মিকিরেন : ডেলিভারি বয় থেকে বিশ্বকাপে ইতিহাসের নায়ক
দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে ওয়ানডে বিশ্বকাপের চলতি আসরে সবচেয়ে বড় অঘটনের জন্ম দিয়েছে নেদারল্যান্ডস। এমন অর্জনে চারিদিক থেকে প্রশংসার জোয়ারে ভাসছে ডাচরা। স্মরণীয় জয়ের পর মাঠের খেলার পাশাপাশি ব্যক্তিজীবন নিয়েও আলোচনার কেন্দ্রে নেদারল্যান্ডসের ক্রিকেটার পল ফন মিকিরেন।
২০২২ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ১৩ রানের জয় পেয়েছিল নেদারল্যান্ডস। এক বছরের ব্যবধানে ফের দক্ষিণ আফ্রিকাকে বড়সড় ধাক্কা দিল নেদারল্যান্ডস। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৩৮ রানের জয় পেয়েছে ইউরোপিয়ান ক্রিকেট দলটি। দক্ষিণ আফ্রিকা এই প্রথম কোনও সহযোগী দেশের বিপক্ষে ওয়ানডে ম্যাচে হারের মুখ দেখলো।
নেদারল্যান্ডসের এমন জয়ের পেছনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল নেদারল্যান্ডসের বোলার পল ফন মিকিরেনের। যিনি ৪০ রান দিয়ে দুটি উইকেট নিয়েছেন, প্রথম শিকার ফর্মে থাকা এইডেন মার্করাম দ্বিতীয় শিকার মার্কো ইয়ানসেন, দুটিই বোল্ড। কিন্তু শুনতে অবাক লাগলেও সত্য, মাত্র তিন বছর আগেও মিকিরেনের জীবনটা অন্যরকম ছিল। জীবনের তাগিদে খাবার ডেলিভারি বয় হিসেবেও কাজ করেছেন তিনি।
করোনাভাইরাস মহামারির কারণে ২০২০ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ পিছিয়ে ২০২২ সালে নেওয়া হয়েছিল। বিশ্বকাপে খেলতে না পারার হতাশায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে একটি টুইট করেন মিকিরেন। যা এখন ভাইরাল।
সেসময় এক্সে লিখেছিলেন, ‘আজকের দিনটায় ক্রিকেট খেলার কথা ছিল। কিন্তু শীতের সময়টা পার করার জন্য আমি এখন উবারে খাবার ডেলিভারি করছি। কীভাবে সময় পাল্টায়! তবু মুখের হাসিটা ধরে রাখুন।’ মিকেরেনের এই টুইটে হাসি ও কান্নার দুরকম ইমোজিই ছিল।
পরের বছর ক্রিকইনফোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মিকিরেন জানান, ‘দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমি হল্যান্ডে থাকি না। যে কারণে আমি ডাচ ক্রিকেট বোর্ডের চুক্তিতে নেই। চুক্তিতে অন্তর্ভুক্ত হতে হলে আপনাকে সেখানে থাকতে হবে। কাউন্টি চুক্তিটাও তখন নেই, তাই ক্রিকেট থেকে আমার কোনো আয় ছিল না। নতুন আয়ের ক্ষেত্র খুঁজছিলাম। চাকরিও করতে চেয়েছি আবার ক্লাব ও দেশ ডাকলে যেন যেতে পারি, সেটাও চেয়েছি। তাই সব মিলিয়ে উবার ও ডেলিভারিতে কাজ করেছি। কারণ, এখানে অ্যাপ খুলেই কাজ শুরু করা যায়। আমি রেস্তোরাঁ বা পানশালায় আটকে থাকতে চাইনি।’
কোভিডের দিনগুলোয় লড়াই শেষে মিকেরেনের মুখে হাসি ফুটতে খুব বেশি সময় লাগেনি। এবারই প্রথম খেলছেন ওয়ানডে বিশ্বকাপে। এমনকি বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে যে রূপকথার জন্ম দিয়েছিল ডাচরা, সেই দলেরও অংশ ছিলেন না। কারণ, ইংল্যান্ডে তখন কাউন্টি মৌসুম চলছিল। পরে বিশ্বকাপের দলে ফেরেন। বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত ৩ ম্যাচ খেলে ৫ উইকেট নিয়েছেন মিকেরেন।