বাংলাদেশকে হারিয়ে সমতায় সিরিজ শেষ করল নিউজিল্যান্ড
পারল না বাংলাদেশ। বোলাররা চেষ্টার কমতি রাখেননি। কিন্তু ব্যাটাররা ভালো পুঁজি এনে দিতে পারেননি। ১৩৭ রানের ছোট লক্ষ্য দিয়েও এক পর্যায়ে মনে হচ্ছিল, কিউইদের বুঝি হারিয়েই দিল বাংলাদেশ। ব্যাটিং ব্যর্থতার পরেও আশার বাতিঘর হয়ে ছিলেন বোলাররা। ঢাকা টেস্টের চতুর্থ দিনে আজ শনিবার (৯ ডিসেম্বর) ৬৯ রানে ছয় উইকেটে হারিয়ে নিউজিল্যান্ড অনেকটাই খাদের কিনারে চলে যায়। সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে সপ্তম উইকেটে ৬৯ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়ে কিউইদের চার উইকেটের জয় এনে দেন গ্লেন ফিলিপস ও মিচেল স্যান্টনার।
বাংলাদেশের ছুঁড়ে দেওয়া ১৩৭ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ৩৯.৪ ওভারে ছয় উইকেট হারিয়ে ১৩৯ রান তোলে নিউজিল্যান্ড। দুই ম্যাচ সিরিজ ১-১ সমতায় শেষ হয়।
অল্প রান তাড়া করতে নেমে শুরুতেই উইকেট হারায় নিউজিল্যান্ড। প্রথম আঘাত হানেন পেসার শরিফুল ইসলাম। ডেভন কনওয়েকে (২) লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলে বাংলাদেশকে শুভসূচনা এনে দেন তিনি। পাঁচ রানে কিউইরা হারায় কনওয়েকে। দলীয় ২৪ রানে কেইন উইলিয়ামসনকে সাজঘরের পথ দেখান তাইজুল ইসলাম। ১১ রান করে তাইজুলের বলে স্ট্যাম্পড হন উইলিয়ামসন।
সতর্ক কিউইরা দেখেশুনে খেলে এরপর। বেশিক্ষণ অবশ্য সেই প্রতিরোধ টেকেনি। হেনরি নিকোলসকে (৩) লেগ বিফোর করে বাংলাদেশকে ব্রেক থ্রু এনে দেন মেহেদী হাসান মিরাজ। ৩৩ রানে তিন উইকেট হারানো কিউইদের হাল ধরার চেষ্টা করেন টম লাথাম ও ডেরিল মিচেল। লাথামকে স্লিপে নাজমুল হোসেন শান্তর ক্যাচ বানিয়ে ফেরান মিরাজ। লাথামের ব্যাট থেকে আসে ২৬ রান।
চতুর্থ উইকেটের পুনরাবৃত্তিই ঘটে ষষ্ঠ উইকেটেও। এবারও স্লিপে শান্তর ক্যাচ, মিরাজের বলে। এবার শিকার ১৯ রান করা মিচেল। মাঝে পঞ্চম উইকেট তুলে নেন তাইজুল। টম ব্লান্ডেলকে সোহানের ক্যাচ বানিয়ে ফেরান ক্রিজে থিতু হওয়ার আগেই।
ছয় উইকেট হারিয়ে কিউইরা খেলেছে আগ্রাসী ঢংয়ে। ফিলিপস ও স্যান্টনার মিলে বাকি সময় আর কোনো অঘটন ঘটতে দেননি। দলকে জিতিয়েই মাঠ ছাড়েন তারা।
বাংলাদেশের পক্ষে মিরাজ তিন উইকেট ও তাইজুল নেন দুটি। এর আগে দিনের শুরুতে ৩৮ রানে মাঠে নামা বাংলাদেশ প্রথম উইকেটে হারায় মমিনুল হককে। দলীয় ৭১ রানে এজাজ প্যাটেলের বলে লেগ বিফোর হন মমিনুল। তার ব্যাট থেকে আসে ১০ রান। প্রথম ইনিংসে বাচ্চাদের মতো ভুল করে আউট হওয়া মুশফিকুর রহিম দ্বিতীয় ইনিংসেও ব্যর্থ ব্যাট হাতে। ৯ রান করে মিচেল স্যান্টনারের বলে ডেরিল মিচেলের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন। দলের বিপদ বাড়ে পঞ্চম ব্যাটার হিসেবে শাহাদাত হোসেন দিপু আউট হলে। এবারও শিকারি স্যান্টনার। দুই রান করে লেগ বিফোর হন দিপু।
