টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ৯ ভেন্যুর খুঁটিনাটি
আর মাত্র সাত দিন বাকি, এরপর বেজে উঠবে দামামা, শুরু হবে লড়াই। যুক্তরাষ্ট্র ও ওয়েস্ট ইন্ডিজে শুরু হবে ২০ দেশের ক্রিকেট মহারণ। ৯টি রণাঙ্গনে হবে এই লড়াই। বিশ্বকাপের আগে জেনে নেওয়া যাক সেই ৯টি রণাঙ্গন সম্পর্কে-
গ্র্যান্ড প্রেইরি স্টেডিয়াম, ডালাস
আগে কুইক ট্রিপ পার্ক নামে পরিচিত গ্র্যান্ড প্রেইরি স্টেডিয়ামের ধারণক্ষমতা প্রায় সাত হাজার। এই স্টেডিয়ামের যাত্রা শুরু ২০০৮ সালে, যা যুক্তরাষ্ট্রের রাগবি দল টেক্সাস ইউনাইটেডের হোম ভেন্যু হিসেবে ব্যবহৃত হতো। পরে ২০২০ সালে ইউএসএ ক্রিকেট বোর্ড এই মাঠটিকে নিজেদের করে নেয় এবং প্রায় ২০ মিলিয়ন ডলার খরচ করে এটিকে ক্রিকেট স্টেডিয়ামে রূপান্তরিত করা হয়। এখানে বিশ্বকাপের চারটি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে।
সেন্ট্রাল ব্রোওয়ার্ড পার্ক ও ব্রোওয়ার্ড কাউন্টি স্টেডিয়াম, ফ্লোরিডা
যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম আন্তর্জাতিক ভেন্যুটির যাত্রা শুরু ২০০৭ সালে। প্রায় ৭০ মিলিয়ন ডলার খরচ করে এই স্টেডিয়ামের সংস্কার করা হয়। ২০১৯ সালে এই মাঠেই প্রথম ওয়ানডে সিরিজ জয়ের স্বাদ পায় যুক্তরাষ্ট্র। এই স্টেডিয়ামে প্রায় ২৫ হাজার দর্শক গ্যালারিতে বসে খেলা দেখতে পারবেন। বিশ্বকাপের চারটি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে এই মাঠেই।
নাসাউ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম, নিউইয়র্ক
কদিন আগেই আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন হলো নিউইয়র্কের নাসাউ কাউন্টি ক্রিকেট স্টেডিয়ামের। আগামী ১ জুন বাংলাদেশ-ভারত বিশ্বকাপের প্রস্তুতি ম্যাচ দিয়ে এই স্টেডিয়ামের যাত্রা শুরু হবে। ১০ জুন দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বাংলাদেশের গ্রুপ পর্বের ম্যাচটিও অনুষ্ঠিত হবে নিউইয়র্কের এই মাঠে। গুরুত্বপূর্ণ এই ভেন্যুতে প্রায় ৩৪ হাজার দর্শক খেলা দেখতে পারবেন। আর বিশ্বকাপে এই মাঠে প্রথম ম্যাচটি হবে দক্ষিণ আফ্রিকা-শ্রীলঙ্কার মধ্যে আগামী ৩ জুন। বিশ্বকাপের হাইভোল্টেজ ভারত-পাকিস্তানের ম্যাচটিও ৯ জুন অনুষ্ঠিত হবে এই মাঠেই। ১৬টি ম্যাচের ৮টিই হবে এই নাসাউ কাউন্টি ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামে। গ্রুপ পর্বে ভারতের ৩টি ম্যাচ আছে এই মাঠে। বিপুলসংখ্যক প্রবাসী সমর্থকদের ভাবনায় রেখেই উপমহাদেশের দলগুলোর ম্যাচ বেশি রাখা হয়েছে নিউ ইয়র্কের এই ভেন্যুতে।
স্যার ভিভ রিচার্ডস স্টেডিয়াম, অ্যান্টিগা
স্যার ভিভের দেশেই শুধু নয়, অ্যান্টিগায় তার নামের স্টেডিয়ামেই হবে বিশ্বকাপের আটটি ম্যাচ। ২০০৭ বিশ্বকাপ সামনে রেখে তৈরি করা এই স্টেডিয়ামে এমনিতে দর্শক ধারণ ক্ষমতা ১০ হাজার হলেও ওই টুর্নামেন্টের জন্য সেটি দ্বিগুণ করা হয়েছিল। স্যার ভিভের নামের মাঠটিতেই এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ‘বি’ গ্রুপের চারটি ম্যাচ হবে। বাকি চারটি ম্যাচ হবে সুপার এইট পর্বের। এখন পর্যন্ত স্যার ভিভ রিচার্ডস স্টেডিয়ামে ২৬টি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
প্রোভিডেন্স স্টেডিয়াম, গায়ানা
