ক্রিকেট বিশ্বকাপে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন যারা
ক্রিকেট বিশ্বকাপের ইতিহাস প্রায় অর্ধশতাব্দীর। বর্তমানে চলছে ১৩তম আসর। এই দীর্ঘ পথে অপরাজিত চ্যাম্পিয়নের খাতায় নাম লিখিয়েছে দুটি দেশ। তা-ও একবার নয়, দুই দুইবার। এই পথে এবার অনেকটাই আশা যোগাচ্ছে আরও এক দেশ। যদি তাই হয়, তাহলে বিশ্বকাপে অপরাজিত চ্যাম্পিয়নের তালিকায় দেখা মিলবে তিন দেশের। আর সেটি হলো ভারত।
এবারের ক্রিকেট বিশ্বকাপ শুরুর আগ থেকেই ভারতকে ধরা হচ্ছিল শিরোপার অন্যতম দাবিদার। নিজেদের মাটিতে হাতের তালুর মতোই চেনা তাদের সব মাঠ। সেই সব মাঠে ভারত খেলছেও দুর্দান্ত। অপরাজিত থেকে ফাইনালে উঠেছে দলটি।
১০ দলের অংশগ্রহণে গ্রুপ পর্ব অনুষ্ঠিত হয় রাউন্ড রবিন পদ্ধতিতে। সেখানে ৯ ম্যাচের প্রতিটি জিতে শেষ চারে ওঠে ভারত। দারুণ ছন্দে থাকা নিউজিল্যান্ডকে হারায় সেমিতে। তৃতীয় বারের মতো বিশ্বকাপ শিরোপা জেতার অপেক্ষায় তারা। এর আগে ১৯৮৩ ও ২০১১-তে ক্রিকেটে শ্রেষ্ঠত্বের স্মারক ঘরে তুলেছিল দলটি।
এবারের ফাইনালে ভারতের প্রতিপক্ষ দুই-দুইবারের অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া। আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে আগামী ১৯ নভেম্বর মাঠে নামবে দুদল। অস্ট্রেলিয়ার সামনেও আছে ষষ্ঠ শিরোপা জেতার সুযোগ।
দুবার অপরাজিত অপর দলটি ওয়েস্ট ইন্ডিজ। যদিও সে সময় বিশ্বকাপকে বলা হতো ‘প্রুডেন্সিয়াল কাপ।’ আর আইসিসিকে বলা হতো ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কনফারেন্স। দুই বারের সেই চ্যাম্পিয়ন ক্যারিবিয়ানরা এই আসরে জায়গা করে নিতে পারেনি।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ (১৯৭৫, ১৯৭৯)
১৯৭৫ সালে আয়োজিত হয় প্রথম ক্রিকেট বিশ্বকাপ। তৎকালীন ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কনফারেন্সের তত্ত্বাবধানে ইংল্যান্ডে বসেছিল সে আসর। আজকের মতো ৫০ ওভার নয়, ওয়ানডে ম্যাচ তখন ৬০ ওভারে অনুষ্ঠিত হতো। টুর্নামেন্টের আনুষ্ঠানিক নামও বিশ্বকাপ ছিল না। স্পন্সরকারী প্রতিষ্ঠান প্রুডেন্সিয়াল অ্যাসুরেন্স কোম্পানির নামে ‘প্রুডেন্সিয়াল কাপ’ নামে পরিচিত ছিল সে আসর। অংশ নিয়েছিল আটটি দল। দুই গ্রুপে ভাগ হয়ে চারটি করে দল গ্রুপ পর্ব খেলে। রাউন্ড রবিন পদ্ধতিতে প্রত্যেকে একবার করে একে অপরের মুখোমুখি হয়। গ্রুপ পর্বে তিনটি ম্যাচই জিতে নেয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এরপর সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ড ও ফাইনালে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে প্রথম বিশ্বকাপের শিরোপা পায় ক্লাইভ লয়েডের নেতৃত্বাধীন ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
