ছক্কার রেকর্ড ভেঙে কতদূর গেল আইপিএল?
সাদামাটা এক ফাইনাল দেখে দর্শকরা যারপরনাই হতাশ। পুরো আসরে চার-ছক্কার ফুলঝুড়ি দেখার পর ম্যাড়ম্যাড়ে ফাইনাল দেখলে হতাশা গ্রাস করবে। ব্যাপারখানা—সারাবছর মাছ-মাংস দিয়ে আপায়্যানের পর মূল আসরে লবন ছাড়া তরকারি পরিবেশন করার মতো। তবে, টুর্নামেন্টটির যে ঝাঁঝ তা কিন্তু তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলাবেই। আইপিএল ২০২৪ তেমন কিছুই রেখে গেল। গড়ল এক মৌসুমে সর্বোচ্চ ছক্কার রেকর্ড। আগের ১৬ আসর রেকর্ডকে সীমানা ছাড়া করেছেন ব্যাটাররা।
আইপিএলের এক আসরে সর্বোচ্চ ছক্কার রেকর্ড এতদিন ২০২৩ আসরের দখলে ছিল। সেবার ৭৪ ম্যাচে ছক্কা হয়েছিল এক হাজার ১২৪টি, গড়ে ম্যাচপ্রতি ১৫.১৮ করে। ২০২২ এর আসরেও ছক্কার হাজার পূর্ণ করেছিলেন আইপিএলের ব্যাটাররা। সেবারই প্রথম এক আসরে হাজার ছক্কা দেখে দর্শক। সেবার ৭৪ ম্যাচে ব্যাটাররা মেরেছিলেন এক হাজার ৬২টি, গড়ে ম্যাচপ্রতি সংখ্যাটা ১৪.৩৫। এবার সব কিছু ছাপিয়ে গেছে, আসরে ছক্কা হয়েছে এক হাজার ২৬০টি।
আইপিএল ২০২৪ নিজেদের করে নিয়েছে কলকাতা নাইট রাইডার্স। ১০ বছর পর শিরোপা জিতেছে শাহরুখ খানের দল। রানার্সআপ হওয়া সানরাইজার্স হায়দরাবাদের নিজেদের যতটা দুঃখ, ভক্তদেরও বোধহয় কম নেই। তারচেয়ে বড় ব্যাপার, কলকাতা-হায়দরাবাদ ফাইনাল নিশ্চিত হওয়ার পর সবার আকাঙ্খা ছিল ধুন্ধুমার এক ফাইনাল দেখার। সেটি সঙ্গত কারণেই। ২০০ পার করাটা সদ্য শেষ হওয়া আসরে ডালভাত বানিয়ে ফেলেছিল দলগুলো। তবে হায়দরাবাদ যা করেছে গ্রুপপর্বে, তা অবিশ্বাস্য।
হায়দরাবাদের তিনটি ইনিংস ২৮৭, ২৭৭ ও ২৬৬। মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের তিনটি ইনিংস ২৪৭, ২৪৬, ২৩৪। চ্যাম্পিয়ন কলকাতার আছে ২৭২ ও ২৬১ রানের বিশাল দুটি ইনিংস। এ ছাড়া— রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু ও পাঞ্জাব কিংসের ২৬২, দিল্লি ক্যাপিটালসের ২৫৭ রানের সংগ্রহগুলো বোঝায় বোলারদের ওপর দিয়ে কেমন ঝড় বয়ে গেছে। ঝড়ের কথা বলতে গেলে, ফাইনালের আগ পর্যন্ত (আরেকটু বাড়িয়ে প্লে-অফের চার ম্যাচ ধরা যায়) বোলাররা ছিলেন অসহায়। এক হাজার ২৬০টি ছক্কা তো ইতিহাস গড়েছে, চার হয়েছে দুই হাজার ১৭৪টি। এটি অবশ্য যৌথ সর্বোচ্চ। গত আসরেও চার ছিল সমান দুই হাজার ১৭৪টি।
এবারের আসরে সবচেয়ে বেশি ছক্কা মারেন হায়দরাবাদ ওপেনার অভিষেক শর্মা। ৪২টি ছয় এসেছে তার ব্যাট থেকে। দলটির আরেক তারকা হেনরিখ ক্লাসেন হাঁকান ৩৮টি ছক্কা, আসরে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এছাড়া, ট্রাভিস হেডের ব্যাট থেকে আসে ৩২টি ছক্কা। ছক্কার মারে তিনে আছেন বিরাট কোহলি। সবচেয়ে বেশি ৭৪১ রান করার পথে কোহলি ছক্কা মারেন ৩৮টি। অনেকদিন পর আবার ওপেন করতে নামা কলকাতা তারকা সুনিল নারিনের ব্যাট থেকে ছক্কা আসে ৩৩টি।
আইপিএল মানেই রান বন্যার আসর, এমন ধারাপাত মেনেই এতদিন চলেছে টুর্নামেন্টটি। এই আসরে সব ছাড়িয়ে গেছে। ব্যাটাররা যেন রবী ঠাকুরের তালগাছ কবিতার মতো—এক পায়ে দাঁড়িয়ে সব গাছ ছাড়িয়ে, উঁকি মারে আকাশে। এখানে ছোট একটা সংশোধন করা যায়। এক পায়ে দাঁড়িয়ে সব বোলার পিটিয়ে, বল তোলে আকাশে!