ভারতকে কাঁদিয়ে ষষ্ঠ শিরোপা জিতল অস্ট্রেলিয়া
২০০৩ সালে বিশ্বকাপ ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরে ঘরে ফিরেছিল ভারত। সেই হারের প্রতিশোধ এবার নেওয়া হলো না তাদের। টানা ১০ ম্যাচের অপরাজেয় যাত্রা অস্ট্রেলিয়ার কাছে আজ রীতিমত হলো ধরাশায়ী। অসিদের নৈপুণ্যতায় টিকল না ভারতের প্রবল আত্মবিশ্বাস। তাই আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে আসা এক লাখ ৩২ হাজার দর্শক কাঁদিয়ে রানার্সআপের সম্মান নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হলো তাদের। ছয় উইকেটে হারিয়ে ভারতের তৃতীয় শিরোপা জয়ের স্বপ্ন ভাঙল অসিরা। আজ স্বাগতিকদের সাজানো বাগানে খেলে ষষ্ঠ শিরোপা ঘরে তুলল প্যাট কামিন্সের দল।
আগে ব্যাট করে ৫০ ওভার শেষে সব উইকেট হারিয়ে স্কোরবোর্ডে ভারতীয় ব্যাটাররা জমা করেন ২৪০ রান। জবাবে ৪৩ ওভারের শেষ বলে চার উইকেট হারিয়ে ২৪১ রান করে অস্ট্রেলিয়া।
জয়ের লক্ষ্যে খেলতে নেমে প্রথম বলেই চার মেরে ইনিংস শুরু করে অস্ট্রেলিয়া। জসপ্রীত বুমরাহর বলে দুই স্লিপের মাঝ দিয়ে ডেভিড ওয়ার্নারের ব্যাটে আসে প্রথম বাউন্ডারি। ট্রাভিস হেড ও ওয়ার্নারের জুটিতে প্রথম ওভারেই দেখা মেলে তিনটি বাউন্ডারি। যদিও বেশিক্ষণ জুটি ধরে রাখতে পারেননি তারা। দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলেই হারাতে হয় ওয়ার্নারের উইকেট। মোহাম্মদ শামির বলে স্লিপে কোহলির হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন তিনি। তিন বলে সাত করেন তিনি।
ওয়ার্নারের পর ক্রিজে আসেন মিচেল মার্শ। দুই ওভার শেষে অস্ট্রেলিয়ার সংগ্রহ দাঁড়ায় ২৮ রান। সেখান সেই ঝড় সামলে ৪৭ রানে অসিদের তিন উইকেট তুলে নেয় ভারত। পঞ্চম ওভারে জসপ্রীত বুমরাহর বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন মিচেল মার্শ। তার আগে ১৫ বলে সমান একটি করে চার ও ছক্কায় ১৫ রান করেন তিনি। নিজের পরের ওভারে স্টিভ স্মিথকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেন বুমরাহ। আম্পায়ার রিচার্ড ইলিংওয়ার্থ আউট দিলে নন-স্ট্রাইক প্রান্তে থাকা ট্রাভিস হেডের দিকে তাকান স্মিথ। তবে রিভিউ না নিয়েই ছাড়েন মাঠ।
এরপর হেড ও মার্নাশ লাবুশেন মিলে আর কোনও বিপদ হতে দেননি। কিছুটা রক্ষণাত্মক হন তারা। ক্রিজে লাবুশেন ছিলেন পুরোপুরি ডিফেন্সিভ। ১১০ বলে অপরাজিত থাকেন ৫৮ রানে। জায়গা করে দেন হেডকে। তাতে নির্ভার হয়ে ৯৫ বলে শতক তুলে নেন অসি ওপেনার। বিশ্বকাপ ফাইনালে তৃতীয় অস্ট্রেলিয়ান এবং সবমিলিয়ে সপ্তম ক্রিকেটার হিসেবে সেঞ্চুরির কীর্তি গড়েন তিনি। যদিও শেষ পর্যন্ত ১২০ বলে ১৩৭ রান করে সিরাজের বলে আউট হন। ততক্ষণে অসিদের জয়ের জন্য প্রয়োজন দুই রান। ম্যাক্সওয়েল এক বলেই শেষ করেন ম্যাচ। অস্ট্রেলিয়া মাতে বিশ্বকাপ জয়ের বুনো উল্লাসে।
ভারতের পক্ষে বুমরাহ দুই উইকেট নেন। একটি করে উইকেন পান শামি ও সিরাজ।
