কষ্টার্জিত জয়ে এশিয়া কাপের ফাইনালে ভারত
দুনিথ ভেল্লালাগে—এই নামটি সহজে ভুলবে না ভারতীয় ক্রিকেট দল। এশিয়া কাপের সুপার ফোরের ম্যাচে বল হাতে জাদু দেখানোর পর ব্যাট হাতেও নিজের সামর্থ্যের শতভাগ উজাড় করে দিয়েছেন ২০ বছর বয়সী এই লঙ্কান ক্রিকেটার। দলকে জেতাতে না পারলেও তার অলরাউন্ড পারফরম্যান্স বেশ ভুগিয়েছে ভারতকে।
বৃষ্টি আর বৃষ্টি। শ্রীলঙ্কায় এশিয়া কাপ আয়োজনের পর থেকে যেন বৃষ্টি আর থামছে না। এই বৃষ্টির জন্যই ১৬ ঘণ্টার ব্যবধানে দুটি ম্যাচ খেলতে হয়েছে ভারতকে। শারীরিক ক্লান্তির পাশাপাশি মানসিক ধকলটাও কম হয়নি ভারতের। পুরো ম্যাচ জুড়েই ভারতীয় ক্রিকেটারদের চোখে মুখে ছিল ক্লান্তির ভাব। সবকিছু ছাপিয়ে ৪১ রানের জয়ে ফাইনালে ওঠে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্বে প্রমাণ দিল রাহুল দ্রাবিড় শিষ্যরা।
আজ মঙ্গলবার (১২ সেপ্টেম্বর) কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে আগে ব্যাটিং করে লঙ্কান স্পিনারদের ঘূর্ণিতে ৪৯.১ ওভারে মাত্র ২১৩ রানে অলআউট হয় ভারত। জবাবে ৪১.৩ ওভারে সব উইকেট হারিয়ে ১৭২ রানে থামে শ্রীলঙ্কা। এই জয়ে ভারতের ফাইনাল নিশ্চিত হলেও অপেক্ষা বেড়েছে লঙ্কানদের।
২১৪ রানের সহজ সংগ্রহের বিপরীতে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুটা ভালো হয়নি লঙ্কানদের। দলীয় ৭ রানের মাথায় জসপ্রিত বুমরাহর বলে উইকেটের পেছনে কেএল রাহুলের হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন পাথুম নিশানকা। ৭ বলে ৬ রান আসে তার ব্যাট থেকে। এরপর কুশল মেন্ডিসকে নিয়ে জুটি গড়ার চেষ্টা করেন আরেক ওপেনার দিমুথ করুনারত্নে। যদিও তার সেই চেষ্টা সফল হয়নি। দলীয় ২৫ রানের মাথায় মেন্ডিসের বিদায়ে বড় ধাক্কা খায় শ্রীলঙ্কা। এরপর নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকে লঙ্কানরা।
তবে নবাগত দুনিথ ভেল্লালাগেকে নিয়ে দারুণ এক জুটি গড়েন সিলভা। এই দুই ব্যাটারের ৫৮ রানের জুটিতে ভর করে নিশ্চিত হারতে বসা ম্যাচটাই নিজেদের করে নেওয়ার পথে ছিল শ্রীলঙ্কা। তবে ঠিক সময় লাগাম টেনে ধরেন জাদেজা। সিলভাকে ব্যক্তিগত ৪১ রানের ফিরিয়ে ভারতীয় শিবিরে স্বস্তি এনে দেন তিনি। তখনও এক প্রান্ত আগলে রেখে লড়ে যান ভেল্লালাগে। যদিও শেষমেশ দলকে জেতাতে পারেননি।
