সাকিব কি তাহলে ফুরিয়েই গেছেন?
বহুকাল আগে বাংলাদেশ দল কালেভদ্রে ম্যাচ জিতত। সেসব ম্যাচে দুই একজন পারফরমার থাকতেন, যারা আবার হারিয়েও যেতেন। তারপর বাংলার ক্রিকেটে সাকিব আল হাসানের আগমন ঘটে। দীর্ঘ প্রায় দেড় যুগ ধরে যিনি ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছেন। বাংলাদেশ ক্রিকেটে তার সঙ্গে অনেকেই এসেছেন, গিয়েছেন, পঞ্চপাণ্ডব তৈরি হয়েছে–তবে, সাকিব ছিলেন আপন আলোয় উজ্জ্বল। বহুদূর থেকেও যাকে জ্বলতে দেখা যেত।
চলমান টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তিনি নবম আসর খেলছেন। বিশ্বকাপেরই এটি নবম আসর। মানে দাঁড়াল, সাকিব প্রতিটি আসর খেলেছেন। তিনি ছাড়া কেবল রোহিত শর্মারই এই অর্জন আছে। এই টুর্নামেন্টে প্রথম বোলার হিসেবে উইকেটের হাফসেঞ্চুরি করেছেন। সাকিব এবারের বিশ্বকাপে একটি অর্ধশতক করেছেন। যা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তার শততম। বলা বাহুল্য, কোনো বাংলাদেশি হিসেবে এমন কৃতিত্ব এটিই প্রথম ও একমাত্র।
বিশ্বকাপে অনেকেরই ওপরই চোখ আছে বাংলাদেশি ভক্তদের। সাকিবের ওপর চোখটা গোটা ক্রিকেট দুনিয়ার। তিনি তো ডুবতে বসা তরীকে মাঝি হয়ে বহুবার তীরে ভিড়িয়েছেন। বিশ্বকাপে বাংলাদেশ যখন প্রথম সেমি ফাইনাল খেলা থেকে অল্প দুরত্বে, তখন সাকিবই তো ভরসার কেন্দ্রবিন্দু। দলে অনেকেই থাকতে পারেন, কিন্তু ওই যে সাকিব একজনই।
অথচ, তিনি পারলেন কই? পুরোনো চাল না কি ভাতে বাড়ে! এবারের বিশ্বকাপে সাকিবকে দেখলে এই প্রবাদের সত্যতা নিয়েই প্রশ্ন উঠবে। লোকে বলতে পারে, এক দুইটা টুর্নামেন্ট খারাপ যেতেই পারে। এই বয়সে ম্যাচ খেলাটাই বিশাল ব্যাপার। তবে, বিশ্বকাপ তো আবেগের জায়গা নয়। এখানে খেলতে হয় বুদ্ধি দিয়ে, অভিজ্ঞতার ঝাঁপি খুলে।
পুরো আসরে যেমন তেমন, আফগানদের বিপক্ষে আজ মঙ্গলবার (২৫ জুন) সুপার এইটের ম্যাচে সাকিবকে ছন্দে দেখার দাবি তোলা যেতেই পারত। হয়তো ভক্তরা মনে মনে তুলেছেনও। সেই আর্জি তার কানে পৌঁছায়নি। পৌঁছায়নি বলেই সাকিব ব্যর্থ। বল হাতে চার ওভারে ১৯ রান দিয়ে উইকেটবিহীন। তবু মানা যায়। কিন্তু, ব্যাটিংয়ে এমন আউট তার মতো একজনের কাছ থেকে বোধহয় খোদ প্রতিপক্ষই আশা করেনি।
২.৪ ওভারে দুই উইকেট হারায় বাংলাদেশ। রানরেটের সমীকরণ আছে। খেলতে হবে জোরালোভাবে, আবার বাঁচিয়ে রাখতে হবে উইকেট। এই অবস্থায় কি না সাকিব দলের বিপদ আরও বাড়িয়ে বিদায় নিলেন প্রথম বলে! নাভিন উল হকের করা বলটি লেগ স্ট্যাম্পের বাইরেই টার্ন করেছিল। সেটি প্রায় টেনে সোজা পিচে তার হাতে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে বিদায় নিলেন সাকিব। আউটের ধরণ, পরিস্থিতি না বুঝে খেলা, সবচেয়ে অভিজ্ঞ হয়েও আনাড়ির মতো কাজে প্রশ্ন জাগে– সাকিব কি তবে ফুরিয়েই গেলেন?