১৯৭৯ সালেও বিশ্বকাপের আয়োজক থাকে প্রুডেন্সিয়াল অ্যাসুরেন্স কোম্পানি। তাদের নামেই ‘প্রুডেন্সিয়াল কাপ’ হিসেবে বিশ্বকাপ আয়োজন করে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কনফারেন্স। আসর বসে ইংল্যান্ডেই। ৬০ ওভারের টুর্নামেন্টে আট দল এবং অপরিবর্তিত ফরম্যাটেই খেলা অনুষ্ঠিত হয়। গ্রুপ পর্বে তিন ম্যাচে দুটিতে জয় পায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বৃষ্টির কারণে পরিত্যক্ত হয় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচটি। দুইদিন রিজার্ভ ডে থাকার পরও লন্ডনে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে একটি বলও মাঠে গড়ায়নি। পয়েন্ট ভাগাভাগি করে নেয় দুই দল।
এতে অবশ্য সেমিফাইনালে উঠতে বেগ পেতে হয়নি ক্যারিবিয়ানদের। সেমিতে পাকিস্তান ও ফাইনালে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে টানা দ্বিতীয় শিরোপা ঘরে তোলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। প্রথম দুই আসরের দুটিতেই অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয় দলটি।
অস্ট্রেলিয়া (২০০৩, ২০০৭)
২০০৩ বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয় দক্ষিণ আফ্রিকায়। ৫০ ওভারের ম্যাচ, ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) সরাসরি তত্ত্বাবধানে আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ নামেই অনুষ্ঠিত হয় টুর্নামেন্টটি। ১৪টি দল দুই গ্রুপে ভাগ হয়ে গ্রুপ পর্বে অংশ নেয়। রাউন্ড রবিন পদ্ধতিতে প্রত্যেকে একবার করে একে অপরের মুখোমুখি হয়। গ্রুপ পর্বে ছয়টি ম্যাচই জিতে নেয় অস্ট্রেলিয়া। দুই গ্রুপের শীর্ষ তিন দল নিয়ে মোট ছয় দলের অনুষ্ঠিত হয় পরের পর্ব সুপার সিক্স। সেখানে তিন ম্যাচ খেলে তিনটিতেই জয় পায় অসিরা। এরপর সেমিফাইনালে শ্রীলঙ্কা ও ফাইনালে ভারতকে হারিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের পর দ্বিতীয় দল হিসেবে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয় অস্ট্রেলিয়া। তবে, ক্যারিবিয়ানরা যেখানে খেলেছিল পাঁচটি করে ম্যাচ, অসিরা এক আসরে খেলে ১১টি ম্যাচ।
২০০৭ বিশ্বকাপের আসর বসে ওয়েস্ট ইন্ডিজে। ১৬ দল চারটি গ্রুপে ভাগ হয়ে গ্রুপ পর্বে অংশ নেয়। রাউন্ড রবিন পদ্ধতির গ্রুপ পর্বের তিন ম্যাচেই জয় পায় অস্ট্রেলিয়া। জায়গা করে নেয় সুপার এইটে। চার গ্রুপের শীর্ষ দুই দল নিয়ে হয় সুপার এইট। সুপার এইটও অনুষ্ঠিত হয় রাউন্ড রবিন পদ্ধতিতে। তবে, এই পর্বে নিজ গ্রুপের দল বাদে বাকি ছয় দলের সঙ্গে খেলে প্রত্যেকটি দল। সুপার এইটে ছয় ম্যাচের প্রতিটিতে জিতে শেষ চারে ওঠে অস্ট্রেলিয়া। সেমিফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকা ও ফাইনালে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয় দলটি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের পর একমাত্র দল হিসেবে টানা দুই বিশ্বকাপে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে অসিরা। এই আসরেও ১১টি ম্যাচ খেলে তারা।
ভারতের সামনে এবার সুযোগ ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গী হওয়ার।