শামার জোসেফ : নিভৃত গ্রাম থেকে ক্যারিবীয়দের রূপকথার নায়ক
শামার জোসেফ—অবিশ্বাস্য, অপ্রতিরোধ্য; যে কোনো বিশেষণ দিয়ে তাকে বিশেষায়িত করা কঠিন। পায়ের চোটে যার মাঠে নামা নিয়ে ছিল শঙ্কা। সেই জোসেফের হাত ধরেই ব্রিসবেনের গ্যাবায় ইতিহাস লিখল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। গায়ানার এক নিভৃত গ্রাম থেকে ক্যারিবীয়দের রূপকথার এই নায়কের ওঠে আসার গল্প আপনাকেও অনুপ্রাণিত করবে।
চলুন জেনে নেওয়া যাক শামার জোসেফের গল্প—
গায়ানার বারাকারা নামে এক নিভৃত গ্রামে জন্ম জোসেফের। যেখানে নদীপথে পৌঁছাতেও কখনও কখনও দুইদিন লেগে যায়। সাড়ে তিনশ মানুষের এই গ্রামে বেড়ে ওঠা জোসেফের। যেখানে ২০১৮ সাল পর্যন্ত টেলিফোন নেটওয়ার্ক, কিংবা ইন্টারনেট সুবিধা ছিল না। এমন একটি গ্রামেই ক্রিকেটে হাতেখড়ি শামারের।
জীবন কখনও কখনও কল্পনাকে হার মানায়। জোসেফ যার জলন্ত উদাহরণ। বছর খানেক আগেও নৈশপ্রহরীর দায়িত্বও পালন করা এই ক্রিকেটার নাটকীয়ভাবে সুযোগ পান জাতীয় দলে। অ্যাডিলেডে নিজের অভিষেক টেস্টে স্টিভ স্মিথের উইকেট নিয়ে ক্রিকেট বিশ্বের নজর কেড়েছিলেন। প্রথম ইনিংসে পাঁচ উইকেট নিয়ে রাঙান সাদা পোশাকে নিজের অভিষেক ম্যাচ। যদিও সেই টেস্টে জিততে পারেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
অ্যাডিলেডের সেই আক্ষেপ ব্রিসবেনে ঘোচালেন ২৪ বছর বয়সী এই তারকা। শুনতে কিছুটা অবাক লাগলেও সত্য যে, ২৭ বছর আগে যখন অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে টেস্ট জিতেছিল ক্যারিবীয়রা, জোসেফের তখন জন্মও হয়নি। পার্থে সেই টেস্টে বল হাতে আগুন ঝড়িয়েছিলেন কার্টলি অ্যামব্রোস, ইয়ান বিশপ ও কোর্টনি ওয়ালসের মতো কিংবদন্তিরা। ব্যাট হাতে সেঞ্চুরি করেছিলেন ব্রায়ান লারা। আজ ব্রিসবেনে ৬৮ রানে সাত উইকেটের স্পেলে ক্যারিবীয়দের সেই পেস ঐতিহ্যকে স্মরণ করালেন জোসেফ।
টেস্ট শুরুর আগে এমন সমাপ্তি কেউ কল্পনা করেছিলেন কি না সন্দেহ। অ্যাডিলেডে সিরিজের প্রথম টেস্টে তিন দিনের মধ্যে হেরে যাওয়া ওয়েস্ট ইন্ডিজ ব্রিসবেনে দিবারাত্রির ম্যাচটিতেও সহজেই হেরে যাবে বলে মনে করেছিলেন অনেকেই। কে জানত, শামার জোসেফ নামের সেই তরুণ তুর্কি ব্রিসবেনে সবুজ গালিচায় লিখবেন নয়া ইতিহাস।