এর আগে, টস জিতে ব্যাটিং বেছে নেন ভারতীয় অধিনায়ক রোহিত শর্মা। শুভমান গিলকে নিয়ে আগের দিনের মতো ব্যাটিংয়ে নেমে চমৎকার জুটির আভাস দেন তিনি। তবে, ওপেনিং জুটি শতরান ছোঁয়ার আগেই ভেঙে দেয় শ্রীলঙ্কা। ১১.১তম ওভারে দুনিথ ভেল্লালাগের বলে পরাস্থ হন গিল। ভাঙে ৮০ রানের ওপেনিং জুটি। গিল ফিরেন ২৫ বলে ১৯ রান করে। পাকিস্তানের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করা বিরাট কোহলির ব্যাট এদিন হাসেনি। আগের দিন তাঁর চোখে মুখে ছিল ক্লান্তির ভাব। তা দেখা গেল ব্যাটিংয়েও।
উইকেটে এসে টিকতে পেরেছেন ১২ বল। ৩ রান করেই ভেল্লালাগের বলে দাসুন শানাকার হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন সাজঘরে। এরপর বিদায় নেন হাফসেঞ্চুরি ছোঁয়া রোহিত। ৪৮ বলে ৫৩ রান করা রোহিতের প্রতিরোধও ভাঙেন ভেল্লালাগে। ৯১ রানে দুই টপ অর্ডারকে হারিয়ে কিছুটা চাপে পড়ে যায় ভারত। সেখান থেকে দলকে উদ্ধার করার দায়িত্ব নেন লোকেশ রাহুল ও ইষান কিষান। দুজন মিলে গড়েন ৬৩ রানের জুটি। এই জুটিতে যখন প্রতিরোধের আভাস দেয় সফরকারীরা তখনও শ্রীলঙ্কার ত্রাতা হয়ে আসেন ভেল্লালাগে। এবার তিনি ফাঁদে ফেলেন রাহুলকে। নিজের বলে নিজেই ক্যাচ নিয়ে রাহুল নিজের চতুর্থ শিকার বানান লঙ্কান বোলার।
ফেরার আগে রাহুল করেন ৪৪ বলে ৩৯ রান। উইকেটে থিতু হয়ে যাওয়া আরেক ব্যাটার ইষানকে ফাঁদে ফেলেন আসালাঙ্কা। ৪৪ বলে ৩৯ রান করেন ইষান। নিয়মিত ব্যাটারদের হারিয়ে এরপর শুধু হতাশাই দেখে ভারত। ভরসা হয়ে দাঁড়াতে পারেননি হার্দিক পান্ডিয়াও। তাঁকে ফিরিয়ে দিয়ে প্রথমবার পাঁচ উইকেট নেওয়ার উল্লাসে ভাসেন ভেল্লালাগে। ১৪ ম্যাচের ক্যারিয়ারে এটাই তার প্রথম ফাইফার। নিয়মিত উইকেট হারানোর পর শেষ পর্যন্ত ২১৩ রানের বেশি করতে পারেনি ভারত। শেষ দিকে বোলাররা চেষ্টা করলেও বড় লক্ষ্য জমা করতে পারেননি ভারতের স্কোরবোর্ডে।
বল হাতে শ্রীলঙ্কার হয়ে ৪০ রান দিয়ে সর্বোচ্চ ৫ উইকেট নেন ভেল্লালাগে। ১৮ রান দিয়ে আসালাঙ্কা নেন ৪টি উইকেট।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ভারত: ৪৯.১ ওভারে ২১৩ (রোহিত ৫৩, শুভমান ১৯, কোহলি ৩, ইষান ৩৩, রাহুল ৩৯, পান্ডিয়া ৫, জাদেজা ৪, অক্ষর ২৬, বুমরাহ ৫, যাদব ০, সিরাজ ৫; রাজিথা ৪-০-৩০-০, থিকসানা ৯.১-০-৪১-১, শানাকা ৩-০-২৪-০, পাথিরানা ৩-০-২৭-০, ভেল্লালাগে ১০-১-৪০-৫, সিলভা ১০-০-২৮-০, আসালাঙ্কা ৯-১-১৮-৪)।
শ্রীলঙ্কা: ৪১.৩ ওভারে ১৭২ (নিশানকা ৬, করুনারত্নে ২, মেন্ডিস ১৫, সামারাবিক্রমা ১৭, আসালাঙ্কা ২২, সিলভা ৪১, শানাকা ৯, ভেল্লাভাগে ৪১, থিকসানা ২, রাজিথা ১, পাথিরানা ০; বুমরাহ ৭-১-৩০-২, সিরাজ ৫-২-১৭-১, পান্ডিয়া ৫-০-১৪-১, যাদব ৯.৩-০-৪৩-৪, জাদেজা ১০-০-৩৩-২, অক্ষর ৫-০-২৯-০)।
ফল : ৪১ রানে জয়ী ভারত।