দাপুটে জয়ে সিরিজ শুরু বাংলাদেশের
বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের সময় দুবার হানা দেয় বৃষ্টি। দুই দফায় প্রায় এক ঘণ্টা বন্ধ থাকে ম্যাচ। তবে, কমানো হয়নি ম্যাচের পরিসর। স্বাগতিক বাংলাদেশের জন্য সেটি সমস্যা তৈরি করতে পারেনি। চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে আজ শুক্রবার (৩ মে) জিম্বাবুয়েকে আট উইকেটের বড় ব্যবধানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। পাঁচ ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথমটিতে জিতে ১-০তে এগিয়ে গেলেন শান্ত-মাহমুদউল্লাহরা।
টসে হেরে আগে ব্যাট করতে নামা জিম্বাবুয়ে ২০ ওভারে সবকটি উইকেট হারিয়ে করে ১২৪ রান। জবাবে ১৫.২ ওভারে মাত্র দুই উইকেট হারিয়ে ১২৬ রান তোলে বাংলাদেশ। ২৮ বল হাতে রেখেই পৌঁছে যায় জয়ের গন্তব্যে।
রান তাড়ায় বাংলাদেশের শুরুটা অবশ্য ভালো হয়নি। দ্বিতীয় ওভারেই ব্লেসিং মুজারাবানির বলে বোল্ড হন এক রান করা লিটন দাস। দ্বিতীয় উইকেটে অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত ও তানজিদ তামিম মিলে ৫২ রানের জুটি গড়েন। দলীয় ৫৭ রানে লুক জংউইর বলে শন উইলিয়ামসের তালুবন্দী হয়ে ফিরে যান শান্ত। তার ব্যাট থেকে আসে ২৪ বলে ২১ রান।
দুই উইকেট হারানোর পর আর বিপদ আসতে দেননি বাংলাদেশের ব্যাটাররা। তামিম ও তাওহিদ হৃদয়ের ৩৬ বলে অবিচ্ছিন্ন ৬৯ রানের জুটিতে বাংলাদেশ পায় জয়ের দেখা। তামিমের ব্যাট থেকে আসে ৪৭ বলে আটটি চার ও দুটি ছক্কায় অপরাজিত ৬৭ রান। অভিষেকেই অর্ধশতক তুলে তামিম স্মরণীয় অবদান রাখেন বাংলাদেশের জয়ে। হৃদয়ের ব্যাট থেকে আসে ১৮ বলে পাঁচটি চার ও এক ছক্কায় অপরাজিত ৩৩ রান।
এর আগে টস জিতে সফররতদের ব্যাটিংয়ে পাঠান বাংলাদেশ অধিনায়ক শান্ত। অধিনায়ককে দ্বিতীয় ওভারেই সাফল্য এনে দেন শেখ মেহেদি। শূন্য রানে জিম্বাবুয়ে ওপেনার ক্রেইগ আরভিনকে বোল্ড করেন তিনি। দ্বিতীয় উইকেটে ম্যাচ ধরার চেষ্টা করেন অপর ওপেনার জয়লর্ড গাম্বি ও ব্রায়ান বেনেট মিলে। তবে, ৩৬ থেকে ৪১—পাঁচ রানের মধ্যে ছয় উইকেট হারিয়ে ছিটকে পড়ে জিম্বাবুয়ে।
শুরুটা হয় গাম্বিকে দিয়ে। তাসকিন আহমেদের ক্যাচ বানিয়ে তাকে ফেরান দেড় বছর পর দলে সুযোগ পাওয়া সাইফউদ্দিন। ১৪ বলে ১৭ রান করেন গাম্বি। ৩৬ রানেই আরও দুই উইকেট হারায় জিম্বাবুয়ে। ১৫ বলে ১৬ করে রানআউট হন বেনেট। প্রতিপক্ষ অধিনায়ক সিকান্দার রাজাকে প্রথম স্লিপে লিটন দাসের ক্যাচ বানান মেহেদি। গোল্ডেন ডাকের লজ্জা নিয়ে সাজঘরের পথ ধরেন রাজা।
গোল্ডেন ডাকে বিদায় নেন জিম্বাবুয়ের আরেক অভিজ্ঞ ব্যাটার শন উইলিয়ামস। তাকে বোল্ড করেন তাসকিন। রিশাদ হোসেনের ক্যাচ বানিয়ে রায়ান বার্লকেও গোল্ডেন ডাকের লজ্জা দেন তাসকিন। এতে তাসের ঘরের মতো ভেঙে পরে তাদের ব্যাটিং স্তম্ভ। লুক জঙ্গুয়েকে দারুণ একটি ক্যাচে ফেরান তাওহিদ হৃদয়। সাইফউদ্দিনের শর্ট ডেলিভারিতে মিডঅনে মারতে গিয়েছিলেন ২ রান করা লুক। সেখানে চমৎকারভাবে ক্যাচ লুফে নেন হৃদয়।
৪১ রানে সাত উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে থাকা জিম্বাবুয়ে বেশ ভালো প্রতিরোধই গড়তে পেরেছে। যেখানে চোখরাঙানি দিচ্ছিল ৫০ রানে অলআউট হওয়ার লজ্জা, সেখান থেকে দলীয় সংগ্রহ ১০০ পার করে দলটি। নিয়ে যায় আরও বেশ খানিকটা দূরে। অষ্টম উইকেটে ক্লাইভ মাদান্দে ও ওয়েলিংটন মাসাকাদজা মিলে গড়েন ৭৫ রানের জুটি। ধীরেসুস্থে ইনিংস মেরামত করে শেষ দিকে দুজনই খেলেন হাত খুলে। জুটি ভাঙেন তাসকিন। দুর্দান্ত এক ইয়র্কারে ৩৯ বলে ৪৩ রান করা মাদান্দেকে ফেরান তাসকিন। ৩৮ বলে ৩৪ রান করে রানআউট হন মাসাকাদজা।
বল হাতে সাইফউদ্দিনের প্রত্যাবর্তনটা হয়েছে দারুণ। চার ওভারে ১৫ রানে তিন উইকেট পান তিন। চার ওভারে ১৪ রানে তিন উইকেট নেন তাসকিন। চার ওভারে চার ওভারে এক মেডেনসহ ১৬ রান দিয়ে দুই উইকেট পান মেহেদি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
জিম্বাবুয়ে : ২০ ওভারে ১২৪/১০ (জয়লর্ড ১৭, আরভিন ০, বেনেট ১৬, উইলিয়ামস ০, রাজা ০, ক্লাইভ ৪৩, বার্ল ০, জঙ্গুয়ে ২, মাসাকাদজা ৩৩, মুজারাবানি ১, এনগারাভা ২; শরিফুল ৪-০-৩৭-০, মেহেদি ৪-১-১৬-২, তাসকিন ৪-০-১৪-৩, সাইফউদ্দিন ৪-০-১৫-৩, রিশাদ ৪-০-৩৭-০)।
বাংলাদেশ : ১৫.২ ওভারে ১২৬/২ (লিটন ১, তামিম ৬৭*, শান্ত ২১, হৃদয় ৩৩*; এনগারাভা ৪-০-২৪-০, মুজারাবানি ৪-০-৩১-১, রাজা, ৪-০-৩১-০, বেনেট ১-০-১০-০, জংউই ১.২-১৪-১, এনডোভু ১-০-১৫-০)
ফল : বাংলাদেশ আট উইকেটে জয়ী।