পাকিস্তানের কাছে হেরে সুপার ফোর শুরু বাংলাদেশের
ব্যাটিং ব্যর্থতার রোগ বাংলাদেশের পুরোনো। এশীয় শ্রেষ্ঠত্বের আসরে যার প্রমাণ মিলল আরেকবার। ব্যাটিং স্বর্গ লাহোরে পাকিস্তানের গতির কাছে পাত্তাই পায়নি বাংলাদেশ। বোলিং দিয়েও পরীক্ষায় ফেলতে পারেনি স্বাগতিকদের। দুই বিভাগের ব্যর্থতায় হার দিয়ে শুরু হলো বাংলাদেশের সুপার ফোর মিশন।
আজ বুধবার (৬ সেপ্টেম্বর) এশিয়া কাপের সুপার ফোরের প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানের কাছে সাত উইকেটে হেরেছে বাংলাদেশ। এই পর্বে আরও দুটি ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ। একটি ভারত, আরেকটি শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। আসরের ফাইনালে যেতে বাকি দুই ম্যাচে জয়ের বিকল্প নেই সাকিব আল হাসানদের।
লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে আগে ব্যাট করে বেশি পুঁজি গড়তে পারেনি বাংলাদেশ। নাসিম-রউফদের বোলিং তোপে থেমে যায় মাত্র ১৯৩ রানে। যা তাড়া করতে নেমে ৬৩ বল হাতে রেখেই জয় তুলে নেয় পাকিস্তান। ৩৯.৩ ওভারে তিন উইকেট হারিয়ে তোলে ১৯৪ রান।
ছোট লক্ষ্য তাড়ায় তাড়াহুড়ো করেনি পাকিস্তান। দুই ওপেনার ফখর জামান ও ইমাম-উল হক মিলে শুরুটা করেন দেখেশুনে। ওপেনিং জুটিতে দুজন করেন ৩৫ রান। দশম ওভারে এই জুটি ভেঙে স্বস্তি এনে দেন শরিফুল ইসলাম। বাংলাদেশি পেসারের বলে লেগ-বিফোরের ফাঁদে পড়েন ফখর। রিভিউ নিয়েও টিকতে পারেননি, ফেরেন ৩১ বলে ২০ রানে।
পরের উইকেট আসে ১৫.৩ ওভারে। সেটি তুলে নেন তাসকিন আহমেদ। বোল্ড করে ফিরিয়ে দেন বাবর আজমকে। ডানহাতি পেসারের নিচু হওয়া বলে ফ্লাইট মিস করে আউট হন পাকিস্তান অধিনায়ক। ২২ বলে ১৭ করে ফেরেন তিনি।
দুই উইকেট হারিয়েও চাপে পড়েনি পাকিস্তান। দলকে টেনে নেন মোহাম্মদ রিজওয়ান ও ইমাম। এই জুটিতে ভর করে জয়ের পথ সহজ করে পাকিস্তান। রিজওয়ানকে নিয়ে ধীরে সুস্থে এগিয়ে চলেন ইমাম। তুলে নেন ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ১৯তম অর্ধশতক। ইমাম-রিজওয়ানের ৮৫ রানের জুটি ভাঙেন মিরাজ। ৩২.৫ ওভারে দলীয় ১৫৯ রানে মিরাজের বলে বোল্ড হন ইমাম। আউট হয়ে সাজঘরে ফেরার আগে খেলেন ৮৪ বলে ৭৮ রানের ইনিংস।
ইমাম আউট হলেও সালমান আগাকে নিয়ে দলকে জিতিয়েই মাঠ ছাড়েন রিজওয়ান। এ ম্যাচে ক্যারিয়ারের ১১তম হাফসেঞ্চুরি করা রিজওয়ান শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকেন ৭৯ বলে ৬৩ রানে।
