৩০০ ছাড়িয়ে ছুটছে বাংলাদেশ
চা বিরতি থেকে ফেরার পঞ্চম ওভারেই নিজাদ মাসুদের ডেলিভারিতে এলোমেলো হয়ে যায় নাজমুল হোসেন শান্তর উইকেট। আউট ভেবে শান্ত নিজেও ফিরছিলেন সাজঘরে। কিন্তু তখনই আম্পায়ার টিজ ব্রাউন জানান দেন—বলটি ছিল নো বল। ফের ক্রিজে শান্ত, হাসিমুখে চালাতে থাকলেন ব্যাট।
জীবন পাওয়া শান্ত হয়ত তখন মনের কল্পনায় আঁকছিলেন প্রথমবার ডাবল সেঞ্চুরির চিত্র। কিন্তু সেই চিত্র কল্পনাই হয়ে থাকল। শান্ত পারলেন না বাস্তবে রূপ দিতে। জীবন পাওয়ার তিন ওভার পরেই শান্তর প্রতিরোধ ভাঙে আফগানিস্তান। আমির হামজার বলে মিড অফে ক্যাচ লুফে নিয়ে শান্তকে মাঠছাড়া করেন নাসির জামান।
১৭৫ বল খেলে ১৪৬ রানে শান্তর প্রতিরোধ। এ সময় বাংলাদেশি তারকা হাঁকান ২৩টি বাউন্ডারি ও দুটি ছক্কা। তবে শান্ত মাঠ ছাড়ার আগেই বাংলাদেশের রান ৩০০ ছাড়িয়েছে।
এর আগে নাজমুল হোসেন শান্ত ও মাহমুদুল হাসান জয়ের দৃঢ়তায় প্রথম সেশনটা দারুণ কেটেছে বাংলাদেশের। দ্বিতীয় সেশনটাও আগাচ্ছিল সেই পথে। দুজন মিলে শক্ত জুটিতে এগিয়ে নিচ্ছিলেন বাংলাদেশকে। কিন্তু মাঝে জয়কে হারিয়ে সেই আশা ভেস্তে যায়। তবুও সেশনটা মন্দ কাটেনি বাংলাদেশের। সেঞ্চুরিয়ান শান্তর ব্যাটে চড়ে দ্বিতীয় সেশন পার করেছিল বাংলাদেশ।
আফগানিস্তানের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টের প্রথম দিনের শুরুটা ছিল চরম হতাশার। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই জাকির হাসানকে হারিয়ে বড় ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশকে পথ দেখান নাজমুল হোসেন শান্ত ও মাহমুদুল হাসান জয়। এই জুটিতে প্রথম সেশন নিশ্চিন্তে পার করে বাংলাদেশ।
দ্বিতীয় সেশনে এসে সেঞ্চুরির দেখা পেয়ে যান শান্ত। লাঞ্চ বিরতি থেকে ফিরে ১১৮ বলে শান্ত পৌঁছে যান ক্যারিয়ারের তৃতীয় টেস্ট শতকে। যা সাজানো ছিল সাতটি বাউন্ডারি দিয়ে। শান্তর পাশাপাশি দৃঢ়তা দেখানো জয়ও পেয়ে যান অর্ধশতকের দেখা। তিনি স্পর্শ করেন ক্যারিয়ারের তৃতীয় হাফসেঞ্চুরি। দুই টপর্ডারের শক্ত জুটিতে দারুণভাবে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ।
দুই অভিজ্ঞ ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবালকে ছাড়া আফগানিস্তানের বিপক্ষে মাঠে নামা বাংলাদেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ ছিল বটে। সেই চ্যালেঞ্জ উতরাতে টস হেরে ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ। শুরুতে জাকির হাসানের উইকেট হারালেও, পরবর্তীতে নাজমুল শান্ত-মাহমুদুল জয়দের ব্যাটে স্বস্তি নিয়ে মধ্যাহ্ন বিরতিতে যায় বাংলাদেশ।
আজ বুধবার (১৪ জুন) মিরপুর শেরেবাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে দুই ওপেনার জাকির হাসান ও মাহমুদুল হাসান জয় প্রথম ওভারে কিছুটা দেখেশুনে খেললেও দ্বিতীয় ওভারেই নিজাত মাসুদের প্রথম বলেই উইকেটের পেছনে জাজাইয়ের হাতে ক্যাচ তুলে দেন জাকির । দুই বল থেকে ১ রান করে সাজঘরে ফেরেন এই বাঁহাতি ব্যাটার। তার বিদায়ের পর দেখেশুনে প্রায় দেড় সেশন খেলেছেন দুই ব্যাটার জয়-শান্ত। এরপর বিদায় নেন জয়। ৪৫তম ওভারে ৭৬ রানে ভাঙে তাঁর প্রতিরোধ। জয়ের বিদায়ে ভাঙে ২১২ রানের জুটি। এরপর শান্তর সঙ্গে জুটি বাধেন মুমিনুল হক। তৃতীয় সেশনে এসে ভাঙে ওই জুটি।
আফগানদের টেস্ট ক্রিকেটে প্রথম জয় এসেছিল বাংলাদেশের বিপক্ষে ২০১৯ সালে। চার বছর আগে চট্টগ্রামে বাংলাদেশকে উড়িয়ে বিজয়ের কেতন উড়ায় রশিদ খানরা। সেই সুখস্মৃতি এখনও তরতাজা আফগানদের হৃদয়ে। সেই জয় থেকে আত্মবিশ্বাস পাচ্ছেন অতিথিরা। দুই দলের সর্বশেষ মুখোমুখি হয়েছিল চার বছর আগে। লম্বা সময় পর লাল বলের ক্রিকেটে খেলতে নেমে স্বাগতিকরা অতিথিদের একটু চমকেই দিয়েছে। তবে ঘরের মাঠে বাংলাদেশও যে হাল ছাড়তে নারাজ সেটা দেখাচ্ছেন শান্তরা।