২০০৭ বিশ্বকাপের সুপার লিগ আয়োজনের জন্য ভারতের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে তৈরি হয়েছিল স্টেডিয়ামটি। বিশ্বকাপের ছয়টি ম্যাচ হয়েছিল প্রোভিডেন্স স্টেডিয়ামে। এখানেই আবারও বিশ্বকাপের ছোঁয়া লাগছে। এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ছয়টি ম্যাচ হবে এই ভেন্যুতে। এমনিতে স্লো টাইপ পিচ থাকে গায়ানার মাঠটিতে। স্পিনাররা সুবিধা পান অনেকটা অনুমিতভাবেই। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ২৯ ম্যাচের মধ্যে ১৩টিতে জিতেছে আগে ব্যাট করা দল। ১২টিতে পরে ব্যাট করে জয় পাওয়া গেছে।
কেনসিংটন ওভাল, ব্রিজটাউন
২০০৭ ওয়ানডে ও ২০১০ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ফাইনালের ভেন্যু ছিল কেনসিংটন। যুক্তরাষ্ট্র ও ওয়েস্ট ইন্ডিজে হতে যাওয়া এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচটিও হবে এই মাঠে। ২৮ হাজার ধারণ ক্ষমতার কেনসিংটন ওভালের যাত্রা শুরু হয় ১৮৭১ সালে। এই মাঠে প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয় ১৮৯৫ সালে। ১৯৩০ সালে অনুষ্ঠিত হয় প্রথম টেস্ট ম্যাচ। সেই থেকে এখনও পর্যন্ত মোট ৪৩টি টেস্ট অনুষ্ঠিত হয়, যার মধ্যে ২১টি ম্যাচ জিতেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। কেনসিংটন ওভালের উইকেট সাধারণত কিছুটা দ্রুতগতির ও বাউন্সি হয়ে থাকে। যদিও ব্যাটাররাই সুবিধা পান বেশি। এখন পর্যন্ত ৪২টি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছে কেনসিংটন ওভালে। এর মধ্যে ২৮টিতেই জিতেছে টস জিতে আগে ব্যাট করা দল।
ব্রায়ান লারা স্টেডিয়াম, ত্রিনিদাদ
ক্যারিবীয় কিংবদন্তি ব্যাটার ব্রায়ান লারার সম্মানে নির্মিত এই স্টেডিয়ামটির যাত্রা শুরু ২০১৭ সালে। এটি স্টেডিয়ামের পাশাপাশি একটি পূর্ণাঙ্গ স্পোর্টস কমপ্লেক্সও। এই স্টেডিয়ামের ধারণক্ষমতা প্রায় ১৫ হাজার। এই মাঠের পিচকে ব্যাটারদের জন্য স্বর্গ মনে করা হয়। এই মাঠে আগে ব্যাট করা দলই বেশি সুবিধা পেয়ে থাকে। এখন পর্যন্ত অনুষ্ঠিত চারটি ম্যাচের তিনটিতেই আগে ব্যাট করা দল জিতেছে। বিশ্বকাপের প্রথম সেমিফাইনালসহ এই মাঠে মোট পাঁচটি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে।
আরনোস ভ্যালে গ্রাউন্ড, কিংসটন
১৯৮১ সালে যাত্রা শুরু করা এই স্টেডিয়ামের ধারণক্ষমতা ১৮ হাজার। এই স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপে নেদারল্যান্ডস ও নেপালের বিপক্ষে ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ। এছাড়াও আরও তিনটি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে এই স্টেডিয়ামে। এই বছরের শেষে বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজের তিনটি ম্যাচও হবে এই স্টেডিয়ামেই। তাই এই ভেন্যুর গুরুত্ব বাংলাদেশের কাছে অনেকটাই বেশি।
ড্যারেন সামি স্টেডিয়াম, সেন্ট লুসিয়া
ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জের অন্যতম সেরা স্টেডিয়াম এটি। ২০০২ সাল থেকে শুরু হয়েছিল এই ক্রিকেট গ্রাউন্ডের যাত্রা। এটাই ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রথম স্টেডিয়াম, যেখানে ওয়ানডে ম্যাচ খেলা হয়েছিল ফ্লাডলাইটে। ২০০৬ সালের সেই ম্যাচে ১৫ হাজার দর্শক ধারণক্ষমতাসম্পন্ন এই স্টেডিয়ামে ওয়েস্ট ইন্ডিজ খেলেছিল জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। বিশ্বকাপে ছয়টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে এই স্টেডিয়ামে।