ভারত মানেই এত কাছে তবু কত দূরে!
বাংলাদেশ ভারত ম্যাচ হবে আর সেখানে রহস্য রোমাঞ্চ থাকবে না, তা হয় না। হয় না বলেই অ্যাডিলেড ওভালে ছিল টানটান উত্তেজনা। খেই হারানোর পুরনো স্বভাব আছে বাংলাদেশের। আজও ব্যতিক্রম হয়নি। তাই, শুরুতে লুফে নেওয়া ম্যাচ হাত থেকে আরও একবার ফেলে দিল বাংলাদেশ, সুপার টুয়েলভে চতুর্থ ম্যাচে ভারতের কাছে হার মানল ৫ রানে।
শেষ ওভারে জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ২০ রান। তাসকিন সিঙ্গেল নিলে স্ট্রাইকে আসেন নুরুল হাসান সোহান। ছয়, চার, ডবলে সমীকরণ দাঁড়ায় ১ বলে ৭! অর্শ্বদ্বিপ সিং ১ রানের বেশি নিতে দেননি। ফলাফল ২০১৬ সালে বেঙ্গালুরুর হতাশা অ্যাডিলেডেও দেখল বাংলাদেশ।
অথচ দিনের শুরুটা ছিল বাংলাদেশের। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের চতুর্থ ম্যাচে টস জিতে বোলিংয়ে বাংলাদেশ। অধিনায়ক সাকিব আল হাসান সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তাসকিন আহমেদ বোঝালেন প্রথম ওভারেই। তৃতীয় ওভারে তাসকিনের বলে রোহিত শর্মার সহজ ক্যাচ ছেড়ে পরের ওভারেই পুষিয়ে দিলেন হাসান মাহমুদ। পুরো আসরে রানখরায় ভোগা লোকেশ রাহুল এদিন রানে ফিরলেন। ৩২ বলে ৫০ করার পর শিকার হন সাকিবের।
পুরো আসরে ছন্দে থাকা বিরাট কোহলি অ্যাডিলেডেও ছুটিয়েছেন রানের ফোয়ারা। ৪৪ বলে ৬৪ রানে অপরাজিত থাকেন কোহলি। ভয়ংকর হয়ে উঠার আভাস দেওয়া সূর্যকুমার যাদবকে ফিরিয়ে সাকিব ভাগ বসান টি-টোয়েন্টির সর্বোচ্চ উইকেট শিকারির রেকর্ডে। শরীফুল ইসলাম নিশ্চয়ই ভুলে যেতে চাইবেন দিনটি। ৪ ওভারে ৫৭ রান দিয়ে উইকেটশূন্য! ৩ উইকেট পেলেও হাসান মাহমুদ রান খরচ করেছেন ৪৭। সঙ্গে আছে ক্যাচ মিস। স্কোরবোর্ডে ভারত জমা করে ১৮৪ রান।
অ্যাডিলেডের এই উইকেটে ১৭০ হলেই যথেষ্ট, বিশেষজ্ঞরা বলেছিলেন এমনটিই। তবে ব্যাট হাতে লিটন দাস বুঝিয়ে দিলেন, ওসবের তোয়াক্কা করি না। আজ লড়ে যাব। সপ্তম ওভারে অনুমিত বৃষ্টির বাগড়ায় খেলা বন্ধ, তার আগে লিটন ঝড়ে চাপে পড়ে যায় ভারত। ৭ ওভার শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৬৬, লিটনের ৫৬! ২১ বলে ছুঁয়েছেন অর্ধশতক। এরপর বৃষ্টি থামে। লক্ষ্যও পাল্টে যায়। ১৬ ওভারে ১৫১ রানের লক্ষ্য বেঁধে দেওয়া হয় বাংলাদেশকে।
৯ ওভারে ৮৫ রান, ক্রিজে লিটন। আশায় বুক বাঁধে গোটা দেশ। রান আউটের দুর্ভাগ্যে শেষ হয় লিটনের ২৭ বলে ৬০ রানের অসাধারণ ইনিংসটি। এরপর আসা যাওয়ার মিছিল! আগের দিন জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৭১ করা নাজমুল হোসেন শান্ত হতাশ করলেন আজ! ২৫ বলে ২১ রানের মন্থর ইনিংসটি কোনোভাবেই এড়াতে পারবে না দায়।
শেষবেলায় চেষ্টার কমতি রাখেননি সোহান-তাসকিন। শেষ ওভারে যখন ২০ রানের পাহাড়, তখনও নির্ভার ছিলেন তারা। কিন্তু যা হওয়ার হয়ে গেছে মাঝপথে। চেষ্টা তাই আলোর মুখ দেখেনি। আরও একটি ভারত ম্যাচ, আরও একটি ব্লকবাস্টার শুরু আর উপসংহারে হতাশা! ভারত মানেই এত কাছে তবু কত দূরে!
সংক্ষিপ্ত স্কোর
ভারত : ২০ ওভারে ১৮৪/৬ (রোহিত ২, রাহুল ৫০, যাদব ৩০, পান্ডিয়া ৫, কোহলি ৬৪*, কার্তিক ৭, অশ্বিন ১৩*: তাসকিন ৪-০-১৫-০, সাকিব ৪-০-৩৩-২, মুস্তাফিজ ৪-০-৩১-০, হাসান ৪-০-৪৭-৩, শরিফুল ৪-০-৫৭-০)।
বৃষ্টি আইনে ১৬ ওভারে বাংলাদেশের লক্ষ্য ১৫১ রান।
বাংলাদেশ: ১৬ ওভারে ১৪৫/৬ (লিটন ৬০, শান্ত ২১, সাকিব ১৩, আফিফ ৩, ইয়াসির ১, সৈকত ৬, সোহান ২৫*, তাসকিন ১২* ; আর্শদিপ ৪-০-৩৮-২, অশ্বিন ২-০-১৯-০, হার্দিক ৩-০-২৮-২, ভুবনেশ্বর ৩-০-২৭-০, শামি ৩-০-২৫-১, অক্ষর ১-০-৬-০)।
ফল: বৃষ্টি আইনে ভারত ৫ রানে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: বিরাট কোহলি।