এবার শ্রীলঙ্কার কাছে হারল বাংলাদেশ
এশিয়া কাপে প্রথম দেখায় শ্রীলঙ্কার স্রেফ উড়ে গেছে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় দেখাতেও পাল্টায়নি প্রেক্ষাপট। যথারীতি ব্যাটিংয়ে হতশ্রী চিত্র। তাতে, সুপার ফোরের দ্বিতীয় ম্যাচেও হার দেখলো বাংলাদেশ। ঘরের মাঠে বাংলাদেশকে ২১ রানে হারিয়ে সুপার ফোরে দারুণ শুরু করল শ্রীলঙ্কা।
সুপার ফোরে এখন পর্যন্ত দুটি ম্যাচ খেলে দুটিতেই হেরেছে বাংলাদেশ। তাতে টিকে থাকার আশাও প্রায় ফিকে হয়ে পড়েছে সাকিবদের। এই পর্বের শেষ ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে জিতলেও নানা সমীকরণের জালে পড়তে হবে বাংলাদেশকে।
কলম্বোর আর প্রেমাদাসায় জয়ের জন্য বাংলাদেশের সামনে লক্ষ্য পড়ে ২৫৮ রানের। এই রান তাড়ায় শুরুতে ইতিবাচক বার্তা দেন মেহেদী হাসান মিরাজ ও মোহাম্মদ নাঈম শেখ। রান মন্থর হলেও আশা জাগান এই জুটি। কিন্তু ৫৫ রানে এই জুটি ভেঙে শ্রীলঙ্কাকে স্বস্তি এনে দেন দাসুন শানাকা। শ্রীলঙ্কার অধিনায়কের শর্ট লেংথের বলে পুল করতে গিয়ে টাইমিং গড়বড় করেন মিরাজ। ব্যাটে লেগে ক্যাচ চলে যায় মিড উইকেটে। ২৯ বলে ২৮ রানে শেষ হয় মিরাজের ইনিংস।
এরপর নাঈমও বিদায় নেন। যথারীতি ডটবল খেলতে খেলতে উইকেটে খাবি খাচ্ছিলেন নাঈম। শানাকার বল বুঝতেই পারেননি নাঈম। না বুঝে খাড়া উপরে বল তুলে দিয়ে ফিরে যান সাজঘরে। মাত্র ২১ রান নিতে ৪৬ বল খেলেন এই ওপেনার।
এরপর শুধু হতাশাই দেখেছে বাংলাদেশ। উইকেটে এসে টিকতে পারেননি সাকিব আল হাসান (৩)। বিদায় নেন লিটন দাসও (১৫)। মাত্র ৮৩ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে যায় বাংলাদেশ। সেই চাপ কাটাতে জুটি বাধেন মুশফিক ও তাওহিদ। ১১২ বলে ওই জুটিতে আসে ৭২ রান।
বাংলাদেশ যখন প্রতিরোধ গড়েন তখন আবারও শ্রীলঙ্কার ত্রাতা হয়ে আসেন শানাকা। এবার তুলে নেন মুশফিকের উইকেট। ৪৮ বলে ২৯ রান করে বিদায় নেন মুশফিক।
মুশফিকের বিদায়ের পর দলকে একাই টানেন তাওহিদ। কিন্তু তিনি প্রান্ত আগলে রাখলেও সতীর্থদের ব্যাটিং ব্যর্থতায় জয়হীন থেকেই মাঠ ছাড়তে হয় বাংলাদেশকে। দলের হয়ে সর্বোচ্চ রান আসে তাওহিদের ব্যাট থেকেই। এক ছক্কা আর ৭টি বাউন্ডারিতে ৯৭বলে ৮২ রানের ইনিংস খেলেন তরুণ এই ব্যাটার।
