তারুণ্যে চড়ে নিউজিল্যান্ডে নতুন ইতিহাস বাংলাদেশের
নিউজিল্যান্ডের মাটিতে টেস্ট জয়ের ইতিহাস হয়েছিল আগেই। এই সফরে গিয়ে ওয়ানডেতে জিতে অর্জনের তালিকা আরেকটু লম্বা হলো। অপেক্ষা ছিল শুধু টি-টোয়েন্টির জয়ের স্বাদ পাওয়ার। এবার সেটাও অর্জন করল লাল-সবুজের দল। টেস্ট-ওয়ানডের পর সীমিত ওভারের ফরম্যাটে নিউজিল্যান্ডের মাটিতের জয়ে ইতিহাস গড়ল বাংলাদেশ।
তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে আজ নিউজিল্যান্ডকে ৫ উইকেটে হারিয়েছে বাংলাদেশ। এই জয়ে তিন ম্যাচের সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ। কিউইদের মাটিতে এটিই বাংলাদেশের প্রথম টি-টোয়েন্টি জয়। যা এসেছে ১০তম টি-টোয়েন্টিতে। এর আগে তাদের মাটিতে ৯টি টি-টোয়েন্টি খেলা বাংলাদেশ প্রতিটিতেই পেয়েছিল হারের তিক্ত স্বাদ।
আজ বুধবার (২৭ ডিসেম্বর) আগে ব্যাট করে ২০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে নিউজিল্যান্ড তোলে ১৩৪ রান। জবাবে ১৮.৪ ওভারে ৫ উইকেটে ১৩৭ রান করে বাংলাদেশ।
টি-টোয়েন্টির হিসেবে লক্ষ্যটা খুব বড় নয়। সেটি তাড়া করতে নেমে শুরুটা খারাপ হয়নি বাংলাদেশের। তবে, তা ধরে রাখতে পারেননি ওপেনার রনি তালুকদার। সাত বলে ১০ রান করে টিম সাউদির বলে পরিণত হন অ্যাডাম মিলনের ক্যাচে। ১৩ রানে প্রথম উইকেট হারায় বাংলাদেশ। ওয়ানডাউনে নামা অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত আভাস দিচ্ছিলেন বড় ইনিংসে। কিন্তু, ১৪ বলে ১৯ রান করে জেমস নিশামের লাফিয়ে ওঠা বলে কিউই অধিনায়ক মিচেল স্যান্টনারের ক্যাচে পরিণত হন।
আত্মবিশ্বাসী সৌম্য সরকার বেশ কয়েকটি ভালো শট খেলেন। ১৫ বলে ২২ রানের ইনিংসটি বড় করার সুযোগ ছিল তার সামনে। বেন সিয়ার্সের নিচু হয়ে আসা ডেলিভারি লং অনে মারতে গিয়ে বলের ফ্লাইট মিস করেন সৌম্য। বোল্ড হয়ে থামে তার ইনিংস। তাওহিদ হৃদয়ও পারেননি ইনিংস বড় করতে। ১৮ বলে ১৯ রান করা হৃদয়কে থামান স্যান্টনার। ক্যাচ নেন টিম সাউদি।
আফিফ হোসেন ধ্রুবকে দাঁড়াতেই দেননি সাউদি। কিউই পেসারের শর্ট লেন্থ ডেলিভারিতে খেই হারিয়ে নিশামের হাতে ক্যাচ তুলে দেন আফিফ। ৯৭ রানে পাঁচ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে বাংলাদেশ। ১৫ তম ওভারের শেষ বলে লিটন দাস লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়েন সাউদির বলে। রিভিউ নিয়ে রক্ষা পান এই ওপেনার।
শেখ মেহেদিকে নিয়ে ম্যাচের বাকিটা পথ পাড়ি দেন লিটন। দেখেশুনে খেলেন কিউই বোলারদের। শুরুতে ধীরলয়ে খেলা লিটন পরে চড়াও হন কিউইদের ওপর। তার অপরাজিত ৩৬ বলে ৪২ রানের চমৎকার ইনিংসে ভর দিয়ে বাংলাদেশ পায় অধরা জয়ের স্বাদ। ৯ ম্যাচ পর কিউইদের মাঠে টি-টোয়েন্টিতে জিতল বাংলাদেশ।
