বাইশ গজ থেকে রাজনীতিতে সফল যারা
রাত পোহালে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সময়ের হিসাবে একদিনও নেই, আগামীকাল রোববার (৭ জানুয়ারি) সকাল ৮টা থেকে শুরু হবে ভোটগ্রহণ। প্রথমবারের মতো নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন দেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় মুখ সাকিব আল হাসান। সাবেক অধিনায়ক মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা অংশ নিচ্ছেন দ্বিতীয়বার। বাংলাদেশের এই ক্রিকেটাররা ছাড়া আরও অনেক ক্রিকেটারই নিজ নিজ দেশের হয়ে নির্বাচন করেছিলেন। হয়েছিলেন সফলও।
খেলাটা একসময় ছাড়তে হয়। ছাড়েনও তারা। থেকে যায় নেতৃত্বের গুণ যা পরিণত হয় নেশায়। সে নেশার ঘোরে প্রবেশ করেন রাজনীতিতে। ক্রিকেটের সবুজ গালিচা যতটা মসৃণ, ততটাই এবড়ো-খেবড়ো রাজনীতির প্রতিযোগিতাপূর্ণ ময়দান। সবাই সফল হয় না। আবার অনেকে ছাড়িয়ে যান নিজেকেই। ভারতীয় উপমহাদেশের তেমন কয়েকজন তারকাকে নিয়ে এই আয়োজন, যারা ক্রিকেটের মতো রাজনীতিতেও সফলতা পেয়েছেন।
নাঈমুর রহমান দুর্জয়
বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক নাঈমুর রহমান দুর্জয় রাজননীতির ময়দানে ছিলেন সক্রিয়। ২০১৪ ও ২০১৮ সালে পরপর দুইবার তিনি মানিকগঞ্জ-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তার বাবা অধ্যক্ষ সায়েদুর রহমান একই আসনের সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। এ ছাড়া তার মা মানিকগঞ্জ জেলা আওয়ামী মহিলা লীগের সভাপতি ছিলেন দীর্ঘসময়। তবে, এবারের নির্বাচনে নেই তার নাম।
মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা
বাংলাদেশের অন্যতম সফল অধিনায়ক মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা ২০১৮ সালে প্রবেশ করেন রাজনীতিতে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হিসেবে নড়াইল-২ আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নিয়ে জয়লাভ করেন তিনি। ক্রিকেটের মতো রাজনীতিতেও তুমুল জনপ্রিয়তা পান তিনি। এবারও দাঁড়িয়েছেন নির্বাচনে। আছেন জনপ্রিয়তার তুঙ্গে। বলা চলে, ক্রিকেটের মতো রাজনীতিতেও নিজেকে আদর্শ নেতা হিসেবে প্রমাণ করেছেন নড়াইল এক্সপ্রেস।
মোহাম্মদ আজহারউদ্দিন
পেশাগত জীবনের শুরুতে মোহাম্মদ আজহারউদ্দিন ছিলেন একজন জুনিয়র ব্যাংক কর্মকর্তা। সেখান থেকে ক্রিকেটে আসা। বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারের শুরু করেন টানা তিনটি টেস্ট শতক দিয়ে। কিন্ত, সব ধুলোয় মিশে যখন ১৯৯৬ সালে ম্যাচ পাতানোর অভিযোগে দোষী হয়ে। ক্রিকেট থেকে বহিষ্কৃত হতে হয় চিরদিনের জন্য। ২০০৯ সালে আজহারউদ্দিন যোগ দেন কংগ্রেসে। পান রাজ্যসভার টিকেট। লোকসভায় হারিয়েছেন বিজেপির প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বী সারভেশ কুমারকে। ভারতের উত্তর প্রদেশের শহর মুরাদাবাদের সংসদ সদস্যের দায়িত্ব পালন করেন পাঁচ বছর। ২০০৯ এর মে থেকে ২০১৪ সালের মে পর্যন্ত।
ইমরান খান
