অথচ এই মাহমুদউল্লাহ ছিলেন বাতিলের খাতায়!
বাংলাদেশ ক্রিকেটের নিভৃতচারী এক সৈনিক মাহমুদউল্লাহ। সৈনিক বলা চলে? খুব চলে! ক্রিকেট তো যুদ্ধক্ষেত্রই। সেখানে মাহমুদউল্লাহ সেনানায়ক হতে চাননি কখনোই। তিনি সৈনিক হিসেবেই কঠোর পরিশ্রম করে গেছেন। যখন প্রয়োজন হয়েছে তাকে রাখা হয়েছে ময়দানে, যখন অন্য কাউকে দরকার, তাকে ছুড়ে ফেলা হয়েছে।
মাহমুদউল্লাহ কখনোই জবাবের স্বভাবে বিশ্বাসী ছিলেন না। তিনি নিরবে, অভিমানে কিংবা নিভৃতে নিজেকে নিয়ে লড়াই চালিয়ে গেছেন। যতবার ফিরেছেন, ততবার কথা বলেছে তার ব্যাট অথবা বল। অথচ, এই মাহমুদউল্লাই ছিলেন বাতিলের খাতায়।
বাংলাদেশ ক্রিকেটের অভ্যন্তরীণ পরিবেশ সম্পর্কে এখন আর কারও অজানা নয়। কথিত পাণ্ডবের দলের দুজন এত বছর পর এসেও অর্বাচীনের মতো প্রাচীন ঘ্যানঘ্যানানি, কাদা ছোড়াছুড়িতে ব্যস্ত। একজন আনফিট, তবু মাঠে। আরেকজন আছেন, তিনিও মাহমুদউল্লাহর মতো অনেকটাই নিভৃতচারী। তবু মাঝেমধ্যে শিরোনামে আসেন। সেখানে পুরো ব্যতিক্রম মাহমুদউল্লাহ। শিরোনাম নেই, শিরোমণিও নন। তা নিয়ে তার মাথাব্যথাও নেই।
গত ওয়ানডে বিশ্বকাপে কী করেছেন তিনি, সেটি আর নতুন করে বলতে হবে না। বছরজুড়ে তাকে বাদ দেওয়ার যে পাঁয়তারা চলেছিল, উপেক্ষার জবাব ব্যাটেই দিয়েছেন। ওয়ানডের পর সাদা বলের আরেক সংস্করণ আছে— টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট। সেই সংস্করণে সর্বশেষ লাল-সবুজ জার্সি গায়ে চাপান ২০২২ এর ১ সেপ্টেম্বর। তারপর প্রায় দেড় বছর হতে চলল। দলে নেই তিনি। মাহমুদউল্লাহ বরাবরের মতোই নিশ্চুপ। অপেক্ষায় ছিলেন নিজেকে প্রমাণের।
চলতি বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) তাকে প্ল্যাটফর্মটা দিল। তিনি কাজে লাগাচ্ছেন। ৩৮ বছর বয়সে এসেও দেখাচ্ছেন টি-টোয়েন্টিটা কীভাবে খেলতে হয়। সর্বশেষ ম্যাচে সিলেট স্ট্রাইকার্সের বিপক্ষে ২৪ বলে অপরাজিত ৫১ রানের ইনিংসটি তাক লাগিয়েছে সবাইকে। এর বাইরে খুলনার বিপক্ষে এক ম্যাচে ১৯ বলে ২৭, রংপুরের সঙ্গে ১১ বলে অপরাজিত ১৯ রানের ইনিংসগুলো সময়ের চাহিদা মিটিয়েছে। বিপিএলে তার স্ট্রাইক রেট ১৬৫-র ওপরে।
মাহমুদউল্লাহ আবারও তাকে নিয়ে সবাইকে ভাবতে বাধ্য করেছেন। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) চোখও এখন তার দিকে। আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তাকে সুযোগ দেওয়ার বিষয়ে বিসিবি অনেকটাই ইতিবাচক। বিশ্বকাপের অবশ্য আরও প্রায় পাঁচ মাস বাকি। নামটা মাহমুদউল্লাহ বলে শঙ্কা থাকে, কখন যে কী হয়ে যায়। সমান্তরালে আশাও থাকে— কারণ তিনি মাহমুদউল্লাহ, যিনি ফিরতে ভালোবাসেন। নিরবে জবাব দিতে তার চাইতে কেইবা বেশি পেরেছে? এমনি এমনি তো আর নাম তার সাইলেন্ট কিলার হয়নি!