বিশ্বকাপের রোমাঞ্চ শুরু বৃহস্পতিবার
‘ক্রিকেট আমার প্রথম ভালোবাসা। আমি হারতে অপছন্দ করি। যখন আমি মাঠে নামি, অন্যরকম এক অনুভূতি কাজ করে। মাঠে সবসময়ই জয়ের জন্য ক্ষুধার্ত থাকি।’ কথাগুলো ক্রিকেট কিংবদন্তি শচীন টেন্ডুলকারের। তর্কসাপেক্ষে ক্রিকেটের সর্বকালের সেরা ব্যাটারের হাতে একটি বিশ্বকাপ তুলে দিতে ২০১১ সালে ভারত লড়াই করেছিল সম্মিলিতভাবে। ক্রিকেট তো দলগত খেলাই। যেখানে কেউই হারতে পছন্দ করে না। জয়ের জন্য শেষ পর্যন্ত লড়াই করে যায়।
ক্রিকেটকে অনেকে যুদ্ধের সঙ্গেও তুলনা করেন। ক্রিকেটাররা বাইশ গজের যোদ্ধা। সেই শচীনের দেশেই আরও একটি বিশ্বকাপ শুরু হচ্ছে বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) থেকে। গেল আসরে যেখানে শেষ হয়েছিল এবার শুরু সেখানেই। গেলবারের দুই ফাইনালিস্ট ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ডের মধ্যকার ম্যাচ দিয়ে কাল শুরু মাঠের রোমাঞ্চ।
১০ দলের টুর্নামেন্ট। ১০টি স্টেডিয়াম, ৪৫ দিন, ৪৮ ম্যাচের মহারণ। যেখানে কেউ কাউকে এক বিন্দু ছাড় দিতে নারাজ। যেমনটা শচীন জানিয়েছিলেন, তিনি জয়ের জন্য সবসময় ক্ষুধার্ত থাকেন। বিশ্ব আসরে সেরা ১০টি দলও নিজেদের উজাড় করে দিতে প্রস্তুত। ভক্তরা অপেক্ষায় প্রিয় দলের জন্য গলা ফাটাতে। ভারতে যাওয়ার আগে বাংলাদেশের অধিনায়ক সাকিব আল হাসানও বলেছিলেন, ‘আমি তো চাইব সবগুলো ম্যাচ জিততে। জানি জিতব না। এটি ক্রিকেটেরই অবিচ্ছেদ্য অংশ। তবু, স্বপ্ন দেখি।’
প্রতিটি দল সেই স্বপ্নকে সঙ্গী করে সেরা যোদ্ধাদের নিয়েই নামবে সবুজ ময়দানে। ৫০ ওভারে প্রতিপক্ষকে নিঃশেষ করার দৃঢ় প্রত্যয়ে পরিকল্পনা আঁটবেন রণাঙ্গণে এগিয়ে থাকার। ১৯৭৫ সালে শুরু হওয়া বিশ্বকাপের এটি ১৩তম আসর। প্রথম দুই বিশ্বকাপজয়ী দলের অধিনায়ক ওয়েস্ট ইন্ডিজের কিংবদন্তি ক্লাইভ লয়েড বলেছিলেন, ‘যখন আপনার চোখ এগিয়ে যাবে, পা এগিয়ে যাবে, ভক্তরা এগিয়ে যাবে; তখন আপনাকেও এগিয়ে যেতে হবে।’
লয়েড বোধকরি সবচেয়ে মূল্যবান কথাটাই বলেছেন। পরিস্থিতি যেমন হোক, সামনে এগিয়ে যেতে হবে। দেশের জন্য, দলের জন্য, ভক্তদের জন্য। বিশ্বকাপ ঠিক তেমনই এক মঞ্চ। প্রতিটি দল দেশকে প্রতিনিধিত্ব করতে এসেছে। ভক্তদের সাফল্যের আনন্দে ভাসাতে এসেছে। বিশ্বকাপ এমন এক মঞ্চ, যেখানে ছোট দল-বড় দলের ব্যবধানটা অল্প।
এবারের বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হচ্ছে ভারতে। উপমহাদেশের পিচ স্পিনবান্ধব হলেও বিশ্বআসরে পেসাররাও যে হুল ফোঁটাবেন, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। বোলারের দুর্দান্ত ইয়র্কারে কখনো ব্যাটারের স্ট্যাম্প ভাঙছে, কখনো সেই বলই চমৎকার কাভার ড্রাইভে ব্যাটার পার করছেন সীমানা। বাউন্সারে কখনো নিজেকে রক্ষা করছেন, কখনো সেই একই বলে চোখধাঁধানো পুল-হুকে বোলারের অবাক চাহনি। থার্ড ম্যানে কোনো ফিল্ডারের অসাধারণ ক্যাচ কিংবা সুদূর বাউন্ডারি লাইন থেকে করা সরাসরি হিটে রানআউট। ম্যাচের গতিপথ পালটে দিতে কেবল একটি মোমেন্টামই যথেষ্ট। আর প্রয়োজন চাপের মুখে মনোবল ধরে রেখে প্রতিপক্ষের আত্মবিশ্বাসে চিঁড় ধরানো।
বিশ্বকাপের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড। স্বর্ণযুগের ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও সর্বজয়ী অস্ট্রেলিয়া ছাড়া কেউই পারেনি শিরোপা ধরে রাখতে। এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপ ঘরে তুলেছে ছয়টি দল। সর্বোচ্চ পাঁচবার জিতেছে অস্ট্রেলিয়া। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও ভারত দুবার করে এবং ইংল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তান জিতেছে একবার। এখানে শ্রীলঙ্কা ও নিউজিল্যান্ডকে দুর্ভাগা বলতেই হয়। ২০০৭ ও ২০১১ বিশ্বকাপে টানা দুবার শ্রীলঙ্কা এবং ২০১৫ ও ২০১৯ বিশ্বকাপে টানা দুবার রানার্সআপ হয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয় নিউজিল্যান্ডকে।
ভারতে প্রথমবার এককভাবে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে বিশ্বকাপ। আসরের অন্যতম ফেভারিটও তারা। কিন্তু, মাঠের খেলায় ফেভারিট শব্দটা শুধুই তাত্ত্বিক। লয়েডের পর একমাত্র অধিনায়ক হিসেবে দুটি বিশ্বকাপ জিতেছেন অস্ট্রেলিয়ার কিংবদন্তি রিকি পন্টিং। পন্টিংয়ের একটি কথা দিয়েই শেষ করা যাক, যে কথাটাই মূলত সর্বজনীন। ‘আমরা শুধু সেরা দলটাকে মাঠে নামানোর চেষ্টা করি। যাতে আমরা জিততে পারি।’
সবাই প্রস্তুত সেরাদের নিয়ে। এবার পালা মাঠের লড়াইয়ের। যে লড়াইয়ে বুঁদ হতে প্রস্তুত পাড়ার গলি থেকে অভিজাত ক্লাবহাউজসহ গোটা ক্রিকেট দুনিয়া।