৩৭০ রানের লিড নিয়ে বাংলাদেশের দুর্দান্ত দিন
টেস্টের প্রথম দিন রাঙিয়েছেন ব্যাটাররা। দ্বিতীয় দিন দায়িত্বটা নিলেন বোলাররা। ইবাদত হোসেন-শরিফুলদের দাপুটে বোলিংয়ের দেড়শর নিচে থেমে যায় আফগানিস্তান। এরপর দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে একটির বেশি উইকেট হারায়নি বাংলাদেশ। উল্টো ৩৭০ রানের বিশাল লিড পাওয়ার স্বস্তি নিয়ে ঢাকা টেস্টের দ্বিতীয় দিন শেষ করেছে বাংলাদেশ।
আজ বৃহস্পতিবার (১৫ জুন) প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে ৩৯ ওভারে স্কোরবোর্ডে রান ১৪৬ তুলেছে আফগানিস্তান। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ লিড পায় ২৩৬ রানের। বাংলাদেশ চাইলে ফলোঅনে আবার ব্যাটিংয়ে পাঠাতে পারত আফগানিস্তানকে। তবে সেটা করেনি স্বাগতিকরা। অতিথিদের দ্বিতীয়বার ব্যাটিংয়ে না পাঠিয়ে নিজেরাই দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নামে বাংলাদেশ।
দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে দিন শেষে স্কোরবোর্ডে এক উইকেটে ১৩৪ রান তুলেছে বাংলাদেশ। এতে লিড বেড়ে বাংলাদেশের রান দাঁড়ায় ৩৭০। দিন শেষে উইকেটে ছিলেন প্রথম ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান নাজমুল হোসেন শান্ত (৫৪)। তাঁর সঙ্গে ব্যাট করছিলেন ওপেনার জাকির হাসান (৫৪)। দ্বিতীয় ইনিংসে শুধুমাত্র মাহমুদুল হাসান জয়ের উইকেটটি হারিয়েছে বাংলাদেশ। শুরুর ধাক্কা সামাল দিয়ে দিনের বাকি অংশ উইকেটে নিশ্চিন্তে কাটিয়ে দেন শান্ত-জাকির।
যদিও দিনের শুরুতে ব্যাট হাতে আজকের শুরুটা ভুলে যেতে চাইবে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় দিনের শুরুতেই তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপ। যেখানে সবাই অপেক্ষায় ছিল বড় সংগ্রহের, সেখানে আগের দিনের ৩৬২ রানের সঙ্গে মাত্র ২০ রান যোগ করে অলআউট হয় বাংলাদেশ। পেস বিষে একাই ধসিয়ে দেন নিজাত মাসুদ। ৩৮২ রানে আলআউট হয়ে থামে বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস। অভিষেকে মাসুন নেন পাঁচ উইকেট।
তবে বল হাতে নিজেদের ফিরে পায় বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নামা আফগানিস্তানকে থিতু হয়ে দেননি ইবাদতরা। বোলিংয়ের শুরুতেই আঘাত হানেন শরিফুল ইসলাম। আফগান ওপেনার ইব্রাহিম জাদরানকে (৬) উইকেটের পেছনে অধিনায়ক লিটন দাসের ক্যাচ বানিয়ে সাজঘরে ফেরান শরিফুল ইসলাম।
পরের ওভারে ইবাদত হোসেনের বল কাট করেন আবদুল মালিক (১৭)। স্লিপে থাকা জাকির হাসান সামনে ডাইভ দিয়ে লুফে নেন ক্যাচ। বাংলাদেশ পায় দ্বিতীয় উইকেটের দেখা। নবম ওভারে ইবাদতের বলে স্লিপের ফাঁক গলে দুটো বল ছুটে যায়।
