বাংলাদেশকে হারিয়ে সিরিজে সমতা ফেরাল শ্রীলঙ্কা
শুরুটা দুর্দান্ত ছিল বাংলাদেশের—যেমন ব্যাটিং, তেমন বোলিংয়েও। শুরুর বোলিং ঝড়ে তিন-তিনটি উইকেট খোয়াতে হয় লঙ্কানদের। ম্যাচ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে চলে আসে স্বাগতিকদের। তবে, মাঝপথে খেই হারায় বাংলাদেশ। ম্যাচের মোমেন্টাম নিজেদের দিকে টেনে নেয় সফররতরা। শেষের দিকে বাংলাদেশের বোলাররা জ্বলে উঠতে চেষ্টা করলেও সফল হননি। তিন উইকেটে মানেন হার। ফলে ১-১ সমতায় ফিরল সিরিজ।
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে টস হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে ৫০ ওভারে সাত উইকেটে ২৮৬ রান করে বাংলাদেশ। জবাবে ৪৭.১ ওভারে সাত উইকেট হারিয়ে ২৮৭ রান তোলে শ্রীলঙ্কা।
রান তাড়ায় প্রথম ওভারের দ্বিতীয় বলে উইকেট হারায় লঙ্কানরা। বাংলাদেশকে প্রথম উইকেট এনে দেন শরিফুল ইসলাম। সৌম্য সরকারের হাতে ক্যাচ দিয়ে মুখোমুখি হওয়া প্রথম বলে রানের খাতা খোলার আগেই সাজঘরে ফেরেন ফার্নান্দো। ইনিংসের ষষ্ঠ ওভারে বোলিং করতে আসা তাসকিন আহমেদ নিজের প্রথম বলেই ফেরান কুশল মেন্ডিসকে। যিনি আউট হওয়ার আগে খেলছিলেন আগ্রাসী ঢংয়ে। পাঁচ ওভার শেষ হতে স্কোরবোর্ডে শ্রীলঙ্কার সংগ্রহ দাঁড়ায় ৪২ রান। তাসকিন থামান রানের চাকা। লঙ্কান অধিনায়ক কুশলকে উইকেটের পেছনে মুশফিকুর রহিমের ক্যাচ বানিয়ে ফেরান তিনি। ১৩ বলে ১৬ রান আসে কুশলের ব্যাট থেকে। পরের ওভারেই এক রান করা সাদিরা সামারাবিক্রমাকে ফিরিয়ে লঙ্কানদের চাপে ফেলেন শরিফুল ইসলাম। ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে তার ক্যাচ নেন মেহেদী হাসান মিরাজ। ৪২ রান তুলতেই তিন উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে সফররত দল।
খাদের কিনারা থেকে দলকে টেনে তোলেন পাথুম নিশাঙ্কা ও চারিথ আসালাঙ্কা। চতুর্থ উইকেটে নিশাঙ্কা ও আসালাঙ্কা মিলে গড়েন ১৮৫ রানের জুটি। মূলত, এই দুজনই ম্যাচ থেকে ছিটকে দেয় বাংলাদেশকে। দলীয় ২২৮ রানে সাজঘরে ফেরেন ওপেনিংয়ে নামা নিশাঙ্কা। ততক্ষণে তার নামের পাশে সেঞ্চুরি। ১১৩ বলে ১১৪ রানের অনবদ্য এক ইনিংস উপহার দিয়ে মেহেদী হাসান মিরাজের বলে লিটন দাসের হাতে ক্যাচ দেন লঙ্কান ওপেনার।
আসালাঙ্কাও গিয়েছিলেন সেঞ্চুরির কাছাকাছি। কাটা পড়েন নার্ভিাস নাইন্টিতে। ৯৩ বলে ৯১ রান আসে তার ব্যাট থেকে। মুশফিকের ক্যাচ বানিয়ে তাকে ফেরান তাসকিন। দুই ব্যাটারের গড়ে দেওয়া মজবুত ভিতে ভর দিয়ে বাকিটা পথ পার করে লঙ্কান লোয়ার অর্ডার। শেষ দিকে ওয়ানিন্দু হাসারাঙার ১৬ বলে ২৫ রানের ক্যামিওতে ১৭ বল বাকি থাকতেই তুলে নেয় সহজ জয়।
বাংলাদেশের পক্ষে শরিফুল ও তাসকিন নিয়েছেন দুটি করে উইকেট। একটি করে উইকেট পান মিরাজ, তাইজুল ও তানজিম সাকিব।
