দেশের স্বার্থেই অধিনায়কত্ব ছাড়লেন তামিম
গত কদিন ধরেই দেশের ক্রিকেটে বড় আলোচনার নাম তামিম ইকবাল। তার অধিনায়কত্ব ইস্যুতে কাটাছেড়া কম হয়নি। অবশেষে এলো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। তামিম জানিয়ে দিলেন, বাংলাদেশ ওয়ানডে দলের অধিনায়কত্ব আর করছেন না তিনি। চোটের সঙ্গে লড়াই করা তামিমের মনে হয়েছে, দলের নেতৃত্ব ধরে রাখাটা হবে স্বার্থপরতা। তার কাছে দলটাই সবার আগে। তাই নিজ থেকেই দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ালেন বাঁহাতি এই ওপেনার।
আফগান সিরিজ চলাকালীন হঠাৎ অবসরের সিদ্ধান্ত নিয়ে নেন তামিম। তার ওই সিদ্ধান্তে থমকে গিয়েছিল দেশের ক্রিকেট। মন ভেঙেছিল ক্রিকেট ভক্তদের। শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুরোধে আবারও ক্রিকেটে ফেরার কথা সিদ্ধান্ত নেন তামিম। কিন্তু মন চাইলেও চোট আপাতত মাঠে ফিরতে দিচ্ছে না তাকে। তাই খেলা হচ্ছে না আসন্ন এশিয়া কাপেও। চোট কাটিয়ে ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ড সিরিজ দিয়ে ফেরার প্রত্যাশা তার।
আসন্ন এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপকে সামনে রেখে আজ বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের সঙ্গে আলোচনায় বসেন তামিম। পাপন-তামিম ছাড়াও সেখানে ছিলেন ক্রিকেট অপারেশন্সের চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস। আলোচনা শেষে গণমাধ্যমকে তামিম জানিয়ে দেন, নেতৃত্ব ছাড়ার কথা।
বৃহস্পতিবার (৩ আগস্ট) রাতে বিসিবি সভাপতির বাসায় বৈঠকের মূল বিষয় ছিল তামিমের এশিয়া কাপে খেলা না খেলা ও অধিনায়কত্ব নিয়ে। বৈঠক শেষে তামিম জানান, চোটের সার্বিক অবস্থা।
দীর্ঘদিনের পুরোনো চোটের কারণে নিজের সহজাত খেলাটা খেলতে পারছিলেন না দেশসেরা ওপেনার।
গত সপ্তাহে কোমরের চিকিৎসা নিতে লন্ডন গিয়েছিলেন তামিম। দুটো ইনজেকশন নিয়ে ৩১ জুলাই দেশে ফিরেন। তবে, তামিমকে নিয়ে পুরোপুরি আশার বাণী শোনাননি ডাক্তার। বিশেষ করে, এশিয়া কাপকে সামনে রেখে ৮ আগস্ট থেকে শুরু হবে বাংলাদেশ দলের চূড়ান্ত অনুশীলন ক্যাম্প। যেখানে আগামী দুই সপ্তাহ বিশ্রামে থাকতে হবে তামিমকে।
এমন পরিস্থিতিতে এশিয়া কাপ খেলাটা ঝুঁকিপূর্ণ। তামিম তাই এশিয়া কাপে না খেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সেই সঙ্গে আসন্ন ওয়ানডে বিশ্বকাপেও অধিনায়ক থাকবেন না। অর্থাৎ, সম্পূর্ণভাবে অধিনায়কের দায়িত্ব ছেড়েছেন। বিশ্বকাপে তিনি খেলবেন শুধুই একজন খেলোয়াড় হিসেবে।
দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নেওয়ার বিষয়ে তামিম বলেন, ‘আপনারা জানেন যে, আজকে একট খুবই গুরুত্বপূর্ণ মিটিং ছিল। আমি নিজে থেকে একটা সিদ্ধান্তে এসেছি। উনাদের সঙ্গে কথা বলেছি (নাজমুল হাসান পাপন ও জালাল ইউনুস)। তাদের কারণও জানিয়েছি। আজ থেকে বাংলাদেশ দলের ওয়ানডে অধিনায়কের দায়িত্ব থেকে আমি সরে দাঁড়াচ্ছি। আমার মনে হয় চোট একটা ইস্যু। আমার কাছে মনে হয়েছে দলের কথা চিন্তা করে আমার অধিনায়কত্ব থেকে সরে যাওয়াটাই সেরা সিদ্ধান্ত।
খেলোয়াড় হিসেবে নিজেকে প্রস্তুত করতে চাই সামনের সুযোগগুলো ঠিকভাবে কাজে লাগানোর জন্য। আমি যদি অধিনায়কত্ব ধরে রাখতাম, সেটা খুবই স্বার্থপরতা হতো। কারণ, সবসময় সবার আগে দল। নতুন যে অধিনায়ক হবে, তাকে আমার তরফ থেকে সর্বোচ্চ সহায়তা করব।’
তামিমের অধিনায়কত্ব ছাড়া নিয়ে বিসিবি সভাপতি বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য অবশ্যই একটা ধাক্কা। আমিও জেনেছি ও আসার পর। এই সিদ্ধান্তের জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম না। আমরা এটাই চাই তামিম ভালোভাবে সুস্থ হয়ে ফিরে আসুক। ছন্দে ফিরে নিজের খেলাটা খেলুক। বিশ্বকাপে ভালো করুক।’
ওয়ানডেতে ৩৭ ম্যাচে দেশকে নেতৃত্ব দিয়েছেন তামিম। জিতেছেন ২১ ম্যাচে। হেরেছেন ১৪টি। মাশরাফী বিন মোর্ত্তজার ৫৬.৮১ শতাংশ জয়ের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৫৬.৭৫ শতাংশ ম্যাচ জয়ের রেকর্ড তামিমেরই। তার অধীনে ২০১৯ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ হয়ে উঠেছিল সীমিত ওভারে বিশ্বের অন্যতম সমীহ জাগানিয়া দল।