বিশ্বকাপজয়ী তারকাদের এনে দেশের ফুটবলের লাভ কোথায়?
চার মাসের ব্যবধানে বাংলাদেশে এসেছেন দুই বিশ্বকাপজয়ী ফুটবলার এমিলিয়ানো মার্টিনেজ ও রোনালদিনহো গাউচো। গত জুলাইয়ে আর্জেন্টাইন গোলরক্ষক মার্টিনেজের পর গতকাল বুধবার (১৮ অক্টোবর) ঢাকায় আসেন ব্রাজিলের কিংবদন্তি রোনালদিনহো গাউচো। বাংলাদেশের ফুটবলের বড় অংশই ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার সমর্থক। সেসব দেশের ফুটবল তারকাদের কাছ থেকে দেখাটা তাদের কাছে অনেক কিছু। অথচ, এই তারকাদের দেখার সুযোগই পাননি সাধারণ মানুষ।
সাধারণ মানুষের কথাটা না হয় পরেই এলো। আগে আসে ফুটবলারের সঙ্গে ফুটবলের সংযোগ। জুলাইয়ে মার্টিনেজ যখন ঢাকার হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে নামেন, তখন একই লাউঞ্জে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের খেলোয়াড়রা। অথচ মার্টিনেজ কিংবা ফুটবলারদের কেউই জানতেন না সেটি। তবে, সেখানে উপস্থিত ছিলেন অসংখ্য তথাকথিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর। যারা দিব্যি কথা বলেছেন, ছবি তুলছেন মার্টিনেজের সঙ্গে।
বুধবার দুপুর সাড়ে ৩টায় কলকাতা থেকে ঢাকায় পৌঁছেন রোনালদিনহো। এরপর বিশ্রাম নিতে চলে যান হোটেল রেডিসনে। সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে ফের হোটেলে ফেরেন তিনি। পরে সেখানে এক অনুষ্ঠানে যোগ দেন। অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার আগেই সাংবাদিকদের চলে যেতে বলেন আয়োজকরা। একপর্যায়ে আয়োজকদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা হয় গণমাধ্যমকর্মীদের। তৈরি হয় বিব্রতকর এক পরিস্থিতি। এরপরই সাংবাদিকরা এই আয়োজন বয়কটের সিদ্ধান্ত নেন। রোনালদিনহোর অনুষ্ঠানেও ভিড় ছিল কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের।
তবে, আগেরবারের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে এবার জাতীয় দলের অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া, নারী দলের অধিনায়ক সাবিনা খাতুনরা দেখা করতে পেরেছেন রোনালদিনহোর সঙ্গে। মার্টিনেজ ও রোনালদিনহো তাদের কয়েক ঘণ্টার সংক্ষিপ্ত ঢাকা সফরে আয়োজকদের নির্ধারিত অনুষ্ঠানে কথা বলেন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেন।
সবচেয়ে অবাক হওয়ার মতো বিষয় হচ্ছে, তাদের কাউকে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) পক্ষ থেকে আনা হয়নি। দুজনকেই এনেছেন ভারতের ক্রীড়া উদ্যোক্তা শতদ্রু দত্ত। তার উদ্যোগে প্রথমে কলকাতা, পরে সেখান থেকে কয়েক ঘণ্টার জন্য বাংলাদেশে আসেন এই দুই ফুটবলার। দুজনের ক্ষেত্রেই আলোচনার চেয়ে সমালোচনার পাল্লা ভারী ছিল।
এ প্রসঙ্গে বুধবার আইনজীবী ও ফুটবল সংগঠক সাইদুল হক সুমন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এদের আনার দায়িত্ব তো ফুটবল ফেডারেশনের। কাকে কখন আনবে, কীভাবে কী করবে, সেই কাজটা তাদের। কিন্তু, ফুটবল ফেডারেশন কিছুই জানে না। অবস্থা এমন হয়েছে, তাদের কিছু না জানালেই, বরং তারা খুশি হন।’
সবমিলিয়ে প্রশ্ন জাগে, বড়মাপের এসব ফুটবলারদের এত সংক্ষিপ্ত ও কঠোর বিধিবদ্ধ সফর থেকে দেশের ফুটবলের আদৌ লাভটা কী হচ্ছে? এ ব্যাপারে বাংলাদেশ দলের সাবেক ফুটবলার জাহিদ হাসান এমিলি এনটিভিকে বলেন, ‘এরা আসাতে তো কোনো লাভ হচ্ছে না। ইম্প্যাক্ট পড়লে তো সারা বিশ্বের উন্নয়নশীল যেসব ফুটবল দল আছে, তারা এদের নিয়ে নিজেদের উন্নতি করার চেষ্টা করত। একদিনের জন্য আসাটায় আমি আসলে বাংলাদেশের ফুটবলের কোনো লাভ দেখি না। যারা এনেছেন, তারা পুরোটাই ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে এনেছেন।’