এ মেসি যেন বড্ড অচেনা!
লিওনেল মেসিকে ঠিক মানুষ বলে ধরা হয় না। ফুটবলের ক্ষুদে জাদুকরকে আদর করে বহু আগেই এলিয়েনের তকমা দিয়েছেন ভক্তরা। ফুটবল পায়ে যেভাবে মন্ত্রমুগ্ধ করেন, ফুটবলটা যেভাবে তার কথা শোনে; তাকে এলিয়েন না ডেকে উপায় কী? তবে মেসিও যে রক্ত-মাংসের মানুষ, তারও যে ক্লান্তি আসে, সেটিই যেন প্রতিফলিত হচ্ছে গত কিছুদিন ধরে। ১৫ দিনের ব্যবধানে মিস করেছেন তিনটি ম্যাচ। দেশ ও ক্লাবের হয়ে দুটি ম্যাচে তো তাকে বদলিই করতে হয়েছে। সর্বকালের অন্যতম সেরা এই তারকার ডান পেশির পুরোনো চোট হঠাৎ করেই মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে।
আজ বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) মেসির ক্লাব ইন্টার মায়ামি মাঠে নামে টরোন্টোর বিপক্ষে। চোটের কারণে সর্বশেষ দুই ম্যাচে মায়ামির হয়ে খেলেননি মেসি। আজকের ম্যাচেও তার খেলা নিয়ে শঙ্কা ছিল। শঙ্কা কাটিয়ে শুরু থেকেই মাঠে নামেন আর্জেন্টাইন তারকা। কিন্তু, ৩৭ মিনিটের বেশি খেলতে পারেননি। প্রথমার্ধেই মাঠ ছাড়তে হয় বিশ্বকাপজয়ী তারকাকে।
শুরুটা হয়েছিল গত ৮ সেপ্টেম্বর। ২০২৬ ফুটবল বিশ্বকাপের বাছাই পর্বের প্রথম ম্যাচে ইকুয়েডরের বিপক্ষে মাঠে নামে আর্জেন্টিনা। ৭৮ মিনিটে ফ্রিকিকে গোল করে দলের জয়সূচক একমাত্র গোলটি করেন মেসিই। ম্যাচ ছাপিয়ে আলোচনা শুরু হয় মাঠ ছেড়ে মেসির উঠে যাওয়া নিয়ে। সেই ম্যাচের ৮৮ মিনিটে মেসিকে বদলি করেন কোচ লিওনেল স্কালোনি। একজন ফুটবলারকে পরিবর্তন করাটা খেলারই অংশ। কিন্তু, জাতীয় দলের জার্সিতে আন্তর্জাতিক ম্যাচে মেসির বেলায় এমন কিছু ঘটেছিল নয় বছর আগে। সর্বশেষ ২০১৪ বিশ্বকাপে নাইজেরিয়ার বিপক্ষে মেসিকে সাব করিয়েছিলেন তৎকালীন কোচ আলেসান্দ্রো সাবেয়া।
এই বিষয়ে স্কালোনি জানিয়েছিলেন, ‘মেসিই আমাকে বলেছিল তাকে তুলে নিতে। বলেছিল, সে ভীষণ ক্লান্ত। নইলে তাকে আমি তুলে নিতাম না। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে জানা যাবে, তার আসলে কী হয়েছে? যদি সুস্থ থাকে, ভালো অনুভব করে, তাহলে বলিভিয়ার বিপক্ষে তাকে খেলানো হবে।’
বলিভিয়ার বিপক্ষে পরের ম্যাচে দলের সঙ্গে গেলেও খেলেননি মেসি। আর্জেন্টিনা পর্ব শেষ করে মায়ামিতে এসেও খেলতে পারেননি দুই ম্যাচ। তাকে নিয়ে ঝুঁকি নিতে চাননি কোচ টাটা মার্টিনো। তিনি বলেছিলেন, ‘মেসিকে নিয়ে আমাদের কোনো তাড়া নেই। যদি সে ভালো থাকে এবং আত্মবিশ্বাসী থাকে, তাহলে খেলবে। যদি তা না হয়, আমরা তার জন্য আরও কিছুদিন অপেক্ষা করব।’
বিশ্বকাপ জেতার পর ফুরফুরে মেজাজে থাকা ৩৬ বছর বয়সী মেসি যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছেন খেলাটাকে উপভোগ করতে। করছেনও তাড়িয়ে তাড়িয়ে। আমূল বদলে দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ফুটবলকে। তবে তিনি যে মানুষ, ক্লান্তি তাকেও ভর করে, তা জানিয়েছেন নিজেই।
ইকুয়েডরের বিপক্ষে ৮ সেপ্টেম্বরের সেই ম্যাচের পর আর্জেন্টাইন গণমাধ্যম টিওয়াইসি স্পোর্টসে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন মতে, ম্যাচ শেষে নিজের ক্লান্তির কথা জানিয়ে মেসি বলেন, ‘আমি ক্লান্তবোধ করছিলাম। এটি সম্ভবত শেষবার না যে এমন কিছু হয়েছে। হয়তো সামনেও হবে। শারীরিক শ্রম দিতে হয়েছে প্রচুর।’
বয়স কোনো কিছু মানে না। আমাদের মানিয়ে নিতে হয় বয়সের সঙ্গে। কে জানে, মেসিও হয়তো সেটি বুঝে গেছেন! বুঝেছেন বলেই আগাম জানিয়ে রেখেছেন সবাইকে।