দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে ফাইনালে অস্ট্রেলিয়া
খুব বড় সংগ্রহ গড়তে পারেনি দক্ষিণ আফ্রিকা। চলতি বিশ্বকাপ বিবেচনায় আগে ব্যাট করে ২১২ রান জয়ের জন্য যথেষ্ট নয়। আর বড় মঞ্চে হেরে যাওয়ার পুরোনো অপবাদ তো আছেই প্রোটিয়াদের। চোকার্স তকমা থেকে বের হতে পারেনি এবারও।
বিশ্বকাপের দ্বিতীয় সেমিফাইনালে আজ বৃহস্পতিবার (১৬ নভেম্বর) অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি হয় দক্ষিণ আফ্রিকা। মামুলি সংগ্রহ নিয়েও অবশ্য লড়াই চালিয়ে যায় শেষ পর্যন্ত। কিন্তু, খাদের কিনারা থেকে উঠে ঠিকই ম্যাচ বের করে নেয় অস্ট্রেলিয়া। রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে তিন উইকেটের জয় পায় দলটি।
এই জয়ে অসিরা নিশ্চিত করেছে চলতি বিশ্বকাপের ফাইনাল। ২০১৫ সালের পর আবারও বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেছে তারা।
আগে ব্যাট করে ৪৯.৪ ওভারে দক্ষিণ আফ্রিকা অলআউট হয় ২১২ রানে। জবাবে ৪৭.২ ওভারে সাত উইকেট হারিয়ে ২১৫ রান করে অস্ট্রেলিয়া।
দক্ষিণ আফ্রিকার দেওয়া ২১৩ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে অস্ট্রেলিয়াকে জড়ো সূচনা এনে দেন দুই ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার ও ট্রাভিস হেড। উদ্বোধনী জুটিতে ৬.১ ওভারে স্কোরবোর্ডে জমা করেন ৬০ রান। এক চার ও চার ছক্কায় ১৮ বলে ২৯ রান করেন ওয়ার্নার। তার ঝড়ো ইনিংসটি থামান এইডেন মার্করাম। সপ্তম ওভারে বোল্ড করেন অসি ওপেনারকে।
এক ওভার পর দ্বিতীয় উইকেট হারায় অসিরা। শূন্য রানে মিচেল মার্শকে ফেরান কাগিসো রাবাদা। কাভারে দুর্দান্ত এক নেন ফর ডার ডুসেন। ৬১ রানে দুই উইকেট হারানো অসিদের প্রাথমিক বিপর্যয় সামাল দেন হেড ও স্টিভ স্মিথ। দলীয় ১০৬ রানে কেশভ মহারাজের বলে বোল্ড হন হেড। ৪৮ বলে ৬২ রান করেন তিনি। ১৩৭ রানে পঞ্চম উইকেট হারায় অস্ট্রেলিয়া।
এরপরই ম্যাচে ফেরে দক্ষিণ আফ্রিকা। তাদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে রান তুলতে বেশ বেগ পায় অসি ব্যাটাররা। ১৯৩ রানে সপ্তম উইকেট পতনের পর জমে ওঠে ম্যাচ। তবে শেষ দিকে প্যাট কামিন্সের সহজ ক্যাচ মিস করেন কুইন্টন ডি কক। সঙ্গে শেষ হয় ফাইনালে খেলার আশাও। প্রোটিয়া বোলিংয়ের বিপক্ষে শেষ দিকে মিচেল স্টার্কের ৩৮ বলে অপরাজিত ১৬ এবং কামিন্সের ২৯ বলে অপরাজিত ১৪ রানে ভর দিয়ে জয় তুলে নেয় অস্ট্রেলিয়া। নিশ্চিত করে ফাইনাল।
দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে শামসি ও কোয়েৎজে নেন দুটি করে উইকেট।
দিনের শুরুতে কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে টসে জিতে ব্যাটিং বেছে নেয় দক্ষিণ আফ্রিকা। তবে, শুরুটা মোটেই ভালো হয়নি তাদের। প্রথম ওভারেই হারায় অধিনায়ক টেম্বা বাভুমার উইকেট। ওভারের শেষ বলে অসি পেসার মিচেল স্টার্কের বলে জস ইংলিশের হাতে ক্যাচ দিয়ে শূন্য রানে সাজঘরে ফেরেন বাভুমা। গোটা আসর মাতানো কুইন্টন ডি ককও ব্যর্থ হন। জস হ্যাজেলউডের বলে প্যাট কামিন্সকে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ডি কক। দলীয় রান তখন আট। ডি কক করেছেন তিন রান। ১০ রান করে ফিরেছেন এইডেন মার্করামও। তাকে ফিরিয়েছেন মিচেল স্টার্ক। স্কোরবোর্ডে ২৪ রান জমা করতেই দক্ষিণ আফ্রিকা হারায় চার উইকেট।
পঞ্চম উইকেট জুটিতে হেনরিক ক্লাসেন ও ডেভিড মিলার মিলে ৯৫ রানের জুটি গড়ে বিপর্যয় সামাল দেন। সেই প্রতিরোধ ভাঙেন ট্রাভিস হেড। নিজের প্রথম ওভারেই জোড়া উইকেট নিয়ে অসিদের ব্রেক থ্রু এনে দেন তিনি। প্রথমে ফেরান ৪৮ বলে ৪৭ রান করা ক্লাসেনকে। তাকে বোল্ড করেন হেড। পরের বলে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেন মার্কো জ্যানসেনকে।
এরপর জেরাল্ড কোয়েৎজকে নিয়ে একা হাতে লড়াই চালিয়ে যান মিলার। নবম ব্যাটার হিসেবে আউট হওয়ার আগে খেলেন ১১৬ বলে ১০১ রানের সময়োপযোগী ইনিংস। আটটি চার ও পাঁচ ছক্কায় সাজান ইনিংসটি। তাকে ফেরান অসি অধিনায়ক প্যাট কামিন্স। মিলারের শতকে ভর দিয়ে রান ২০০ ছাড়ায় প্রোটিয়ারা। শেষ পর্যন্ত ২১২ রানে থামে তারা।
অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে তিনটি করে উইকেট নেন স্টার্ক ও কামিন্স। হ্যাজেলউড ও হেড পান দুটি করে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
দক্ষিণ আফ্রিকা : ৪৯.৪ ওভারে ২১২/১০। (ডি কক ৩, বাভুমা ০, ডুসেন ৬, মার্করাম ১০, ক্লাসেন ৪৭, মিলার ১০১, জ্যানসেন ০, কোয়েৎজে ১৯, মহারাজ ৪, রাবাদা ১০, শামসি ১*; স্টার্ক ১০-১-৩৪-৩, হ্যাজেলউড ৮-৩-১২-২, কামিন্স ৯.৪-০-৫১-৩, জাম্পা ৭-০-৫৫-০, ম্যাক্সওয়েল ১০-০-৩৫-০, হেড ৫-০-২১-২)
অস্ট্রেলিয়া : ৪৭.২ ওভারে ২১৫/৭।(হেড ৬২, ওয়ার্নার ২৯, মার্শ ০, স্মিথ ৩০, লাবুশেন ১৮, ম্যাক্সওয়েল ১, ইংলিশ ২৮, স্টার্ক ১৬*, কামিন্স ১৪* ; জ্যানসেন ৪.২-০-৩৫-০, রাবাদা ৬-০-৪১-১, মার্করাম ৮-১-২৩-১, কোয়েৎজে ৯-০-৪৭-২, শামসি ১০-০-৪২-২, মহারাজ ১০-০-২৪-১)
ফল : অস্ট্রেলিয়া তিন উইকেটে জয়ী।