এর আগে আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে টসে জিতে বোলিং বেছে নেন অসি অধিনায়ক প্যাট কামিন্স। আসরজুড়ে রানের ফোয়ারা ছোটানো ভারতকে থামিয়ে দেয় ২৪০ রানে। ৫০ ওভার শেষে সবকটি উইকেট হারিয়ে স্কোরবোর্ডে ভারতীয় ব্যাটাররা জমা করেন ২৪০ রান। বিশ্বকাপ নিজেদের করে নিতে অসিদের প্রয়োজন ২৪১ রান।
উত্তেজনায় ঠাসা ফাইনালের শুরুটা ভারত দেখেশুনেই করে। মিচেল স্টার্কের প্রথম ওভার থেকে তোলে তিন রান। তবে, দ্বিতীয় ওভারে রোহিত শর্মা চড়াও হন অসি পেসারদের ওপর। এক দিকে রোহিত ক্রমাগত শট খেলে গেলেও এ দিন খালি হাতে ফেরেন আরেক ওপেনার শুভমান গিল। ইনিংসের পঞ্চম ওভারে স্টার্কের বলে মিড অনে ক্যাচ দিয়ে আউট হন গিল। সাত বলে চার রান করে অ্যাডাম জাম্পার তালুবন্দি হন। রোহিতকে আউট করে অস্ট্রেলিয়াকে দ্বিতীয় উইকেট এনে দেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। মিড অফে ট্রাভিস হেডের দুর্দান্ত এক ক্যাচে পরিণত হন রোহিত। ৩১ বলে চারটি চার ও তিনটি ছক্কায় ৪৭ রান করেন রোহিত।
রোহিতের পর দ্রুতই সাজঘরে ফেরেন শ্রেয়াস আইয়ার। তিন বলে দুই রান করে প্যাট কামিন্সের বলে জস ইংলিশের ক্যাচে পরিণত হন শ্রেয়াস। ৮১ রান তুলতেই ভারত হারায় তিন উইকেট। তিন উইকেট হারিয়ে বেশ সতর্ক হয় দলটি। পরের ১০ ওভারে তোলে মাত্র ৩৫ রান। বিরাট কোহলি ও লোকেশ রাহুল মিলে ৬৭ রানের জুটি গড়ে শুরুর ধাক্কা সামাল দেন। ইনিংসের ২৯তম ওভারের তৃতীয় বলে কামিন্সের কাছে পরাস্ত হন কোহলি। শর্ট ডেলিভারি ডিফেন্স করতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু, বলের ফ্লাইট মিস করে সেটি ব্যাট ছুঁয়ে স্ট্যাম্পে আঘাত করে। ভারত হারায় চতুর্থ উইকেট। আউট হওয়ার আগে ৬৩ বলে চার বাউন্ডারিতে ৫৪ রান করেন কোহলি।
ইনিংসের ৩৬তম ওভারে পঞ্চম উইকেট হারায় ভারত। জস হ্যাজেলউডের অফ স্ট্যাম্পের বাইরে করা বলে খোঁচা দিতে গিয়ে উইকেটের পেছনে জস ইংলিশের হাতে ধরা পড়েন জাদেজা। এর আগে ২২ বলে ৯ রান করেন তিনি। ভারতের পক্ষে একা লড়াই করেন রাহুল। ধীরলয়ে অর্ধশতক পূর্ণ করে একপ্রান্ত আগলে রাখেন অনেকটা সময়। অসি বোলারদের বোলিংয়ে খাবি খাওয়া ভারতের পক্ষে ১০৭ বলে মাত্র একটি বাউন্ডারিতে ৬৬ রান করেন রাহুল। স্টার্কের বলে উইকেটের পেছনে ইংলিশের ক্যাচে পরিণত হয়ে সাজঘরে ফেরেন এ ব্যাটার। অস্ট্রেলিয়ান বোলারদের সামনে অসহায় আত্মসমর্পন করেন ভারতের ব্যাটাররা। গুটিয়ে যায় মাত্র ২৪০ রানে।
অসিদের পক্ষে তিন উইকেট শিকার করেন স্টার্ক। দুটি করে উইকেট পান কামিন্স ও হ্যাজেলউড।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
ভারত : ৫০ ওভারে ২৪০/১০। (রোহিত ৪৭, গিল ৪, কোহলি ৫৪, শ্রেয়াস ৪, রাহুল ৬৬, জাদেজা ৯, যাদব ১৮, শামি ৬, বুমরাহ ১, কুলদীপ ১০, সিরাজ ৯*; স্টার্ক ১০-০-৫৫-৩, হ্যাজেলউড ১০-০-৬০-২, ম্যাক্সওয়েল ৬-০-৩৫-১, কামিন্স ১০-০৩৪-২, জাম্পা ১০-০-৪৪-১, মার্শ ২-০-৫-০, হেড ২-০-৪-০)
অস্ট্রেলিয়া : ৪৩ ওভারে ২৪১/৪। (ওয়ার্নার ৭, হেড ১৩৭, মার্শ ১৫, স্মিথ ৪, লাবুশেন ৫৮*, ম্যাক্সওয়েল ২*; বুমরাহ ৯-২-৪৩-২, শামি ৭-১-৪৭-১, জাদেজা ১০-০-৪৩-০, কুলদীপ ১০-০-৫৬-০, সিরাজ ৭-০-৪৫-১)
ফল : অস্ট্রেলিয়া ছয় উইকেটে জয়ী।