এর আগে টস জিতে কিউইদের ব্যাটিংয়ে পাঠান বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। পুরোদস্তুর ব্যাটিং পিচে বাংলাদেশের বোলাররা চমক দেখান প্রথম ওভার থেকেই। ইনিংসে চতুর্থ বলে কিউই ওপেনার টিম শেফার্ডকে শূন্য রানে বোল্ড করেন স্পিনার শেখ মেহেদি হাসান। দলীয় এক রানে প্রথম উইকেট হারানো কিউইদের ঘুরে দাঁড়াতে দেননি শরিফুল ইসলাম। নিজের প্রথম ওভারেই হানেন জোড়া আঘাত। পরপর দুই বলে ফিল অ্যালেন (১) ও গ্লেন ফিলিপসকে (০) ফেরান পেসার শরিফুল। অ্যালেনকে সৌম্য সরকারের ক্যাচ বানিয়ে ও ফিলিপসকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলে হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা জাগান তিনি।
এক রানে তিন উইকেট হারানোটা অপ্রত্যাশিতই ছিল কিউইদের কাছে। চতুর্থ উইকেটে ভরসা হয়ে ছিলেন ডেরিল মিচেল ও মার্ক চ্যাপম্যান। কিন্তু, বেশিক্ষণ গড়তে পারেননি প্রতিরোধ। দলীয় ২০ রানে মিচেলকে বোল্ড করেন মেহেদি। আউট হেওয়ার আগে ১৪ রান করেন মিচেল। পঞ্চম উইকেটে চ্যাপম্যান ও জেমস নিশাম মিলে ৩০ রানের জুটি গড়ে বিপর্যয় সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন। ১৯ বলে ১৯ রান করা চ্যাপম্যানকে সাজঘরে ফেরান রিশাদ হোসেন।
এই জুটি ভাঙলেও নিশামও স্যান্টনার মিলে ৪১ রানের জুটি গড়েন। বিপজ্জনক হয়ে ওঠার আগে জুটি ভাঙেন শরিফুল। মিড উইকেটে স্যান্টনারের দারুণ ক্যাচ তালুবন্দি করেন সৌম্য। কিউই অধিনায়ক ফেরেন ২৩ রান করে।
আসা-যাওয়ার মিছিলে এক প্রান্তে অবিচল ছিলেন নিশাম। ২৯ বলে ৪৮ রান করে হুমকি হয়ে উঠেছিলেন বাংলাদেশের জন্য। তাকে ফিরিয়ে স্বস্তি এনে দেন মুস্তাফিজুর রহমান। মুস্তাফিজের ফুলটস বলে ডিপ কাভারে আফিফ হোসেনের ক্যাচে পরিণত হন নিশাম। টিম সাউদির উইকেটেও মুস্তাফিজ-আফিফের রসায়ন। মুস্তাফিজের বলে আফিফের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন সাউদি। নবম ব্যাটার হিসেবে ইশ সোধিকে উইকেটের পেছনে লিটন দাসের ক্যাচ বানান তানজিম সাকিব। শেষ পর্যন্ত কিউইরা থামে ১৩৪ রানে।
বাংলাদেশের পক্ষে শরিফুল নেন তিন উইকেট। দুটি করে উইকেট পান মেহেদি ও মুস্তাফিজ। নিউজিল্যান্ডের মাঠে তাদের বিপক্ষে প্রথম টি-টোয়েন্টি জিততে বাংলাদেশের প্রয়োজন ১৩৫ রান।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
নিউজিল্যান্ড : ২০ ওভারে ১৩৪/৯। (অ্যালেন ১, শেফার্ড ০, মিচেল ১৪, ফিলিপস ০, চ্যাপম্যান ১৯, নিশাম ৪৮, স্যান্টনার ২৩, মিলনে ১৬*, সাউদি ৮, সোধি ২, সিয়ার্স ১*; মেহেদি ৪-০-১৪-২, শরিফুল ৪-০-২৬-৩, সাকিব ৪-০-৪৫-১, মুস্তাফিজ ৪-০-১৫-২, রিশাদ ৩-০-২৪-১, আফিফ ১-০-৯-০)।
বাংলাদেশ : ১৮.৪ ওভারে ১৩৭/৫। (লিটন ৪২*, রনি ১০, শান্ত ১৯, সৌম্য ২২, হৃদয় ১৯, আফিফ ১, শেখ মেহেদি ১৯ ; সাউদি ৪-০-১৬-১, মিলনে ৩.৪-০-৩৯-১, নিশাম ১-০-৭-১, সিয়ার্স ৪-০-৩৬-১, সোধি ২-০-২০-০, স্যান্টনার ৪-০-১৬-১)।
ফল : বাংলাদেশ পাঁচ উইকেটে জয়ী