টি-টোয়েন্টি সিরিজ হারের প্রতিশোধ ওয়ানডেতে নিল বাংলাদেশ
মুশফিকুর রহিম চেয়েছিলেন রিশাদ হোসেন অর্ধশতক করুক। সেটি হয়নি। মুশফিকের ব্যাটের কানায় লেগে বল চলে যায় সীমানার ওপারে। জয়সূচক চার আসে তার ব্যাট থেকে। তাতে আক্ষেপ নেই। আনন্দ আছে। ম্যাচ জয়ের, সিরিজ জয়ের। তার আগে রিশাদ এলেন, একটু দেখলেন, চড়াও হলেন লঙ্কান বোলারদের ওপর। বাংলাদেশের জয় নিয়ে শঙ্কার সামান্য যতটুকু মেঘ ছিল, সেটি উড়িয়ে দিয়েছেন রিশাদ। ৫৮ বল ও চার উইকেট হাতে রেখে জয়ের স্বাদ আস্বাদন করে বাংলাদেশ।
সম্প্রতি বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা সিরিজে যে উত্তাপ ছড়ায়, তাকে অগ্রাহ্য করার সাধ্য ক্রিকেটপ্রেমীদের নেই। দুদলের ক্রিকেটারদের মধ্যেও থাকে লড়াইয়ের আমেজ। বিনা যুদ্ধে কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ। তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের প্রথম দুটি শেষে ফলাফল ১-১। শেষটা পরিণত হয় সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে। জিতলে সিরিজ নিশ্চিত, এমন সমীকরণে মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা। সেখানে লঙ্কানদের কাঁদিয়ে ম্যাচ ও সিরিজ, দুটিই নিজেদের করে নেয় স্বাগতিকরা।
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে আজ সোমবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) টস জিতে আগে ব্যাটিংয়ে নামে শ্রীলঙ্কা। ৫০ ওভারে সবকটি উইকেট হারিয়ে ২৩৫ রান তোলে দলটি। জবাবে ৪০.২ ওভারে ছয় উইকেটে ২৩৭ রান তুলে জয়ের বন্দরে নোঙর করে বাংলাদেশ।
আগের দুই ম্যাচে প্রথম ওভারেই উইকেট হারিয়েছিল বাংলাদেশ। তৃতীয় ওয়ানডেতে আজ বাংলাদেশি ওপেনাররা শ্রীলঙ্কান বোলারদের খেলেছেন দেখেশুনে। দুই ওপেনার তানজিদ তামিম ও এনামুল হক বিজয়ের ব্যাটে ওপেনিং জুটি পায় ৫০ রানের সংগ্রহ। লাহিরু কুমারার ফুল লেন্থ বলে আভিস্কা ফার্নান্দোর ক্যাচে পরিণত হন বিজয়। আউট হওয়ার আগে ২২ বলে ১২ রান আসে তার ব্যাট থেকে। খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। কুমারার বলেই উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি। তার ব্যাট থেকে আসে মাত্র এক রান।
হঠাৎ ছন্দপতন বাংলাদেশ শিবিরে। শতরান পেরিয়ে একটু একটু করে এগোচ্ছিল দলটি। শতকের পর খানিকটা খোলসে আবদ্ধ হয়ে পড়ে স্বাগতিকরা। আট রানের মধ্যে হারায় দুই উইকেট। তাওহিদ হৃদয় ও মাহমুদউল্লাহর উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে। ৩৬ বলে ২২ রান করে লাহিরু কুমারার বলে প্রমোদ মাদুশানের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন হৃদয়। এক রানে মাহমুদউল্লাহকেও ফেরান কুমারা, পরিণত করেন কুশলের ক্যাচে।
তামিম ও মেহেদী হাসান মিরাজ মিলে বিপদ সামাল দেন। তবে, মিরাজ-তামিম দুজনই ফিরে যান সাজঘরে। ক্যারিয়ারের প্রথম শতকের আশা জাগিয়ে ৮৪ রানে থামেনি তামিম। ৮১ বলে নয়টি চার ও চারটি ছক্কায় ৮৪ রানের ঝলমলে ইনিংসটি তার ক্যারিয়ারসেরা। তাকে থামান ওয়ানিন্দু হাসারাঙা। ৪০ বলে ২৫ রান করা মিরাজও পরিণত হন হাসারাঙার শিকারে।
শেষ দিকে হাল ধরেন মুশফিকুর রহিম। তাকে সঙ্গ দেন রিশাদ হোসেন। রিশাদকে কেন আগামীর তারকা ভাবা হচ্ছে, প্রতিভার ঝলক দেখালেন আজও। নেমেই টানা চার ও ছক্কায় লঙ্কান বোলারদের আত্মবিশ্বাস নাড়িয়ে দেন। সেখান থেকে মুশফিকের স্ট্রাইক রোটেট করা ব্যাটিং এবং রিশাদের দুঃসাহসী ব্যাটিং বাংলাদেশ অনায়াসে পৌঁছায় জয়ের বন্দরে। মুশফিক অপরাজিত থাকেন ৩৬ বলে ৩৭ রানে। রিশাদের ব্যাট থেকে আসে ১৮ বলে অপরাজিত ৪৮ রানের টর্নেডো ইনিংস। যা সাজানো ছিল পাঁচটি চার ও চারটি ছক্কায়। লঙ্কানদের পক্ষে কুমারা একাই চার উইকেট নেন। হাসারাঙা পান দুটি। যদিও, সেসবে কেবল বাংলাদেশের জয়ের পথ দীর্ঘায়িত হয়েছিল।
