প্রথম দিন শেষে স্বস্তির হাসি বাংলাদেশের
দিনের শুরুরটা ছিল হতাশার। সেই হতাশার কালো মেঘ সরিয়ে আলো হয়ে ধরা দেন নাজমুল হোসেন শান্ত ও মাহমুদুল হাসান জয়। দুজনের শক্ত জুটিতে প্রায় দেড় সেশন জুড়ে চলে বাংলাদেশের দাপট। স্বাগতিকরা স্বপ্ন দেখে বড় স্কোরের। কিন্তু দুজনের বিদায়ের পর ফিকে হতে যাচ্ছিল সেই স্বপ্ন। শেষ পর্যন্ত তা হতে দেননি মেহেদী হাসান মিরাজ ও মুশফিকুর রহিম। দুজন মিলে দিনের শেষ ভাগে লড়াই জমিয়ে তোলেন। তাতে প্রথম দিন শেষে স্বস্তিতে বাংলাদেশ।
আফগানিস্তানের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টের প্রথম দিন শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৭৯ ওভারে পাঁচ উইকেটে ৩৬২ রান। দিন শেষে উইকেটে ৪১ রানে অপরাজিত ছিলেন মুশফিকুর রহিম। তাঁর সঙ্গে ৪৩ রানে ব্যাট করছিলেন মিরাজ।
আজ বুধবার (১৪ জুন) একমাত্র টেস্টে মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান। মিরপুর শেরেবাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ঘাসের উইকেটে টস জিতে ফিল্ডিং বেছে নেয় আফগানিস্তান। আগে বোলিং করার সুযোগটা শুরুতেই কাজে লাগায় অতিথিরা। ইনিংসের শুরুতেই বাংলাদেশ শিবির কাঁপিয়ে দেয় সফরকারীরা
বাংলাদেশের দ্বিতীয় ওভারেই নিজাত মাসুদের প্রথম বলে উইকেটের পেছনে জাজাইয়ের হাতে ক্যাচ তুলে দেন ওপেনার জাকির হাসান । দুই বল থেকে ১ রান করে সাজঘরে ফেরেন এই বাঁহাতি ব্যাটার। তাঁর বিদায়ে শুরুটা মলিন হয় বাংলাদেশের।
তবে সেই হতাশা কাটিয়ে বাংলাদেশকে চমৎকার জুটি উপহার দেন নাজমুল হোসেন শান্ত ও মাহমুদুল হাসান জয়। শুরুর ধাক্কা সামাল দিয়ে দুজন মিলে ব্যাট করেন প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা। প্রথম দেড় সেশনে আফগান বোলাদের পাত্তাই দেননি দুই টপ অর্ডার। দুজনের ব্যাটে ১১৬ রান নিয়ে লাঞ্চ বিরতিতে যায় বাংলাদেশ।
দ্বিতীয় সেশনও চলছিল দুজনের দাপট। এর মধ্যে আমির হামজার অফ স্টাম্পের বাইরের বল ঠেলে দিয়ে ক্যারিয়ারের তৃতীয়বার টেস্ট সেঞ্চুরির দেখা পেয়ে যান শান্ত। ১১৮ বলে তিন অঙ্ক ছুঁয়েই ড্রেসিং রুমের দিকে ছুটে আসেন শান্ত, হেলমেট খুলে ব্যাট উঁচিয়ে উড়ন্ত চুমু এঁকে করেন শতক উদযাপন। সবশেষ ২০২১ সালে টেস্টে সেঞ্চুরি করা শান্ত স্বীকৃত ক্রিকেটে পাঁচ ইনিংস খেলেই পেয়ে গেলেন তৃতীয় সেঞ্চুরি।
শান্তর পর হাফসেঞ্চুরি ছুঁয়ে জয় ভাসেন উল্লাসে। কিন্তু সেই উল্লাস অবশ্য সেঞ্চুরি পর্যন্ত টানতে পারলেন না জয়। আফগানদের পার্ট টাইম বোলার রহমত শাহ ভাঙলেন তাঁর প্রতিরোধ। ৭৬ রান করে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন জয়। ৯ বাউন্ডারিতে ১৩৭ বলে থামে তাঁর ইনিংস।
দ্বিতীয় সেশনে শুধু জয়ের উইকেটই হারায় বাংলাদেশ। এই সেশন শেষে বাংলাদেশের স্কোরবোর্ডে ছিল দুই উইকেটে ২৩৫ রান। বাংলাদেশের ছন্দপতন হয় শেষ সেশনে। এই সেশনের শুরুতেই মুমিনুলকে হারায় বাংলাদেশ। নিজাদ মাসুদের সাদামাটা ডেলিভারিতে কট বিহাইন্ড হয়ে ১৫ রানে বিদায় নেন তিনি।
এর কিছুক্ষণ পর নিজাদ মাসুদের ডেলিভারিতেই এলোমেলো হয়ে যায় শান্তর উইকেট। আউট ভেবে শান্ত নিজেও ফিরছিলেন সাজঘরে। কিন্তু তখনই আম্পায়ার টিজ ব্রাউন জানান দেন—বলটি ছিল নো বল। ফের ক্রিজে ফেরেন শান্ত, হাসিমুখে চালাতে থাকলেন ব্যাট।
জীবন পাওয়া শান্ত হয়ত তখন মনের কল্পনায় আঁকছিলেন প্রথমবার ডাবল সেঞ্চুরির চিত্র। কিন্তু সেই চিত্র কল্পনাই হয়ে থাকল। শান্ত পারলেন না বাস্তবে রূপ দিতে। জীবন পাওয়ার তিন ওভার পরেই শান্তর প্রতিরোধ ভাঙে আফগানিস্তান। আমির হামজার বলে মিড অফে ক্যাচ লুফে নিয়ে শান্তকে মাঠছাড়া করেন নাসির জামান।
১৭৫ বল খেলে ১৪৬ রানে ভাঙে শান্তর প্রতিরোধ। ২৭৩ মিনিট ব্যাট করে বাংলাদেশি তারকা হাঁকান ২৩টি বাউন্ডারি ও দুটি ছক্কা। শান্তকে হারানোর পর দ্রুত অধিনায়ক লিটনকেও হারায় বাংলাদেশ। আলগা শটে ৯ রান করে বিদায় নেন অধিনায়ক। দ্রুত তিন উইকেট হারিয়ে কিছুটা চাপে পড়ে বাংলাদেশ। তবে শেষ দিকে মেহেদী হাসান মিরাজ ও মুশফিকুর রহিম মিলে সামাল দেন সেই চাপ। দুজনের চেষ্টায় আর কোনো উইকেট না হারিয়েই টেস্টের প্রথম দিন শেষ করে লিটন দাসের দল।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ ৭৯ ওভারে ৩৬২/৫ (জয় ৭৬, জাকির ১, শান্ত ১৪৬, মুমিনুল ১৫, লিটন ৯, মুশফিক ৪১*, মিরাজ ৪৩*; ইয়ামিন ৭-১-৩২-০, মাসুদ ১৩-২-৬৭-২, করিম ১০-৩-৩২-০, জাকির ১৬-০-৯৮-১, আমির ২৪-১-৮৫-১, শাহিদি ৩-০-৯-০, রহমত ৬-১-৩০-১)।