বাংলাদেশকে বিদায় করে বিশ্বকাপের সেমিতে আফগানিস্তান
এ যেন ফাইনালের আগেই মেগা ফাইনাল! হ্যাঁ, বাংলাদেশ ও আফগানিস্তানের মধ্যকার ম্যাচটি অন্তত তেমনই উত্তাপ ছড়িয়েছে। এক ম্যাচ, লড়াই ত্রিমুখী! দুটি দল মাঠে, আরেকটি দল পয়েন্ট টেবিলে। এমন লড়াইয়ে সেন্ট ভিনসেন্টে ইতিহাস গড়েছে আফগানিস্তান। বাংলাদেশকে হারিয়ে নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে উঠেছে আফগানিস্তান।
জয়ের জন্য বাংলাদেশের লক্ষ্যটা ছিল খুবই সহজ। তবে সেমিফাইনালের স্বপ্ন বাঁচাতে বাংলাদেশের এই লক্ষ্যটা পাহাড়সম করে দিয়েছিল সমীকরণের মারপ্যাচ! শেষ চারে যেতে বাংলাদেশকে জিততে হতো স্রেফ ১২.১ ওভারে। এই সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ তো সমীকরণ মেলাতে পারলোই না! বরং সুপার এইটের একটি জয়ের আশাও ভেস্তে গেল বাংলাদেশের। লিটন দাসদের থামিয়ে রূপকথার নতুন গল্প লিখল আফগানিস্তান। বাংলাদেশকে ৮ রানে হারিয়ে প্রথমবার বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে যাওয়ার ইতিহাস গড়ল রশিদ খানের দল।
বাংলাদেশের হারে দুঃসংবাদ পেল অস্ট্রেলিয়াও। কারণ বাংলাদেশ জিতলে রান রেটের সুবাদে সেমিতে যেতে পারত অসিরা। আফগানরা সেটা হতে দিল না। ফলে বাংলাদেশের সঙ্গে আজ বিদায় নিতে হলো অস্ট্রেলিয়াকেও।
বিশ্বকাপের সুপার এইটের শেষ ম্যাচে আগে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৫ উইকেটে স্কোরবোর্ডে ১১৫ রান তুলেছে আফগানিস্তান। জবাব দিতে নেমে ১৭.৫ ওভারে ১০৫ রান করে বাংলাদেশ।
সেন্ট ভিনসেন্টে রান তাড়ায় নেমে শুরুর ওভারটা দারুণ কাটে বাংলাদেশের। লিটন দাসে ঝড়ে প্রথম ওভার থেকেই আসে ১৬ রান। কিন্তু দ্বিতীয় ওভারেই ধাক্কা। ফাজালহাক ফারুকি বলে এলবিডব্লিউ হয়ে শূন্যতে ফেরেন ৩ বল খেলা তানজিদ তামিম।
তৃতীয় ওভারে আবারও ধাক্কা। এবার অবশ্য জোড়া ধাক্কা। এক ওভারেই বাংলাদেশ হারায় নাজমুল হোসেন শান্ত ও সাকিব আল হাসানের উইকেট।
২৩ রানে তিন উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় বাংলাদেশ। মাঝে নামে বৃষ্টি। সেই বাগড়া থামলে আফগানদের স্পিন সামলান লিটন দাস। সৌম্য সরকারকে নিয়ে পাওয়ার প্লেতে তোলেন ৪৬ রান। পাওয়ার প্লের পরের ওভারে সৌম্য আউট হয়ে হতাশা বাড়ান বাংলাদেশের। রশিদ খানের বল জায়গা দাঁড়িয়ে খেলতে গিয়ে ১০ রানে আউট হন সৌম্য।
এরপর তাওহিদ নেমে দুই বাউন্ডারিতে আবারও সেমির আশা দেখান বাংলাদেশকে। কিন্তু রশিদের বলেই আউট হয়ে তিনি ফিরে যান সাজঘরে। ৯ বলে ১৪ রান করে থামেন তাওহিদ।
তাওহিদকে হারানো বাংলাদেশ তবুও লড়াই করে লিটনের ব্যাটে। কিন্তু সেই লড়াইয়ে সেমিফাইনালে যাওয়ার স্বপ্ন সত্যি হয়নি। সেমির স্বপ্ন ভেস্তে যাওয়া বাংলাদেশ পারল না জয় নিয়েও মাঠ ছাড়তে।
এর আগে টস জিতে ব্যাটিং বেঁছে নেয় আফগানিস্তান। আগে ব্যাট করতে নেমে বেশ সতর্ক শুরু করে আফগানরা। বোলিংয়ের শুরু থেকেই অসম বাউন্স। বলও লাফাচ্ছে। এমন কন্ডিশনে রানের গতি নিয়ন্ত্রণে রাখলেও পাওয়ার প্লেতে উইকেটের দেখা পায়নি বাংলাদেশ।
প্রথম ৬ ওভারে অবশ্য আফগানিস্তানও তেমন সুবিধা করতে পারেনি। পাওয়ার প্লেতে মাত্র ২৭ রান রান তোলেন দুই ওপেনার রহমানউল্লাহ গুরবাজ ও ইব্রাহিম জাদরান।
১১তম ওভারে এসে অবশেষে উইকেটের দেখা পায় বাংলাদেশ। সেই স্বস্তি এনে দেন রিশাদ হোসেন। বাংলাদেশি লেগ স্পিনারের অফ স্টাম্পের বাইরের বল ইনসাইড আউট শট খেললেন ইব্রাহিম জাদরান। ঠিকঠাক টাইমিং পেলেন না। লং অফ থেকে বাঁ দিকে অনেকটা দৌড়ে এসে ক্যাচ তুলে নেন তানজিম সাকিব। ১ চারে ২৯ বলে ১৮ রান করে ফিরেন জাদরান। ৫৯ রানে ভাঙল আফগানিস্তানের উদ্বোধনী জুটি।
এরপর অবশ্য উইকেট হারাতে থাকে আফগানিস্তান। ১৬তম ওভারে এসে আজমতউল্লাহ ওমারজাইকে কট বিহাইন্ড করে বিদায় করেন মুস্তাফিজুর রহমান। ১২ বলে ১০ রান করে থামেন ওমরজাই।
পরের ওভারে আসেন রিশাদ। এসেই তুলে নেন জোড়া উইকেট। প্রথমে বিদায় করেন উইকেটে জমে যাওয়া রহমানউল্লাহ গুরবাজকে। রিশাদের বল মাঠের বাইরে পাঠাতে গিয়ে ডিপ কাভারে সৌম্যের হাতে ধরা পড়েন গুরবাজ। ৫৫ বলে ৪৩ রানে থামে তার ইনিংস।
একই ওভারে গুলবাদিন নায়েবকেও বিদায় করেন রিশাদ। একই ফিল্ডার সৌম্যের হাতে ক্যাচ বানিয়ে তুলে নেন নিজের তৃতীয় শিকার।
১৮তম ওভারে তাসকিন আহমেদ বিদায় করেন মোহাম্মদ নবিকে। একের পর এক উইকেট হারিয়ে শেষ দিকে রশিদের ব্যাটে চড়ে ১১৫ রানের পুঁজি পায় আফগানিস্তান। শেষ দিকে নেমে ১০ বলে ১৯ রান করেন রশিদ খান।
বল হাতে ২৬ রান দিয়ে সর্বোচ্চ তিন উইকেট পান রিশাদ হোসেন। ১২ রান খরচায় তাসকিন আহমেদের শিকার একটি। ১৭ রান দিয়ে মুস্তাফিজও নেন এক উইকেট।