আশা জাগিয়েও বড় সংগ্রহ পায়নি বাংলাদেশ
সেই পুরোনো অভ্যাস ফিরে এলো যেন, সেট জুটি ভাঙার পর তাসের ঘরের মতো প্রতিরোধ শেষ। শুরু হয় যায় আসা-যাওয়ার মিছিল। প্রথম দিনের শুরুটা হতাশার। মাঝে বাংলাদেশের দারুণ প্রতিরোধ। দিনের শেষ সেশনটা চমৎকারভাবে সামাল দিচ্ছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ ও মুশফিকুর রহিম। এতে প্রথম দিনটা বাংলাদেশেরই ছিল। কিন্তু, দ্বিতীয় দিনের শুরুটা ভুলে যাওয়ার মতো।
মাত্র ৭ ওভারে ২০ রানে বাকি পাঁচ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংস শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ সবক’টি উইকেট হারিয়ে ৩৮২ রান।
আজ বৃহস্পতিবার (১৫ জুন) মিরপুর শেরেবাংলায় দ্বিতীয় দিন ব্যাট করতে নেমেছে বাংলাদেশ। প্রথমদিনের ৫ উইকেটে ৩৬২ রান নিয়ে দিন শুরু করে বাংলাদেশ। ৪১ রান নিয়ে মুশফিক ও ৪৩ রান নিয়ে দিন শেষ করা মিরাজ দেখেশুনে শুরু করেন দ্বিতীয় দিন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বেশিক্ষণ প্রতিরোধ ধরে রাখতে পারেনি।
দিনের মাত্র চতুর্থ ওভারেটই উইকেট হারায় বাংলাদেশ। ফিফটির খুব কাছে গিয়েও ৪৮ রানে থামে মিরাজের ইনিংস। ভাঙে মুশফিকের সঙ্গে তার ৮৩ রানের জুটি। আমির হামজার ক্যাচে পরিণত করে মিরাজকে থামান ইয়ামিন আমজাদি।
মিরাজ আউট হওয়ার পরের ওভারে সাজঘরের পথ ধরেন মুশফিকও। ৪৭ রান করে নিজাত মাসুদের বলে নাসির জামালের ক্যাচে পরিণত হন তিনি। একই ওভারে তাইজুলকে (০) ফেরান নিজাত। শরিফুল ইসলাম ও তাসকিন আহমেদ, দুজনই শিকার হন নিজাতের।
শেষ পর্যন্ত বড় সংগ্রহের আশা জাগিয়েও সেই পুরোনো অভ্যাসে দ্রুতই উইকেট হারিয়ে ১০ উইকেটে ৩৮২ রানে থামে বাংলাদেশের ইনিংস। আফগানদের পক্ষে ৭৯ রানে ৫ উইকেট নেন নিজাত মাসুদ।
এর আগে গতকাল ম্যাচের শুরুতে বাংলাদেশের দ্বিতীয় ওভারেই নিজাত মাসুদের প্রথম বলে উইকেটের পেছনে জাজাইয়ের হাতে ক্যাচ তুলে দেন ওপেনার জাকির হাসান। দুই বল থেকে ১ রান করে সাজঘরে ফেরেন এই বাঁহাতি ব্যাটার। তাঁর বিদায়ে শুরুটা মলিন হয় বাংলাদেশের।
তবে সেই হতাশা কাটিয়ে বাংলাদেশকে চমৎকার জুটি উপহার দেন নাজমুল হোসেন শান্ত ও মাহমুদুল হাসান জয়। শুরুর ধাক্কা সামাল দিয়ে দুজন মিলে ব্যাট করেন প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা। প্রথম দেড় সেশনে আফগান বোলাদের পাত্তাই দেননি দুই টপ অর্ডার। দুজনের ব্যাটে ১১৬ রান নিয়ে লাঞ্চ বিরতিতে যায় বাংলাদেশ।
