ক্রিকেটারদের ত্যাগ দেখা যায় না খালি চোখে
ঈদুল ফিতর। দীর্ঘ একমাসের সিয়াম সাধনার পর আসে মুসলিমদের অন্যতম বড় এই উৎসব। মুসলিম উম্মাহর দুটি বড় উৎসবের একটি ঈদুল ফিতর। ঈদের আনন্দ পরিবারের সঙ্গে ভাগাভাগি করতে সবাই অপেক্ষায় থাকে দিনটির। দিনটি আসে অনাবিল খুশির ফোয়ারা নিয়ে।
বাংলাদেশে ধর্মীয় উৎসব ছাড়া আরও একটি জিনিস মানুষের মধ্যে উৎসবের আবহ নিয়ে আসে। সেটি বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের খেলা। সাকিব আল হাসান-তামিম ইকবালদের মাঠে দেখার সুখ মাপা যায় না অন্য কিছুতে। আমাদের আনন্দ দিতে তারাও ত্যাগ করেন। তা হয়তো সবসময় বুঝতে পারি না আমরা।
ঈদের খুশিতে মাতছে গোটা দেশ। ছুটিতে পরিবার প্রিয়জনকে সবাই যখন সময় দেবে, ক্রিকেটারদের তখন গোছাতে হবে ব্যাকপ্যাক। বাংলাদেশের পুরুষ ও নারী জাতীয় দল উভয়েরই ব্যস্ত শিডিউল ঈদের পরপরই। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলতে ২৫ এপ্রিল দেশ ছাড়বে বাংলাদেশ নারী দল।
মে মাসে ইংল্যান্ডের মাটিতে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ খেলবে বাংলাদেশের ছেলেরা। এর আগে সিলেটে তিন দিনের অনুশীলন ক্যাম্প করবে চন্ডিকা হাথুরুসিংহের শিষ্যরা। সম্ভাব্য তারিখ ২৫ থেকে ২৭ এপ্রিল। অর্থাৎ, ঈদের পরপরই ঘর ছাড়তে হবে পুরুষ ও নারী দুই দলকেই।
চলছে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ। শেষ হয়েছে প্রথম পর্ব। দ্বিতীয় পর্ব মাঠে গড়াবে ১ মে। তবে এর আগেই সুপার লিগে উত্তীর্ণ হওয়া দলের খেলোয়াড়দের ফিরতে হবে অনুশীলন ক্যাম্পে। তৈরি করতে হবে নিজেদের।
বাংলাদেশের মানুষের ভালো থাকার অন্যতম অনুষঙ্গ ক্রিকেট। দল ভালো খেললে দেশ হাসে, খারাপ খেললে সবার মুখ ভার। ক্রিকেটারদের গালাগাল দিতে, সমালোচনা করতে দুইবার ভাবে না সমর্থকরা। কিন্তু কখনও ভেবেছি কি, তারা কতটা ত্যাগ করছে দেশের মানুষের মুখে এক চিলতে হাসি ফোটাতে! মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা একবার বলেছিলেন, ‘ক্রিকেট আর মুক্তিযুদ্ধ গুলিয়ে ফেলবেন না। আসল দেশপ্রেমিক বীর মুক্তিযোদ্ধারা।’
ক্রিকেটাররা যার যার জায়গা থেকে একেকজন ফাইটার। তারা লড়াই করে বাইশ গজে। সেই লড়াইয়ের ময়দানে টিকে থাকতে হাসিমুখে অনেক কিছুই ত্যাগ করে, যা খালি চোখে দেখা যায় না। তাদের কাছে আমাদের প্রত্যাশা আকাশচুম্বী। যেখানে চাওয়া যত, আশাহত হওয়ার সম্ভাবনা তত প্রবল। তারকাদের উপর প্রত্যাশার চাপটা সহনীয় পর্যায়ে রাখলে হয়তো তারা খেলতে পারবে নির্ভার হয়ে। আমাদের আশাহত হতে হবে না।
২০২৩ সাল এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের ক্রিকেটকে দু’হাত ভরে দিয়েছে। এটি ধরে রাখতে হবে। তার জন্য খেলোয়াড়দের যেমন আরও পেশাদার হয়ে উঠতে হবে, তেমনি ভক্তদেরও হতে হবে নমনীয়। চন্ডিকা হাথুরুসিংহে দ্বিতীয় দফায় কোচ হয়ে আসার পর ক্রিকেটারদের মানসিক অবস্থার উন্নতি দৃশ্যমান। এবার ভক্তদের পালা নিজেদের গড়ে তোলার।
সব বিভেদ ভুলে এগিয়ে যাওয়ার বার্তা আনে ঈদ। এই ঈদ হোক সমর্থক ও ক্রিকেটারদের ভালোবাসার সেতুবন্ধন জোরদারের ঈদ। পাশে থাকার ঈদ। তাতে তারা এগিয়ে যাবে অনেকদূর। সঙ্গে এগোবো আমরাও। বিশ্বকাপের বছরে স্বপ্ন ছোঁয়ার যাত্রাটা একসঙ্গেই হোক।