যুক্তরাষ্ট্রের কাছে হারের লজ্জায় ডুবল বাংলাদেশ
ব্যাটিংটা মোটেই স্বস্তি দায়ক নয়। ক্রিকেটের অচেনা যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে টেনেটুনে বাংলাদেশ পুঁজি নেয় দেড়শর ঘরে। প্রত্যাশা ছিল, হয়ত বোলিং দিয়ে ব্যাটারদের হতাশা মাড়াবে লাল-সবুজের দল। কিন্তু, সেই আশায় গুড়ে বালি। উল্টো মুস্তাফিজদের সামনে একচেটিয়া দাপট দেখাল স্বাগতিকরা। ব্যাটিং-বোলিংয়ের হতাশায় যুক্তরাষ্ট্রের কাছে হারের লজ্জায় ডুবল নাজমুল হোসেন শান্তর দল।
তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশকে ৫ উইকেটে হারিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এই জয়ে সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল স্বাগতিকরা।
টেক্সাসের গ্র্যান্ড প্রিয়ারে স্টেডিয়ামে ম্যাচটিতে আগে ব্যাট করতে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৬ উইকেটে স্কোরবোর্ডে ১৫৩ রান তুলেছে বাংলাদেশ। জবাব দিতে নেমে নির্ধারিত ওভারের তিন বল হাতে রেখেই ১৫৬ রান করে জয় তুলে নেয় যুক্তরাষ্ট্র।
রান তাড়ায় শুরু থেকেই সাবলীল ছিল স্বাগতিকরা। যেই বাংলাদেশের বোলিং নিয়ে ছিল আত্মবিশ্বাস সেটাই গুঁড়িয়ে দেয় যুক্তরাষ্ট্র। দেখে শুনে শুরু করেন দুই ওপেনার টেইলর ও প্যাটেল। তবে চতুর্থ ওভারে রান আউটের কাটায় পড়ে প্যাটেল বিদায় নিলে ভাঙে এই জুটি। তিনি করেন ১২ রান, ২৭ রানে ভাঙে ওপেনিং জুটি।
তিনে নেমে লড়াইয়ের আভাস দেন অ্যান্ড্রিস । তাকে থামিয়ে বাংলাদেশকে স্বস্তি দেন রিশাদ হাসান। এরপর দলীয় ৭৫ রানে ভাঙে ওপেনারের টেইলরের প্রতিরোধ। মুস্তাফিজের অফ কাটারে মিড অফে মাহমুদউল্লাহর হাতে ক্যাচ দিয়ে ২৮ রানে ফেরেন স্বাগতিক ওপেনার।
৭৫ রানে তিন উইকেট হারানোর পর ব্যাটিংয়ে বুক চিতিয়ে লড়াইয়ের আভাস দেয় যুক্তরাষ্ট্র। টপ অর্ডার থেকে লোয়ার অর্ডার—ছোট ছোট ইনিংসে সবাই চেষ্টা করেন ভূমিকা রাখতে। নেন বাংলাদেশি বোলারদের পরীক্ষা। শেষ দিকে হারমিত সিং এসে লিখেন জয়ের গল্প। তার ব্যাটিং ঝড়ে তিন বল হাতে রেখেই জয়ের বন্দরে নোঙর ফেলে আমেরিকা। ২৫৩ এর বেশি স্ট্রাইক রেটে ১৩ বলে ৩৩ রান করেন হারমিত সিং।
এদিন টস জিতে বোলিং বেছে নেয় যুক্তরাষ্ট্র। আগে ব্যাটিংয়ে নামা বাংলাদেশের হয়ে ওপেন করতে নেমে বরাবরের মতোই হতাশ করেন লিটন দাস। দুই ম্যাচ পর দলে ফেরা লিটন আলি খানের বলে দ্বিতীয় ওভারেই জীবন পান। শুধু তাই নয়, একবার বেঁচে যান রান আউট থেকেও।
কিন্তু, দুবার জীবন পাওয়ার সুযোগ কাজে লাগাতে পারলেন না মোটেও। জসদ্বিপ সিংয়ের এলবির ফাঁদে পড়ে ১৫ বলে ১৪ রান করে ফেরেন এই ডানহাতি ব্যাটার।
আরেক ওপেনার সৌম্য ব্যাটিংয়ে নেমে বেশ সাহসী শটে দেখান আশার আলো। কিন্তু কিছুদূর না যেতে সেই আলোও নিভে যায়। পাওয়ার প্লে’র শেষ ওভারে স্টিভেন টেইলর বোলিংয়ে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে মিড উইকেটে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন সৌম্য। ১৩ বলে ২০ রানে থামে তার ইনিংস।
অধিনায়ক শান্তর অবস্থা আরও নাজুক। একে একে ১১ বল খেললেন তিনি। না করতে পারলেন রান, না পারলেন থিতু হতে। দলকে বিপদে ফেলে মাত্র ৩ রানে ফেরেন অধিনায়ক।
৫১ রানে তিন উইকেট হারানোর পর বাংলাদেশ দল যখন বিপদে তখন আরো হতাশা বাড়ান সাকিব আল হাসান। পাঁচে নেমে রান আউট হয়ে ফেরেন তিনি। ১২ বলে ৬ রানের বেশি করতে পারলেন না বাঁহাতি অলরাউন্ডার।
একের পর এক বিদায়ের মাঝে রানের চাকা ঘুরিয়েছেন তাওহিদ। সতীর্থদের আসা-যাওয়ার মিছিলে তিনিই জ্বলেছেন আশার প্রদীপ হয়ে। মাঝে ৩১ রানের ইনিংস খেলে কিছুটা সঙ্গ দিয়েছেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। তবে, তাওহিদের ব্যাটেই কোনো মতে লড়াইয়ের পুঁজি পায় বাংলাদেশ। শেষ পর্যন্ত উইকেটে থেকে ৪৭ বলে ৫৮ রানের ইনিংস খেলেছেন তিনি। যা সাজানো ছিল চারটি বাউন্ডারি আর দুই ছক্কায়। আর শেষ দিকে নেমে ৫ বলে ৯ রান যোগ করেছেন জাকের আলি অনিক।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১৫৩/৬ (লিটন ১৪, সৌম্য ২০, শান্ত ৩, হৃদয় ৫৮, সাকিব ৬, মাহমুদউল্লাহ ৩১, জাকের ৯*; নেত্রাভাল্কার ৪-০-২৭-১, আলি ৪-০-৪৯-১, জেসি ৩-১-৩০-১, টেলর ৩-০-৯-২, অ্যান্ডারসন ২-০-১০-০, হারমিত ৪-০-২৭-০)।
যুক্তরাষ্ট্র: ১৯.৩ ওভারে ১৫৬/৫ (টেইলর ২৮, মোনাঙ্ক ১২, গাউস ২৩, জোন্স ৪, নিতিশ ১০, অ্যান্ডারসন ৩৪*, হারমিত ৩৩*; মাহমুদউল্লাহ ২.৩-০-২০-০, শরিফুল ৪-০-৩১-১, মেহেদি ৪-০-২৭-০, সাকিব ৩-০-১৬-০, মুস্তাফিজ ৪-০-৪১-২, রিশাদ ২-০-১৬-১)।
ফল: যুক্তরাষ্ট্র ৫ উইকেটে জয়ী।
ম্যান অব দা ম্যাচ: হারমিত সিং।