রোনালদো—রেকর্ড যার পিছু ছাড়ে না
দুটি সংখ্যা—৩৯ ও ৩৫। এবার সংখ্যা দুটি মিলিয়ে একটা বাক্য মেলানো যাক। ৩৯ বছর বয়সে এক মৌসুমে ৩৫ গোলের রেকর্ড গড়লেন একজন। তিনি ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। যিনি আগের চেয়ে আরও শানিত, আরও পরিণত। যাকে ক্লান্তি ভর করে না। অন্তত, তার খেলা দেখলে কেউই বলবে না, পা দিয়েছেন ৪০ বছরে! মাঠ ও বাইরে পর্তুগিজ যুবরাজ নিজেকে নিয়ে গেছেন এমন এক পর্যায়ে, যা ভাবতে যাওয়ার আগে ভাবতে হয়, কীভাবে সম্ভব!
সৌদি প্রো লিগের শেষ ম্যাচে আজ মঙ্গলবার (২৮ মে) মুখোমুখি হয়েছিল আল-ইত্তিহাদ ও আল-নাসের। লিগে দ্বিতীয় স্থান নিশ্চিত ছিল নাসেরের। আগেই শিরোপা জিতে নেয় আল-হিলাল। এই ম্যাচে দর্শক আগ্রহের সবটুকু নিয়ে ছিলেন সিআরসেভেন। ঘরের মাঠ আল-আওয়াল স্টেডিয়ামে ৪-২ ব্যবধানে ম্যাচ জেতে আল-নাসের। তারচেয়ে বড় ব্যাপার, রোনালদো করেছেন জোড়া গোল।
এই মৌসুমে রোনালদোর টানা হ্যাটট্রিক করার ঘটনাও আছে। তবু, শেষ ম্যাচের গোল দুটির মাহাত্ম্য অনেক। মাঠে নামার আগে ৩০ লিগ ম্যাচে ৩৩ গোল রোনালদোর নামের পাশে। মৌসুমের সর্বোচ্চ গোলদাতা। কিন্তু, সিআরসেভেনের লক্ষ্য তো আরেকটি। সৌদি প্রো লিগের ইতিহাসে এক মৌসুমে সর্বোচ্চ ৩৪ গোলের রেকর্ড এতদিন নিজের করে রাখেন আব্দের রাজ্জাক হামেদাল্লাহ। আল-নাসেরের জার্সিতেই ২০১৮-১৯ মৌসুমে ৩৪ গোল করেছিলেন তিনি। সেটি ভাঙতে রোনালদোর দরকার ছিল দুই গোল।
ম্যাচের প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে গোল করে হামেদাল্লাহকে ছুঁয়েছেন আল-নাসের অধিনায়ক। ৬৯ মিনিটে জোরালো এক হেডারে আল-ইত্তিহাদের জালে বল পাঠান কিংবদন্তি রোনালদো। তাতে ভাঙে মরোক্কান ফুটবলার হামেদাল্লাহর রেকর্ড। সৌদি প্রো লিগের এক মৌসুমে এখন সর্বোচ্চ গোলদাতা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো দস সান্তোস অ্যাভেইরো।
আরব দেশের রেকর্ড তো ভাঙা হলো। গড়া হলো নতুন অর্জনের মুকুট। এক রেকর্ডে গড়লেন আরেক রেকর্ড। ইংল্যান্ড, স্পেন ও ইতালির পর সৌদিতে এক সিজনে সবচেয়ে বেশি গোল দিলেন রোনালদো। চারটি ভিন্ন লিগে এমন কীর্তি গড়তে পারেননি ফুটবল দুনিয়ায় আর কোনো খেলোয়াড়। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, রিয়াল মাদ্রিদ ও জুভেন্টাসের পর আল-নাসের। যেখানেই গেলেন রোনালদো, একটু দম নিলেন। তারপর যেন চোখ বোলালেন কী কী ভাঙা যায়, সেদিকে। ব্যস, নেমে পড়লেন।
মার্কিন ডিপ্লোম্যাট আন্না রুজভেল্ট একটা কথা বলেছিলেন- ‘’ভবিষ্যৎ তারাই ডিজার্ভ করে যারা স্বপ্ন দেখার মতো সুন্দর বিষয়ে বিশ্বাস রাখে।’ রোনালদো বরাবরই চিন্তা করেন আউট অব দ্য বক্স। তিনি স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসেন। স্বপ্নের পিছু ছুটতে চান। তা ধরার আগ অবধি না থামার মানসিকতাই তাকে এগিয়ে রাখে অন্যদের চেয়ে।
রোনালদোর অদ্ভুত এক গুণ আছে। অদম্য সাহসে ভর দেওয়া আত্মবিশ্বাস। এতে ভর দিয়ে প্রতিপক্ষকে বহুবার তছনছ করেছেন। অথচ, তারাই তাকে দলে ভিড়িয়েছে। ম্যান ইউনাইটেডে ২০০৮ সালে রোনালদো বলেকয়ে এক মৌসুমে গুণে গুণে ত্রিশখানা গোল দিয়েছিলেন! সেই তখন এক মৌসুমে ৩০ গোলের ভাবনা দুঃস্বপ্নেও ভাবার দুঃসাহস হতো না কারও। রোনালদো ভেবেছিলেন, বলেছিলেন, করে দেখিয়েছিলেন।
সৌদিতে রেকর্ড ভাঙার পর রোনালদো নিজের প্রতিক্রিয়ায় বলেন—‘আমি রেকর্ডের পিছু ছুটি না। রেকর্ড আমার পিছু ছোটে।’ রেকর্ড তো তাদের পেছনেই ছুটে বেড়ায়, যারা তাকে উষ্ণ আলিঙ্গনে জড়িয়ে রাখে। সিআরসেভেন ছাড়া রেকর্ডকে এতটা ভালো কে আর বেসেছে কবে!