মেহেদী হাসান মিরাজ ফেরেন তিন রান করে। এজাজ প্যাটেলের বলে স্যান্টনারের ক্যাচে পরিণত হন তিনি। নুরুল হাসান সোহান ক্রিজে এসেই হতে পারতেন লেগ বিফোর। রিভিউ নিয়ে বেঁচে গেলেও তিন বলের বেশি টিকতে পারেননি। কোনো রান না করেই ফেরেন প্যাটেলের বলে লেগ বিফোর হয়েই।
বাংলাদেশের পক্ষে একপ্রান্তে একা লড়াই চালিয়ে যান ওপেনার জাকির হাসান। ৮৬ বলে ৫৯ রানের ইনিংস খেলেন তিনি। তার ব্যাটেই বাংলাদেশ স্বপ্ন দেখছিল সংগ্রহ বড় করার। শেষ পর্যন্ত সেটি হয়নি। মিচেলের ক্যাচ বানিয়ে জাকিরকে সাজঘরে পাঠান প্যাটেল। নবম ব্যাটার হিসেবে তিনি আউট হন। তাকে ফিরিয়ে ইনিংসে ফাইফার নেন প্যাটেল।
শেষ ব্যাটার হিসেবে শরিফুল ইসলামকে স্ট্যাম্পড করে ইনিংসে নিজের ষষ্ঠ শিকার করেন প্যাটেল। বাংলাদেশ অলআউট হয় দেড়শ ছোঁয়ার আগেই। কিউইদের পক্ষে ৫৭ রানে ছয় উইকেট পান প্যাটেল। তিন উইকেট নেন স্যান্টনার।
এর আগে গতকাল আট রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করে বাংলাদেশ। প্রথম ওভারেই হারায় ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয়ের উইকেট। তিন রানের সময় এজাজ প্যাটেলের বলে প্রথম স্লিপে ডেরিল মিচেলের ক্যাচে পরিণত হন জয়। সাজঘরে ফেরেন দুই রান করে। দ্বিতীয় উইকেটে বিপর্যয় সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন জাকির হাসান ও অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। দলীয় ৩৮ রানে টিম সাউদির বলে আউট হন শান্ত। ১৫ রান করে কেইন উইলিয়ামসনের তালুবন্দি হন তিনি।
প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের করা ১৭২ রানের জবাবে ১৮০ রানে অলআউট হয় নিউজিল্যান্ড।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস : ৬৬.২ ওভারে ১৭২/১০।
নিউজিল্যান্ড প্রথম ইনিংস : ৩৭.১ ওভারে ১৮০/১০।
বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংস : ৩৫ ওভারে ১৪৪/১০। (জাকির ৫৯, জয় ২, শান্ত ১৫, মমিনুল ১০, মুশফিক ৯, দিপু ৪, মিরাজ ৩, সোহান ০, নাঈম ৯, তাইজুল ১৪*, শরিফুল ৮; প্যাটেল ১৮-১-৫৭-৬, স্যান্টনার ১১-০-৫১-৩,
নিউজিল্যান্ড দ্বিতীয় ইনিংস : ৩৯.৪ ওভারে ১৩৯/৬। (লাথাম ২৬, কনওয়ে ২, উইলিয়ামসন ১১, নিকোলস ৩, মিচেল ১৯, টম ২, ফিলিপস ৪০* স্যান্টনার ৩৫*; শরিফুল ৫-২-৯-১, মিরাজ ১৬.৪-২-৫২-৩, তাইজুল ১৪-২-৫৮-২, নাঈম ৩-০-১৫-০, মমিনুল ১-০-৪-০)
ফল : নিউজিল্যান্ড চার উইকেটে জয়ী।