রিজওয়ান বীরত্বে পাকিস্তানের অবিশ্বাস্য জয়
বরাবরই আনপ্রেডিক্টেবল দল পাকিস্তান। তাদের নিয়ে কখনও ভবিষ্যদ্বাণী করা যায় না। নিশ্চিত বিজয়ের পথে থাকলেও ম্যাচ হেরে যাওয়া, কিংবা হারতে বসা ম্যাচ কোনো এক জাদুর ছোঁয়ায় জিতে যাওয়ার রেকর্ড আছে তাদের। এবার তেমনই এক জাদু দেখিয়েছেন পাকিস্তানি ব্যাটার মোহাম্মদ রিজওয়ান। যার জাদুতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অবিশ্বাস্য এক জয় পেল পাকিস্তান।
আজ মঙ্গলবার (১০ অক্টোবর) হায়দরাবাদের রাজীব গান্ধী স্টেডিয়ামে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে ৯ উইকেট হারিয়ে স্কোরবোর্ডে ৩৪৪ রান তোলে শ্রীলঙ্কা। জবাবে চার উইকেট হারিয়ে জয় তুলে নেয় বাবর আজমের দল। চলতি আসরে টানা দ্বিতীয় জয়ের দেখা পেল পাকিস্তান। এই ম্যাচে বিশ্বকাপ ইতিহাসে সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জেতার রেকর্ডও গড়ল তারা।
৩৪৫ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে দলীয় ১৬ রানে প্রথম উইকেট হারায় পাকিস্তান। মধুশঙ্কার বলে কুশল পেরেরার হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ইমাম উল হক। ১২ বলে ১২ রান করেন বাঁ-হাতি এই ব্যাটার। এরপর দলীয় ৩৭ রানে দ্বিতীয় ধাক্কা খায় পাকিস্তান। এবার সাজঘরে ফেরেন অধিনায়ক বাবর আজম। ১৫ বলে ১০ রান করে মধুশঙ্কার দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হন তিনি।
এরপর আবদুল্লাহ শফিককে নিয়ে দারুণ এক জুটি গড়ে দলকে ভালো অবস্থানে নিয়ে যান রিজওয়ান। এ দুজনের ১৮৬ রানের জুটিতে চাপে পড়েন লঙ্কান বোলাররা। তবে, দলীয় ২১৩ রানের মাথায় শফিকের বিদায়ে ফের ধাক্কা খায় পাকিস্তান। ১০৩ বলে ১১৩ রান করে সাজঘরে ফেরেন ডানহাতি এই ব্যাটার। তার বিদায়ের পর অনেকেই ধরে নিয়েছিলেন এই ম্যাচে হয়তো আর জিততে পারবে না পাকিস্তান। সেই ধারণা ভুল প্রমাণ করেছেন রিজওয়ান।
এরপর মিডল অর্ডার ব্যাটারদের নিয়ে রীতিমতো সংগ্রাম করেছেন রিজওয়ান। পায়ের মাংসপেশিতে বারবার টান পেলেও তা উপেক্ষা করেই লড়াই করে যান রিজওয়ান। হাঁকান দারুণ এক শতক। শেষমেশ তার পরিশ্রম বিফলে যায়নি। ছয় উইকেটের দাপুটে এক জয় পেয়েছে পাকিস্তান। ১২১ বলে ১৩১ করে অপরাজিত থাকেন রিজওয়ান।
এর আগে, প্রথম ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার রান পাহাড় টপকানোর চেষ্টা করেও সফল হতে পারেনি লঙ্কানরা। তাই দ্বিতীয় ম্যাচের শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে খেলতে থাকে শ্রীলঙ্কা। যার খেসারত দিতে হয় ইনিংসের শুরুতে। দলীয় পাঁচ রানের মাথায় হাসান আলির শর্ট লেন্থ ডেলিভারিতে পয়েন্টের ওপর দিয়ে মারতে গিয়ে রিজওয়ানের হাতে ধরা পড়েন কুশল পেরেরা। রানের খাতাই খুলতে পারেননি বাঁ-হাতি এই ব্যাটার।
এরপর পাথুম নিশানকাকে নিয়ে বড় জুটি গড়েন আরেক ব্যাটার কুশল মেন্ডিস। এই দুজনের ১০২ রানের জুটিতে ভর করে চাপ সামাল দিয়ে বড় সংগ্রহের ইঙ্গিত দেয় শ্রীলঙ্কা। তবে, দলীয় ১০৭ রানের মাথায় শাবাদ খানের বলে পয়েন্ট দাঁড়িয়ে থাকা আবদুল্লাহ শফিকের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন নিশানকা। ৬১ বলে ৫১ রান করেন এই ওপেনার। তার বিদায়ে কিছুটা চাপে পড়লেও, সেই চাপ দারুণভাবে সামাল দেন মেন্ডিস-সামারাবিক্রমা জুটি। পাকিস্তান বোলারদের পাত্তা না দিয়ে গড়ে তোলেন ১১১ রানের কার্যকরী জুটি।
এরপর দলীয় ২১৮ রানে বিদায় নেন ছন্দে থাকা ব্যাটার কুশল মেন্ডিস। আউটের আগে খেলেন ৭৭ বলে ১২২ রানের ঝলমলে ইনিংস। দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে দলের বড় সংগ্রহ নিশ্চিত করেন সামারাবিক্রমা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
শ্রীলঙ্কা : ৫০ ওভারে ৩৪৪/৯ (নিশানকা ৫১, পেরেরা ০, কুশল ১২২, সামারাবিক্রমা ১০৮, আসালাঙ্কা ১, ধনঞ্জয়া ২৫, শানাকা ১২, দুনিথ ১০, থিকসানা ০, পাথিরানা ১; আফ্রিদি ৯-০-৬৬-১, হাসান ১০-০-৭১-৩, নেওয়াজ ৯-০-৬২-১, হারিস ১০-০-৬৪-২, শাদাব ৮-০-৫৫-১, ইফতেখার ৪-০-২২-০)।
পাকিস্তান : ৪৮.২ ওভারে ৩৪৫/৪ (শফিক ১১৩, ইমাম ১২, বাবর ১০, রিজওয়ান ১৩১*, শাকিল ৩১, ইফতিখার ২২*; থিকসানা ১০-০-৫৯-১, মধুশঙ্কা ৯.২-০-৬০-২, শানাকা ৫-০-২৮-০, পাথিরানা ৯-০-৯০-১, দুনিথ ১০-০-৬২-২, সিলভা ৪-০-৩৬-০, আসালাঙ্কা ১-০-১০-০)
ফলাফল: পাকিস্তান ছয় উইকেটে জয়ী।