মাঠ থেকে বিদায়ের সংস্কৃতি কবে তৈরি হবে দেশের ক্রিকেটে?
বাংলাদেশের ক্রিকেটে 'পঞ্চপাণ্ডব' নামক যে ব্যাপারটি ছিল, তা এখন সোনালি অতীত। পঞ্চপাণ্ডবের অন্যতম একজন, ওপেনার তামিম ইকবাল আজ বৃহস্পতিবার (৬ জুলাই) বিদায় জানালেন সব ধরণের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে।
কোনো কিছুর শুরু থাকা মানে, শেষটা অনিবার্য। কিন্তু, তা যদি হয় কদর্য অতীতের পুনরাবৃত্তি, তাহলে আঙুল ওঠে ওপর মহলে থাকা কর্তাব্যক্তিদের দিকে। তামিমেরও বিদায় নেওয়া হলো না মাঠ থেকে, পঞ্চপাণ্ডবের চারজনের পরিণতি একই!
২০১৯ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপের পর থেকে সাবেক অধিনায়ক মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা মাঠের বাইরে। টি-টোয়েন্টি থেকে অবসর নিলেও একদিনের ক্রিকেট থেকে এখনও অবসর নেননি মাশরাফী। তার ফিটনেস নেই, জাতীয় দলে খেলার সুযোগটাও নেই। ফলাফল কী দাঁড়ালো? মাঠের বাইরে থেকেই অবসর নিতে হচ্ছে দেশের সবচেয়ে সফল অধিনায়ককে।
টেস্ট ও ওয়ানডে ক্রিকেটে মুশফিকুর রহিম এখনও দেশের অন্যতম ভরসা। যথেষ্ট ছন্দে আছেন মুশফিকুর রহিম। মি.ডিপেন্ডেবল মাঠে থাকা মানে ভরসার সলতে জ্বলতে থাকা। কিন্তু, টি-টোয়েন্টিতে তিনি ব্রাত্য। যদিও, ক্রিকেটের ক্ষুদ্র সংস্করণ থেকে অবসর নেননি এখনও। মাঠ হতে অবসর তিনিও নিতে পারেন কিনা তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ রয়েছে যথেষ্টই।
পঞ্চপাণ্ডবের আরেকজন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। মাহমুদুল্লাহকে নিয়ে গত কয়েক মাস ধরে যত জলঘোলা হয়েছে, বাংলাদেশ ক্রিকেটের ইতিহাসে বোধহয় আর কোনো ক্রিকেটারকে নিয়ে আর কখনও এতটা আলোচনা হয়নি। মাহমুদুল্লাহকে যেন অবাঞ্চিতই ঘোষণা করা হয়েছে বাংলাদেশ দল থেকে। সেটি বোর্ড প্রধান, নির্বাচক কিংবা কোচ, সবার ভাষাতে স্পষ্ট। মাহমুদুল্লাহকে নিয়ে দলের এই মুহূর্তে কোনো পরিকল্পনার ছিটেফোঁটাও দেখা যাচ্ছে না।
পঞ্চপাণ্ডব! বাংলার ক্রিকেটের সবচেয়ে ভালো সময়গুলো এসেছিল যাদের হাত ধরে। প্রচণ্ড সমালোচনা, গালাগালের পরেও বারবার তারা ফিরে এসেছিলেন দেশের টানে। নিজেদের খেলা দিয়ে এদেশের মানুষের ক্রিকেট উন্মাদনাকে নিয়ে গেছেন ভিন্ন পর্যায়ে।
অথচ, সাকিব আল হাসান ব্যতীত পাঁচজনের চারজনই খেলাটা মাঠ থেকে ছাড়তে পারেননি। যে সবুজ গালিচায় এঁকেছেন বর্ণিল জীবনের রঙ, সেখান থেকে শেষবার সর্বোচ্চ ভালোবাসাটুকু নিয়ে বিদায় কি তাদের প্রাপ্য নয়?
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) ফুলেফেঁপে একাকার হওয়ার পেছনে এই পাঁচজনের অবদান কতটুকু, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু, সংবাদ সম্মেলন ডেকে তামিমের এমন সকরুণ বিদায়ে পুরোনো প্রশ্নটা ঘুরেফিরে সামনে আসে— মাঠের ক্রিকেট থেকে ক্রিকেটারদের বিদায়ের সংস্কৃতি কবে তৈরি হবে বাংলাদেশে?
সিনিয়রদের এমন হতশ্রী বিদায় দেখে তরুণরা কি নিজেদের অদূর ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবছে না? তারাও তো একদিন সিনিয়র হবেন! তামিমের কান্নাটা মাঠ থেকে বিদায় নেওয়া সুখের কান্না হতে পারত। তা হয়নি, বিসিবির ঘুম ভাঙেনি বলে!