাজল বাংলাদেশের।
ভারতের বিপক্ষে মহাগুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে শুরু থেকেই নিজেদের ভুল সিদ্ধান্তের বলি হয় বাংলাদেশ। টস জিতে ব্যাটিং নেবার সুবর্ণ সুযোগ থাকলেও নেননি নাজমুল শান্ত। এরপর একাদশও সাজায় একজন কম বোলার নিয়ে। দলের মূল বোলার তাসকিন আহমেদকে বাইরে রেখেই শুরু হয় ভারত অভিযান।
ফলাফল আগে ব্যাট করতে নেমে ভারত দাঁড় করায় ১৯৬ রানের বিশাল পুঁজি। যা তাড়া করতে নেমে বাংলাদেশ গুঁড়িয়ে যায় ১৪৬ রানে।
রান তাড়ায় যদিও শুরুটা ছিল সাবধানী। দুই ওপেনার লিটন দাস ও তানজিদ তামিম মিলে শুরু করেন দেখেশুনে। কিন্তু দুজন পারলেন না ইনিংস এগিয়ে নিতে। হার্দিক পান্ডিয়ার ওভারে ছক্কা হাঁকিয়েই অক্কা লিটন। পান্ডিয়ার স্লোয়ার ডেলিভারিতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন লিটন (১৩)।
পরের ধাক্কা দেন কুলদিপ যাদব। এক ওভারেই তুলে নেন জোড়া শিকার। কুলদিপের গুগলিতে এলবিডব্লিউ হন তানজিদ। ফেরেন ৩১ বলে ২৯ রান করে।
তাওহিদও পড়েন কুলদিপের ফাঁদে। এরপর উইকেটে আসা সাকিব আল হাসানকেও নিজের শিকার বানান এই ভারতীয় স্পিনার। একের পর এক উইকেট হারানোর মিছিলে শান্ত টিকে ছিলেন। তবে, তার ব্যাটিং জয়ের জন্য যথেষ্ট ছিল না। ৩২ বলে দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৪০ রান করেন বাংলাদেশ অধিনায়ক।
এর আগে অ্যান্টিগায় টস জিতে বোলিং বেছে নেয় বাংলাদেশ। আগে ব্যাট করতে নেমে বরং ভালোই হয় ভারতের। ওপেনিংয়ের রানের খরা কিছুটা হলেও মেটায় ভারত। দুই ওপেনার রোহিত শর্মা ও বিরাট কোহলি মিলে শুরুর জুটিতেই তোলেন ৩৯ রান।
ইনিংসের চতুর্থ ওভারে সাকিব আল হাসান এসে ভাঙেন এই জুটি। যদিও নিজের প্রথম ওভারে খরুচে বোলিং করেন তিনি। দ্বিতীয় ওভারে এসেও তিন বলে দিয়ে ফেলেন ১০ রান। অবশেষে চতুর্থ বলে জাকেরের হাতে রোহিতকে ক্যাচ বানান সাকিব। এক ছক্কা ও তিন চারে ১১ বলে ২৩ রান করে থামেন ভারতীয় অধিনায়ক। অন্যদিকে উইকেটটি নিয়ে প্রথম বোলার হিসেবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ৫০ উইকেট পূর্ণ করেন সাকিব।
আরেক ওপেনার বিরাট কোহলিও চড়াও হন পাওয়ার প্লেতে। জমে ওঠা এই ব্যাটারের প্রতিরোধ ভাঙেন তানজিম সাকিব। এক ওভারে এসেই জোড়া উইকেট তুলে নেন তিনি। তানজিমের স্লোয়ার ডেলিভারি ক্রিজ ছেড়ে মারার চেষ্টায় বোল্ড হন কোহলি। ১ চার ও ৩ ছক্কায় ২৮ বলে ৩৭ রানে শেষ হয় তার ইনিংস।
এরপর উইকেটে আসা সূর্যকুমার যাদব এক ছক্কায় শুরু করেন ইনিংস। পরের বলেই তাকে মাঠছাড়া করেন তানজিম।
ওয়ানডাউনে নামা পন্থের ঝড় থামান রিশাদ হোসেন। বাংলাদেশি লেগ স্পিনারের বলে রিভার্স সুইপ খেলতে গিয়ে তানজিমের হাতে ক্যাচ দেন পন্থ। ২৪ বলে ৩৬ রান করে থামে তার প্রতিরোধ।
ঝড়ো শুরু করা ভারতের মাঝপথে রানের গতি কিছুটা কমে। বোলিং দিয়ে বাংলাদেশও নাগালে রাখার চেষ্টা করে। তবে, সেই চেষ্টা বৃথা করে হার্দিক পান্ডিয়া ও শিবাম দুবে মিলে ভারতকে এনে দেন শক্ত পুঁজি। ২৪ বলে ৩৪ রান করেন দুবে। শেষ পর্যন্ত উইকেটে থাকা পান্ডিয়া করেন ২৭ বলে অপরাজিত ৫০ রান।
বাংলাদেশের হয়ে বল হাতে ৩২ রান দিয়ে দুটি উইকেট নেন তানজিম সাকিব। ৪৩ রান খরচায় রিশাদের শিকারও দুটি। সাকিব আল হাসান নেন একটি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ভারত: ২০ ওভারে ১৯৬/৫ (রোহিত ২৩, ভিরাট ৩৭, পান্ত ৩৬, সুরিয়াকুমার ৬, দুবে ৩৪, পান্ডিয়া ৫০*, আকসার ৩*; মেহেদি ৪-০-২৮-০, সাকিব ৩-০-৩৭-১, তানজিম ৪-০-৩২-২, মুস্তাফিজ ৪-০-৪৮-০, রিশাদ ৩-০-৪৩-২, মাহমুদউল্লাহ ২-০-৮-০)।
বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১৪৬/৮ (লিটন ১৩, তানজিদ ২৯, শান্ত ৪০, হৃদয় ৪, সাকিব ১১, মাহমুদউল্লাহ ১৩, জাকের ১, রিশাদ ২৪, মেহেদি ৫*, তানজিম ১*; আর্শদিপ ৪-০-৩০-২, বুমরাহ ৪-০-১৩-২, আকসার ২-০-২৬-০, পান্ডিয়া ৩-০-৩২-১, জাদেজা ৩-০-২৪-০, কুলদিপ ৪-০-১৯-৩)।
ফল: ভারত ৫০ রানে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: হার্দিক পান্ডিয়া।