আগে ব্যাটিং করতে নেমে আজও বাংলাদেশের শুরুটা হয়েছে ছন্নছাড়া। টানা দ্বিতীয় ম্যাচে রানের খাতা খোলার আগেই সাজঘরে ফেরেন লিটন দাস। দিলশান মাদুশাঙ্কার বলে দুনিথ ভেল্লালাগের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন লিটন। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে শান্ত ও সৌম্য মিলে সামাল দেন পরিস্থিতি। এই জুটিতে আসে ৭৫ রান। তখনই আঘাত হানেন লঙ্কান বোলার দিলশান মাদুশাঙ্কা। উইকেটের পেছনে কুশল মেন্ডিসের হাতে ধরা পড়ার আগে শান্ত করেন ৩৯ বলে ৪০ রান।
শান্ত ফিরে গেলেও হৃদয়কে নিয়ে আরেকটি জুটি গড়েন সৌম্য। দুজন মিলে ৫৫ রান যোগ করেন স্কোরবোর্ডে। এর মধ্যে ওয়ানডেতে নিজের ১২তম অর্ধশতক তুলে নেন সৌম্য। শেষ পর্যন্ত ১১ চার ও একটি ছক্কায় ৬৬ বলে ৬৮ রানে থামে তার ইনিংস। ওয়ানিন্দু হাসারাঙার বলে মাদুশাঙ্কার ক্যাচে পরিণত হন সৌম্য। এই ম্যাচে দেশের হয়ে অনন্য এক রেকর্ড গড়েন সৌম্য। বাংলাদেশের জার্সিতে ওয়ানডেতে সবচেয়ে কম ম্যাচে দুই হাজার রান এখন তার।
আগের ম্যাচে দলের জয়ের অন্যতম দুই নায়ক মাহমুদউল্লাহ ও মুশফিকুর রহিম এদিন ব্যর্থ হন। শূন্য রানে আউট হন মাহমুদউল্লাহ, মুশফিকের ব্যাট থেকে অবশ্য ২৫ রান আাসে। স্কোরবোর্ডে রান ২০০ জমা হওয়ার আগেই ছয় উইকেট হারায় বাংলাদেশ। মেহেদী হাসান মিরাজও ১২ রান করে ফিরে গেলে শঙ্কা জাগে অল্পতে অলআউট হওয়ার। তবে, নিজের ওয়ানডে ক্যারিয়ারের সপ্তম হাফসেঞ্চুরি তুলে বাংলাদেশকে কক্ষপথে রাখেন হৃদয়। লোয়ার অর্ডারকে নিয়ে একটু একটু করে বাড়ান রানের গতি।
হৃদয়ের ব্যাট থেকে আসে ১০২ বলে ৯৬ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস। তার অপরাজিত ইনিংসটি সাজানো ছিল তিনটি চার ও পাঁচটি ছক্কায়। একটি বল বেশি পেলে হয়তো সেঞ্চুরিটা হয়ে যেত হৃদয়ের। শেষ দুই বলে দুটো ছক্কা হাঁকালেও শতক থেকে চার রান দূরে থামেন তিনি। ১০ বলে ১৮ রানে ক্যামিও ইনিংস খেলে অপরাজিত থাকেন তাসকিন আহমেদ।
শ্রীলঙ্কার পক্ষে চার উইকেট শিকার করেন হাসারাঙা। দুই উইকেট পান মাদুশাঙ্কা, প্রমোদ নেন একটি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ : ৫০ ওভারে ২৮৬/৭ (লিটন ০, সৌম্য ৬৮, শান্ত ৪০, মাহমুদউল্লাহ ০, মুশফিক ২৫, মিরাজ ১২, হৃদয় ৯৬*, সাকিব ১৮, তাসকিন ১৮* ; মাদুশাঙ্কা ৬.৪-১-৩০-২, প্রমোদ ৯-০-৭২-১, কুমারা ৮-০-৫০-০, লিয়ানাগে ৪.২-০-৩০-০, আসালাঙ্কা ২-০-১০-০, ভেল্লালাগে ১০-০-৪৭-০, হাসারাঙা ১০-১-৪৫-৪)
শ্রীলঙ্কা : ৪৭.১ ওভারে ২৮৭/৭ (নিশাঙ্কা ১১৪, ফার্নান্দো ০, কুশল ১৬, সাদিরা ১, আসালাঙ্কা ৯১, লিয়ানাগে ৯, ভেল্লালাগে ১৫*, হাসারাঙা ২৫, প্রমোদ ০* ; শরিফুল ৯-০-৪৯-২ , সাকিব ১০-০-৬৫-১, তাসকিন ৯-০-৪৯-২, মিরাজ ১০-০-৫৮-১, তাইজুল ৫-০-৪৩-১, সৌম্য ৪-০-২১-০, শান্ত ০.১-০-২-০)
ফল : শ্রীলঙ্কা তিন উইকেটে জয়ী।