দ্বিতীয় সেশনও চলছিল দুজনের দাপট। এর মধ্যে আমির হামজার অফ স্টাম্পের বাইরের বল ঠেলে দিয়ে ক্যারিয়ারের তৃতীয়বার টেস্ট সেঞ্চুরির দেখা পেয়ে যান শান্ত। ১১৮ বলে তিন অঙ্ক ছুঁয়েই ড্রেসিং রুমের দিকে ছুটে আসেন শান্ত, হেলমেট খুলে ব্যাট উঁচিয়ে উড়ন্ত চুমু এঁকে করেন শতক উদযাপন। সবশেষ ২০২১ সালে টেস্টে সেঞ্চুরি করা শান্ত স্বীকৃত ক্রিকেটে পাঁচ ইনিংস খেলেই পেয়ে গেলেন তৃতীয় সেঞ্চুরি।
শান্তর পর হাফসেঞ্চুরি ছুঁয়ে জয় ভাসেন উল্লাসে। কিন্তু সেই উল্লাস অবশ্য সেঞ্চুরি পর্যন্ত টানতে পারলেন না জয়। আফগানদের পার্ট টাইম বোলার রহমত শাহ ভাঙলেন তাঁর প্রতিরোধ। ৭৬ রান করে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন জয়। ৯ বাউন্ডারিতে ১৩৭ বলে থামে তাঁর ইনিংস।দ্বিতীয় সেশনে শুধু জয়ের উইকেটই হারায় বাংলাদেশ। এই সেশন শেষে বাংলাদেশের স্কোরবোর্ডে ছিল দুই উইকেটে ২৩৫ রান। বাংলাদেশের ছন্দপতন হয় শেষ সেশনে। এই সেশনের শুরুতেই মুমিনুলকে হারায় বাংলাদেশ। নিজাত মাসুদের সাদামাটা ডেলিভারিতে কট বিহাইন্ড হয়ে ১৫ রানে বিদায় নেন তিনি।
এর কিছুক্ষণ পর নিজাদ মাসুদের ডেলিভারিতেই এলোমেলো হয়ে যায় শান্তর উইকেট। আউট ভেবে শান্ত নিজেও ফিরছিলেন সাজঘরে। কিন্তু তখনই আম্পায়ার টিজ ব্রাউন জানান দেন—বলটি ছিল নো বল। ফের ক্রিজে ফেরেন শান্ত, হাসিমুখে চালাতে থাকলেন ব্যাট।
তবে এর কিছুক্ষণ পরই ১৭৫ বল খেলে ১৪৬ রানে ভাঙে শান্তর প্রতিরোধ। ২৭৩ মিনিট ব্যাট করে বাংলাদেশি তারকা হাঁকান ২৩টি বাউন্ডারি ও দুটি ছক্কা। শান্তকে হারানোর পর দ্রুত অধিনায়ক লিটনকেও হারায় বাংলাদেশ। আলগা শটে ৯ রান করে বিদায় নেন অধিনায়ক। দ্রুত তিন উইকেট হারিয়ে কিছুটা চাপে পড়ে বাংলাদেশ। তবে শেষ দিকে মেহেদী হাসান মিরাজ ও মুশফিকুর রহিম মিলে সামাল দেন সেই চাপ। দুজনের চেষ্টায় আর কোনো উইকেট না হারিয়েই টেস্টের প্রথম দিন শেষ করে লিটন দাসের দল।
সংক্ষিপ্ত স্কোর : বাংলাদেশ ৮৬ ওভারে ৩৮২/১০ (জয় ৭৬, জাকির ১, শান্ত ১৪৬, মুমিনুল ১৫, লিটন ৯, মুশফিক ৪৭, মিরাজ ৪৮, তাসকিন ২, তাইজুল ০, শরিফুল ৬, ইবাদত ০*; ইয়ামিন ১০-১-৩৯-২, মাসুদ ১৬-২-৭৯-৫, করিম ১১-৩-৩৩-০, জহির ১৬-০-৯৮-১, আমির ২৪-১-৮৫-১, শাহিদি ৩-০-৯-০, রহমত ৬-১-৩০-১)।