এর আগে ব্যাট করে ৯ উইকেটে ২৫৭ রান তোলে শ্রীলঙ্কা। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৭১ বলে ৯৪ রান করেছেন সামারাবিক্রমা।
কলম্বোতে এদিন টস জিতে ফিল্ডিং নেন অধিনায়ক সাকিব। প্রথম ওভারে ভালোই পরীক্ষা নেন তাসকিন। তবে উইকেট আসে ষষ্ঠ ওভারে। ওই ওভারে হাসানের বলে উইকেটের পেছনে মুশফিককে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন করুনারত্নে। ১৭ বলে তিন চারে ১৮ করে সাজঘরে ফেরেন তিনি।
এরপর দ্বিতীয় জুটিতে কুশল মেন্ডিস ও নিশাঙ্কা মিলে যোগ করেন ৭৪ রান। ২৩.২তম ওভারে এই জুটি ভাঙেন শরিফুল। ওপেনিংয়ে নামা নিশাঙ্কাকে ৪০ রানে এলবির ফাঁদে ফেলেন এই পেসার। এরপর বিদায় করেন মেন্ডিসকেও (৫০)।
তিন উইকেট হারানোর ধাক্কা সামলে ওঠার আগেই আরও দুটি উইকেট হারায় শ্রীলঙ্কা। পাঁচে নামা আসালাঙ্কাকে টিকতে দেননি তাসকিন আহমেদ আর ছয়ে নামা ডি সিলভাকে ফেরান হাসান মাহমুদ।
৫ উইকেটের হারানোর পর আরেকটি দারুণ জুটি পায় শ্রীলঙ্কা। ষষ্ঠ উইকেটে অধিনায়ক দাসুন শানাকা ও সামারাবিক্রমার মিলে উপহার দেন ৬০ রানের জুটি। মাথা ব্যথার কারণ হয়ে ওঠা এই জুটিও ভাঙেন হাসান। ফিরিয়ে দেন লঙ্কান অধিনায়ক শানাকাকে।
ইনিংসের ৪৭তম ওভারে হাসানের ফুললেংথের বলে আগে থেকেই স্কুপ করতে তৈরি থাকা শানাকা হন বোল্ড। ৩২ বলে করেছেন ২৪ রান করে বিদায় তিনি। এরপর শেষ পর্যন্ত স্কোরবোর্ডে ৯৪ রান তুলে মাঠ ছাড়েন সামারাবিক্রমা।
বল হাতে বাংলাদেশের হয়ে ৫৭ রান দিয়ে সর্বোচ্চ তিনটি উইকেট নেন হাসান মাহমুদ। ৬২ রান দিয়ে তাসকিন আহমেদও নেন তিন উইকেট। শরিফুল দুই উইকেট নিতে দিয়েছেন ৪৮রান।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
শ্রীলঙ্কা : ৫০ ওভারে ২৫৭/৯। (নিশাঙ্কা ৪০, করুনারত্নে ১৮, মেন্ডিস ৫০, আসালাঙ্কা ১০, ডি সিলভা ৬, সামারাবিক্রমা ৯৩ , শানাকা ২৪, ভেল্লালাগে ৩, থিকসানা ২, রাজিথা ১* ; তাসকিন ১০-০-৬২-৩, শরিফুল ৮-০-৪৮-২ , হাসান ৯-০-৫৭-৩, সাকিব ১০-০-৪৪-০ , নাসুম ১০-১-৩১-০, মিরাজ ৩-০-১৪-০)।
বাংলাদেশ : ৪৮.১ ওভারে ২১৬/১০ । ( নাঈম ২১, মিরাজ ২৮, লিটন ১৫, সাকিব ৩, মুশফিক ২৯, হৃদয় ৮২, শামীম ৫, নাসুম ১৫ , তাসকিন ১, শরিফুল ৭, হাসান ১০* ; রাজিথা ৭-০-২৯-০, থিকসানা ৯-০-৬৯-৩ , শানাকা ৯-০-২৮-৩ , পাথিরানা ৯.১-১-৫৮-৩, ভেল্লালাগে ১০-১-২৬-১, ডি সিলভা ৪-০-১৮-০)।
ফলাফল : শ্রীলঙ্কা ২১ রানে জয়ী।