নিরস মাঠে শুরু জৌলুসের বিশ্বকাপ
আসি আসি করে এসেই গেল ওয়ানডে বিশ্বকাপ। কত অপেক্ষা, কত কল্পনা, দীর্ঘ চার বছরের ক্ষণগণনা। প্রহর শেষের সোনালি আলোয় সোনালি বিশ্বকাপের ছোঁয়া পেতে শুরু হয়েছে মাঠের লড়াই।
আজ বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) থেকে ভারতের গুজরাটে অবস্থিত আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে ইংল্যান্ড-নিউজিল্যান্ড ম্যাচ দিয়ে পর্দা উঠেছে ১৩তম ওয়ানডে বিশ্বকাপের। গত বিশ্বকাপের দুই ফাইনালিস্ট চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড ও রানার্সআপ নিউজিল্যান্ডের লড়াই দিয়ে শুরু, এরচেয়ে ভালো হতে পারত কী?
অথচ ক্রিকেটের দুই পাওয়ার হাউজের এই ম্যাচে নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামের গ্যালারি দেখলে মনে হবে, বুঝি গুরুত্বহীন এক ম্যাচ! যাদের খেলা দেখতে টিভি পর্দায় চোখ কোটি ক্রিকেটপ্রেমীর, তাদের খেলা চোখের সামনে দেখার সুযোগ যেন নিতেই চায়নি ভারতীয় দর্শকরা। ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় স্টেডিয়াম এটি, দর্শক ধারণক্ষমতা ১ লাখ ৩২ হাজার। কিন্তু, একটু সময় দিয়ে যদি কেউ গুনতে শুরু করে, বলে দিতে পারবে ঠিক কতজন দর্শক আছেন গ্যালারিতে।
ম্যাচের আগে গুজরাট ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের এক সিনিয়র সদস্যের বরাতে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস জানিয়েছিল, প্রায় ৪০ হাজার গুজরাটি নারী ফ্রিতে মাঠে বসে খেলা দেখবেন। গ্যালারিতে অবশ্য এর ছিটেফোঁটাও নেই।
যদি চলতি বছরের আইপিএল ফাইনালে চোখ বুলাই, চেন্নাই-গুজরাটের সেই ফাইনালে মাঠে তিল ধারণের জায়গা ছিল না।
একটা বিশ্বকাপ শুরু হলো। নেই কোনো উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। অথচ আইপিএলে উদ্বোধন কিংবা শেষের আগে কত উত্তেজনায় টইটম্বুর থাকে গোটা ভারত। কে থাকে না জাঁকজমকপূর্ণ সেসব অনুষ্ঠানে। পারলে পুরো ভারতের সব তারকাদের জড়ো করা হয় মঞ্চে। আর বিশ্বকাপের সময় সামান্য আয়োজনটুকু করতেও আইসিসি কিংবা আয়োজক ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই) গা ছাড়া ভাবে প্রশ্ন আসে, বিশ্বকাপ কি দায়সারা টুর্নামেন্ট? নাকি ভারতীয়রা শুধু নিজেদেরই সেরা ভেবে বসে আছে?
বিশ্বকাপ মানে তো পরতে পরতে রোমাঞ্চ। বোলারের দুর্দান্ত ইয়র্কারে কখনো ব্যাটারের স্ট্যাম্প ভাঙছে, কখনো সেই বলই চমৎকার কাভার ড্রাইভে ব্যাটার পার করছেন সীমানা। বাউন্সারে কখনো নিজেকে রক্ষা করছেন, কখনও সেই একই বলে চোখধাঁধানো পুল-হুকে বোলারের অবাক চাহনি। থার্ড ম্যানে কোনো ফিল্ডারের অসাধারণ ক্যাচ কিংবা সুদূর বাউন্ডারি লাইন থেকে করা সরাসরি হিটে রানআউট। ম্যাচের গতিপথ পালটে দিতে কেবল একটি মোমেন্টামই যথেষ্ট। আর প্রয়োজন চাপের মুখে মনোবল ধরে রেখে প্রতিপক্ষের আত্মবিশ্বাসে চিঁড় ধরানো।
এমন সব মুহূর্ত দেখার সুযোগ হাতছাড়া করার কারণটা কী কে জানে! যেখানে ইংল্যান্ড-নিউজিল্যান্ডের এই ম্যাচ নিয়ে উত্তেজনা তুঙ্গস্পর্শী, সেখানে ভারতীয়রা কী বেরসিকতার পরিচয়ই না দিল!