১৫ বছর অপেক্ষার পর বাংলাদেশকে হারাল নিউজিল্যান্ড
বাংলাদেশের সামনে সুযোগ ছিল, বিশ্বকাপের আগে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ জিতে আত্নবিশ্বাস নিয়ে বিশ্বকাপ অভিযানে নামা। তবে, সেই সুযোগ হাতছাড়া করেছে চন্ডিকা হাথুরুসিংহের শিষ্যরা। সিরিজ জয় তো দূরে থাক, ১৫ বছর পর নিউজিল্যান্ডের কাছে সিরিজ হারের লজ্জা পেল স্বাগতিকরা।
আজ মঙ্গলবার (২৬ সেপ্টেম্বর) মিরপুর শেরেবাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে তৃতীয় ওয়ানডেতে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে ৩৪.৪ ওভারে সব উইকেট হারিয়ে স্কোরবোর্ডে ১৭১ রানের বেশি তুলতে পারেনি বাংলাদেশ। জবাবে ৩৪.৫ ওভারে তিন উইকেট হারিয়ে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় কিউইরা। সাত উইকেটের হারে ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ প্রস্তুতি শেষ করল বাংলাদেশ।
একটা সময় ছিল নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ঘরের মাঠে সিরিজ মানেই যেন বাংলাদেশের আধিপত্য। তবে, সেই পরিসংখ্যানে এবার বদল আনল নিউজিল্যান্ড। ২০০৮ সালের পর প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ জিতল কিউইরা।
১৭২ রানের সহজ লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে দারুণ শুরু করেন দুই কিউই ওপেনার ফিন অ্যালেন ও উইল ইয়ং। এই দুইজনের ৪৯ রানের ওপেনিং জুটিতে ভালো শুরু করে সফরকারীরা। এরপর দলীয় ৪৯ রানের দুই বলে অ্যালেন ও ফক্সক্রফটকে ফিরিয়ে বাংলাদেশকে লড়াইয়ে ফেরানোর চেষ্টা করেন শরিফুল ইসলাম।
তবে তাতে খুব বেশি লাভ হয়নি। হেনরি নিকোলসকে নিয়ে ফের জুটি গড়েন ইয়ং। এই দুই ব্যাটার বাংলাদেশের বোলারদের কোনো পাত্তা না দিয়েই সাবলীল ব্যাটিং করেন। এই দুইজনের ৮১ রানের জুটিতে ভর করে জয়ের ভিত গড়ে ফেলেন সফরকারীরা। যদিও দলীয় ১৩০ রানের সময় ইয়ংকে বোল্ড করে এই জুটি ভাঙেন নাসুম আহমেদ। ৮০ বলে ৭০ রান করেন ডানহাতি এই ব্যাটার। এরপর নিকোলসকে নিয়ে বাকি কাজটা সারেন টম ব্লান্ডেল।
এর আগে নিয়মিত দুই ওপেনার লিটন দাস ও তামিম ইকবালের না থাকায় এই ম্যাচে তানজিদ তামিম ও জাকির হাসানকে দিয়ে শুরু করায় বাংলাদেশ। তবে, দুজনই ব্যর্থ আস্থার প্রতিদান দিতে। দলীয় ছয় রানের মাথায় কিউই পেসার অ্যাডাম মিলনের ইয়র্কারে বোল্ড হয়ে ফেরেন অভিষিক্ত জাকির। পাঁচ বলে মাত্র এক রান আসে তার ব্যাট থেকে।
জাকিরের বিদায়ের পর আরেক ওপেনার তানজিদ তামিমও বেশিক্ষণ ক্রিজে থিতু হতে পারেননি। দলীয় আট রানের মাথায় ট্রেন্ট বোল্টের ফুল লেন্থ ডেলিভারিতে উইকেটের পেছনে অ্যালেনের হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন তামিম। পাঁচ বলে পাঁচ রান আসে তার ব্যাট থেকে।
এরপর তাওহিদ হৃদয়কে নিয়ে শুরুর চাপ সামলানোর চেষ্টা করেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। যদিও সফল হননি হৃদয়ও। দলীয় ৩৫ রানের সময় মিলনের বলে কাভারের ওপর দিয়ে তুলে মারতে গিয়ে ইয়ংয়ের হাতে ধরা পড়েন তিনি। এ সময়ে তিনি ১৭ বলে ১৮ রান করেন। দ্রুতই তিন উইকেট হারিয়ে চাপে পড়া দলকে টেনে তোলার দায়িত্ব নেন শান্ত-মুশফিক জুটি। এই দুইজনের ৫৩ রানের জুটি বড় স্কোরের স্বপ্ন দেখছিল বাংলাদেশ।
তবে ফের হয় ছন্দপতন। দলীয় ৮৮ রানে অভিজ্ঞ মুশফিক দুর্ভাগ্যজনক এক আউটে বিদায় নেন। তার ব্যাট থেকে আসে ২৫ বলে ১৮ রান। এরপর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে নিয়ে ফের জুটি গড়েন শান্ত। দলীয় ১৩৭ রানের মাথায় মিলনের ফুল লেন্থ ডেলিভারিতে খোঁচা মারতে গিয়ে অ্যালেনের কাছে ধড়া পড়েন মাহমুদউল্লাহ। প্রথম ম্যাচে ৪৯ করলেও এই ম্যাচে ২৭ বলে ২১ রান আসে এই ডানহাতি ব্যাট থেকে। এরপর লেজের সারির ব্যাটারদের নিয়ে একাই লড়াই করে যান নাজমুল শান্ত। তবে দলীয় ১৬৮ রানের মাথায় কোলে ম্যাককনচির বলে রির্ভাস সুইপ খেলতে গিয়ে এলবিডব্লিউ এর ফাঁদে পড়ে আউট হন শান্ত। ৮৪ বলে ৭৬ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলেন তিনি। তার বিদায়ে পর লেজের সারির ব্যাটাররা আর দাঁড়াতে পারেনি। কিউই বোলারদের দাপটে ১৭১ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ : ৩৪.৩ ওভারে ১৭১ (তানজিদ ৫, জাকির ১, শান্ত ৭৬, হৃদয় ১৮, মুশফিক ১৮, মাহমুদউল্লাহ ২১, মেহেদি ১৩, নাসুম ৭, হাসান ১, শরিফুল ১, খালেদ ০; বোল্ট ৬-০-৩৩-২, মিলনে ৬.৩-০-৩৪-৪, শোধি ৬-০-৪০-০, ফারগুসন ৬-০-২৬-১, রবীন্দ্র ৫-১-২০-১, কোলে ৫-০-১৮-২)
নিউজিল্যান্ড: ৩৪.৫ ওভারে ১৭১/৩ (অ্যালেন ২৮, ইয়ং ৭০, ফক্সক্রফট ০, নিকোলস ৫০, ব্লান্ডেল ১৯ ; শরিফুল ৬-১-৩২-২, হাসান ৬-১-২৯-০, নাসুম ১০-০-৫০-১, মেহেদী ৫-০-২৫-০, খালেদ ৪-০-১২-০, মাহমুদউল্লাহ ৩.৫-০-২১-০)