ক্রিকেট ছেড়ে রাজনীতিতে প্রবেশ করা উপমহাদেশের সবচেয়ে সফল ব্যক্তিত্ব ইমরান খান। সাবেক পাকিস্তানি অধিনায়ক ২০১৮ সালে নিজের প্রতিষ্ঠিত দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের হয়ে দেশটির প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। তবে, ২০২২ সালের ১০ এপ্রিল অনাস্থা ভোটে হেরে তিনি প্রধানমন্ত্রীত্ব হারান। বর্তমানে তিনি কারাগারে বন্দি থাকলেও পাকিস্তানে তার বেশ জনপ্রিয়তা রয়েছে। ১৯৯২ সালে পাকিস্তান প্রথম বিশ্বকাপ জেতে ইমরান খানের নেতৃত্বে। ২১ বছরের বর্ণাঢ্য ক্রিকেট ক্যারিয়ারে পাকিস্তানিদের কাছে তিনি হয়ে উঠেছিলেন সত্যিকারের হিরো। রাজনীতিতেও তার ছাপ রাখেন প্রভাবশালী এই ক্রিকেটার। তেহরিক-ই-ইনসাফের শুরু হয় ১৯৯৬ সালে। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে ২০১৩ সালের নির্বাচনে অংশ নেন তিনি। যদিও, সেবার জয় পাওয়া হয়নি।
নভোজোৎ সিং সিধু
নভোজোৎ সিং সিধুর যেন প্রতিভার শেষ নেই। ছিলেন জাতীয় দলের ওপেনার, টিভি চ্যানেলের কমেডিয়ান। ২০০৪ সাল থেকে একজন সক্রিয় রাজনীতিবিদ। ৫১ টেস্ট এবং ১৩৬ টি ওডিআই খেলা ভারতের সাবেক এই ওপেনার দায়িত্ব পালন করেছিলেন ভারতের পাঞ্জাবের স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর। এ মন্ত্রণালয়ের অধীনে রয়েছে পর্যটন, সামাজিক যোগাযোগ ও মিউজিয়ামের দায়িত্ব। ২০০৪ সালে বিজেপির হয়ে অমৃতসর থেকে প্রথমবার সংসদ সদস্য হন। ২০১৪ সাল পর্যন্ত সে পদ ধরে রাখেন। ২০১৭ সালে তিনি জাতীয় কংগ্রেসে যোগ দেন এবং পূর্ব অমৃতসরের জাতীয় বিধান সভার সদস্য নির্বাচিত হন।
অর্জুনা রানাতুঙ্গা
অলরাউন্ডার অর্জুনা রানাতুঙ্গার নেতৃত্বেই ১৯৯৬ বিশ্বকাপ জেতে শ্রীলঙ্কা। দুই দশকের বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারে ৯৩টি টেস্ট ম্যাচ ও ২৬৯টি ওডিআই খেলেন বাঁহাতি এই মিডলঅর্ডার ব্যাটার। বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়ে ২০০১ সালে রাজনীতিতে যোগ দেন। পিপলস অ্যালিয়েন্স নামক দল থেকে প্রথম দফায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। দায়িত্ব পালন করেন পর্যটন উপমন্ত্রীর। ২০০৮ সালে পালন করেন ক্রিকেট বোর্ডের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব। ২০১০ সালে যোগ দেন ড্যামোক্রেটিক ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স-এ। সেই দল থেকেও নির্বাচনে জয় পান। ২০১৫ সালে দল বদলে যোগ দেন ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টিতে। পালন করেন শ্রীলঙ্কার নৌ ও বন্দর মন্ত্রীর দায়িত্ব।
সনাৎ জয়াসুরিয়া
মাশরাফি-সাকিবের আগে প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে খেলোয়াড় থাকাকালীন রাজনীতিতে জড়ান সনাৎ জয়াসুরিয়া। শ্রীলঙ্কান ক্রিকেট বোর্ডের সাবেক এই প্রধান নির্বাচক ২০১০ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। নিজ রাজ্য মাতারা থেকে রাজনৈতিক দল ইউনাইটেড পিপলস ফ্রিডম অ্যালিয়েন্স পার্টি’-র মনোনয়ন পান এবং বিশাল ব্যবধানে জয়লাভ করেন তিনি। ২০১০ সালের নির্বাচনে পরবর্তী পাঁচ বছরে রাজাপাকসে সরকারের অধীনে তিনি দুইবার দুই মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। একটি ডাক বিভাগে, অপরটি স্থানীয় সরকার ও গ্রাম উন্নয়নে। ২০১৫ সালে মেয়াদ শেষের পর অবশ্য আর নির্বাচনে অংশ নেননি ১৯৯৬ বিশ্বকাপ জয়ী লঙ্কান দলের অন্যতম সদস্য জয়াসুরিয়া।