এর আগে ব্যাটিংয়ে শুরুটা ভালো হয়নি লঙ্কানদের। দ্বিতীয় ওভারেই তাসকিনের বলে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়ে বিদায় নেন ওপেনার পাথুম নিশাঙ্কা। গত ম্যাচে দারুণ এক সেঞ্চুরি হাঁকালেও এই ম্যাচে তার ব্যাট থেকে আসে আট বলে মাত্র এক রান। যদিও পরে টিভি রিপ্লেতে দেখা যায় রিভিউ নিলে বেঁচে যেতেন নিশাঙ্কা।
নিশাঙ্কার পর আরেক ওপেনার আভিস্কা ফার্নান্দোও নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি। দলীয় ১৫ রানের মাথায় তাসকিনের দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হন এই ব্যাটার। তাসকিনের করা গুড লেন্থ ডেলিভারিতে উইকেটের পেছনে মুশফিকের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি। ছয় বলে চার রান আসে তার ব্যাট থেকে।
দ্রুত দুই উইকেট হারানোর ধাক্কা সাদিরা সামারাবিক্রমা ও কুশল মেন্ডিসের ব্যাটে সামাল দেওয়ার চেষ্টা করে লঙ্কানরা। এই জুটি আশা দেখালেও তা খুব একটা বড় হয়নি। দলীয় ৪৫ রানের মাথায় দুই ম্যাচ পর একাদশে সুযোগ পাওয়া মুস্তাফিজুর রহমানের বলে মুশফিকের হাতে ক্যাচ তুলে ফেরেন সাদিরা। ১৫ বলে ১৪ রান আসে এই তার ব্যাট থেকে।
এরপর চারিথ আসালাঙ্কাকে নিয়ে দলকে এগিয়ে নেন মেন্ডিস। এবারও জুটি বড় করতে ব্যর্থ লঙ্কানরা। দলীয় ৭৪ রানের মাথায় রিশাদের বলে ফেরেন ম্যান্ডিস। ৫১ বলে ২৯ রান করেন ডানহাতি এই ব্যাটার। এরপর জেনিথ লিয়ানাগেকে নিয়ে চাপ সামাল দেন আসলাঙ্কা। তবে, তিনিও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। দলীয় ১১৭ রানের মাথায় মুস্তাফিজের ব্যাক অফ লেন্থ ডেলিভারিতে কাট করতে গিয়ে মুশফিকের হাতে ধরা পড়েন আসালাঙ্কা। ৪৬ বলে ৩৭ রান আসে তার ব্যাট থেকে।
দুনিথ ভেল্লালাগে ও ওয়ানিন্দু হাসারাঙাকে ফিরিয়ে দলটিকে সর্বশেষ ধাক্কা দেন মেহেদী হাসান মিরাজ। ভেল্লালাগেকে সৌম্য সরকারের ক্যাচে পরিণত করেন মিরাজ। আউট হওয়ার আগে ১৮ বল খেলে মাত্র এক রান করেন ভেল্লালাগে। আট বলে ১১ রান করে বিপজ্জনক হওয়ার আভাস দেওয়া হাসারাঙাকে বোল্ড করেন মিরাজ।
শেষ দিকে লঙ্কানদের পক্ষে একা লড়াই চালিয়ে যান লিয়ানাগে। তুলে নেন ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম শতক। শেষ পর্যন্ত ১০২ বলে ১১ চার ও দুই ছক্কায় ১০১ রানে অপরাজিত থাকেন লিয়ানাগে। শ্রীলঙ্কাকে এনে দেন লড়াইয়ের পুঁজি।
বাংলাদেশের পক্ষে তিন উইকেট নেন তাসকিন।মুস্তাফিজ ও মিরাজ পান দুটি করে উইকেট।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
শ্রীলঙ্কা : ৫০ ওভারে ২৩৫/১০ (নিশাঙ্কা ১, ফার্নান্দো ৪, কুশল ২৯, সাদিরা ১৪, আসালাঙ্কা ৩৭, লিয়ানাগে ১০১* , ভেল্লালাগে ১, হাসারাঙা ১১, থিকসানা ১৫, প্রমোদ ৩, কুমারা ১; শরিফুল ১০-০-৫৫-০, তাসকিন ১০-১-৪২-৩ , মুস্তাফিজ ৯-১-৩৯-২, সৌম্য ২-০-১০-১, মিরাজ ১০-১-৩৮-২, রিশাদ ৯-০-৫১-১)
বাংলাদেশ : ৪০.২ ওভারে ২৩৭/৬ (বিজয় ১২, তানজিদ ৮৪, শান্ত ১, তাওহিদ ২২, মাহমুদউল্লাহ ১, মুশফিক ৩৭*, মিরাজ ২৫, রিশাদ ৪৮*; থিকসানা ৯-১-৩১-০, মাদুশান ৭-০-৫২-০, কুমারা ৮-০-৪৮-৪, হাসারাঙ্গা ৯-০-৬৪-২, ভেল্লালাগে ৬.২-০-৩৫-০, আসালাঙ্কা ১-০-৮-০)
ফল : বাংলাদেশ চার উইকেটে জয়ী।