বাংলাদেশের হয়ে একটি করে উইকেট পান তাসকিন, শরিফুল ও মিরাজ।
এর আগে প্রথমে ব্যাট করে মাত্র ৩৮.৪ ওভার টিকতে পেরেছে বাংলাদেশ। সাকিব ও মুশফিকের হাফসেঞ্চুরিতে কোনোমতে ১৯৩ রান সংগ্রহ করে লাল-সবুজের দল। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৬৪ রান করেন মুশফিকুর রহিম। সাকিবের ব্যাট থেকে আসে ৫৩ রান।
লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে আজ বুধবার (৬ সেপ্টেম্বর) টসে জিতে ব্যাটিং বেছে নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব। কিন্তু, অধিনায়কের সিদ্ধান্তকে মাঠে ফলাতে পারেননি দুই ওপেনার মেহেদী হাসান মিরাজ ও নাঈম শেখ। গত ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান মিরাজ গোল্ডেন ডাকে সাজঘরে ফেরেন নাসিম শাহর বলে। শুরুতেই মিরাজকে হারিয়ে ব্যাকফুটে চলে যায় বাংলাদেশ। সেখান থেকে দলকে উদ্ধার করতে ব্যর্থ নাঈম, লিটন দাস, তাওহিদ হৃদয়রা।
৪৭ রানে চার উইকেট হারানো বাংলাদেশের ইনিংস মেরামত করেন সাকিব-মুশফিক মিলে। পাকিস্তানি বোলারদের সামাল দিয়ে ধীরে সুস্থে এগিয়ে যেতে থাকেন তারা। ১০০ রানের জুটি গড়েন দুজনে। জুটি ভাঙেন ফাহিম আশরাফ। দলীয় ১৪৭ রানে ব্যক্তিগত ৫৩ রানে সাকিবকে ফিরিয়ে দেন। অধিনায়ক ফেরার পর উইকেটে বড় ভরসা মুশফিকও টিকে থাকতে পারেননি বেশিক্ষণ। হারিস রউফের বলে রিজওয়ানের হাতে ক্যাচ দিয়ে ৬৪ রানে ফেরেন মুশফিক। ৮৭ বলে ৫ বাউন্ডারিতে সাজানো ছিল তার ইনিংস।
লোয়ার অর্ডারের ব্যাটাররাও দ্রুত গুটিয়ে যান পাকিস্তানের বোলিং দাপটে। শেষ পর্যন্ত ৩৮.৪ ওভারে ১৯৩ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ।
পাকিস্তানের পক্ষে মাত্র ১৯ রান খরচায় সর্বোচ্চ চার উইকেট নেন রউফ। নাসিম নেন তিন উইকেট। আফ্রিদির শিকার একটি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
বাংলাদেশ : ৩৮.৪ ওভারে ১৯৩/১০। (নাঈম ২০, মিরাজ ০, লিটন ১৬, সাকিব ৫৩, হৃদয় ২, মুশফিক ৬৪, শামীম ১৬, আফিফ ১২, তাসকিন ০, শরীফুল ১, হাসান ১* ; আফ্রিদি ৭-১-৪২-১ , নাসিম ৫.৪-০-৩৪-৩, রউফ ৬-০-১৯-৪, আশরাফ ৭-০-২৭-১, শাদাব ৭-০-৩৫-০, সালমান ১-০-১১-০, ইফতেখার ৫-০-২০-১)।
পাকিস্তান : ৩৯.৩ ওভারে ১৯৪/৩। (ফখর ২০, ইমাম ৭৮, বাবর ১৭, রিজওয়ান ৬৩* , সালমান ১২* ; তাসকিন ৮-১-৩১-১, শরিফুল ৮-১-২৪-১, হাসান ৭-০-৪৬-০, সাকিব ৫.৩-০-৩১-০, মিরাজ ১০-০-৫১-১, শামীম ১-০-৮-০)
ফলাফল : পাকিস্তান সাত উইকেটে জয়ী।