তবে, তৃতীয় সাফল্যটাও এনে দেন ইবাদত। তাঁর ডেলিভারিতে ব্যাট বলের মেলবন্ধন ঘটেনি রহমত শাহর। ব্যাটের মাঝখানে লেগে বল উপরে উঠে যায়। সহজ ক্যাচ তালুবন্দি করেন তাসকিন আহমেদ।
লাঞ্চ বিরতিতে যাওয়ার আগে তিন উইকেট হারিয়ে আফগানরা সংগ্রহ করে মাত্র ৩৫ রান। সেখান থেকে দ্বিতীয় সেশনে অতিথিদের আরও চেপে ধরে বাংলাদেশ। লাঞ্চ থেকে ফেরার পরই শরিফুলের আঘাত। তরুণ পেসারের বলে হাশমতউল্লাহ শাহিদিকে দুর্দান্ত ক্যাচ বানিয়ে ফিরিয়ে দেন মেহেদী হাসান মিরাজ। ১৬ বলে ৯ রানে থামে তাঁর প্রতিরোধ।
মাঝে প্রতিরোধ গড়েন আফসার জাজাই ও নাসির জামাল। পঞ্চাশ রানের এই জুটি ভেঙে বাংলাদেশ শিবিরে স্বস্তি ফেরান মিরাজ। বাংলাদেশি অফস্পিনারের অফ স্টাম্পের বাইরের পিচ করে ঢুকা টার্নিং ডেলিভারি আঘাত হানে জামালের প্যাডে। সঙ্গে সঙ্গে আবেদন তোলেন মিরাজ। আউট দিতে ভুল করেননি জামাল। তবে রক্ষা হয়নি জামালের, ৪৩ বলে ৩৫ রান করে ফিরতে হয় সাজঘরে।
থিতু হওয়া আরেক ব্যাটার আফসারকে থামান ইবাদত। তাঁর করা বল মারতে গিয়ে ডিপ স্কয়ার লেগে ক্যাচ দেন আফসার। সেখানে থাকা ফিল্ডার শরিফুল ক্যাচ নিতে ভুল করলেন না। ৪০ বলে ৩৬ রান করে থামেন আফসার। এরপরের দৃশ্যপটেও ইবাদত। এবার ইবাদতের বলে মুমিনুলের দুর্দান্ত ক্যাচে আউট হন আমির হামজা। দুই পেসারের উইকেট উৎসবে যোগ দেন তাইজুলও। তিনি এসে বিদায় করেন ইয়ামিনকে। দ্রুত উইকেত হারানোর চাপ সামলে আর উঠতে পারেনি আফগানরা। মাত্র ১৪৬ রানেই থেমে যায় অতিথিদের প্রথম ইনিংস।
বল হাতে বাংলাদেশের হয়ে ৪৭ রান দিয়ে সর্বোচ্চ চারটি উইকেট নেন ইবাদত। সমান দুটি করে নেন শরিফুল, মিরাজ ও তাইজুল ইসলাম।
এরপর ব্যাট করতে নেমে ভালোভাবেই দিন শেষ করেছে বাংলাদেশ। তাঁর রান তুলে আফগানিস্তানকে বড় লক্ষ্য ছুঁড়ে দেওয়া এখন মূল চাওয়া লিটন দাসদের।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস : ৮৬ ওভারে ৩৮২ (আগের দিন ৩৬২/৫) (জয় ৭৬, জাকির ১, শান্ত ১৪৬, মুমিনুল ১৫, লিটন ৯, মুশফিক ৪৭, মিরাজ ৪৮, তাসকিন ২, তাইজুল ০, শরিফুল ৬, ইবাদত ০*; ইয়ামিন ১০-১-৩৯-২, মাসুদ ১৬-২-৭৯-৫, করিম ১১-৩-৩৩-০, জাহির ১৬-০-৯৮-১, হামজা ২৪-১-৮৫-১, শাহিদি ৩-০-৯-০, রহমত ৬-১-৩০-১)।
আফগানিস্তান প্রথম ইনিংস : ৩৯ ওভারে ১৪৬ (ইব্রাহিম ৬, মালিক ১৭, রহমত ৯, শাহিদি ৯, জামাল ৩৫, জাজাই ৩৬, জানাত ২৩, হামজা ৬, আহমাদজাই ০, মাসুদ ০, জাহির ০*; তাসকিন ৭-০-৪৮-০, শরিফুল ৮-২-২৮-২, ইবাদত ১০-১-৪৭-৪, তাইজুল ৫-০-৭-২, মিরাজ ৯-১-১৫-২)।
বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংস : ২৩ ওভারে ১৩৪/১ (জয় ১৭, শান্ত ৫৪*, জাকির ৫৪* ; ইয়ামিন ৫-০-৩৪-০, মাসুদ ৩.৫-০-৩০-০, হামজা ৬.২-০-২৭-১, করিম ৪-০-২৪-০, জাহির ৪-০-১৯-০)।