ইউসরা মারদিনি: শরণার্থী শিবির থেকে অলিম্পিকের মঞ্চে
ক্রীড়াজগতের সবচেয়ে বড় আসর বলা হয় অলিম্পিক গেমসকে। পুরো বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ক্রীড়াবিদদের স্বপ্ন ক্যারিয়ারে একবার হলেও অলিম্পিকে অংশ নেওয়া। কিংবা গলায় একটি অলিম্পিক পদক ঝোলানো। নিরলস পরিশ্রম আর অবিশ্বাস্য সংগ্রামের মাধ্যমে সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিয়েছেন ইউসরা মারদিনি। যার নেই কোনো নির্দিষ্ট দেশ কিংবা পতাকা।
প্যারিস অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দশ হাজারেরও বেশি ক্রীড়াবিদের কাতারে আছেন উদ্বাস্তুরাও। শিকড় থেকে যারা এখন পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন। তেমনই ৩৭ জন শরণার্থী এবার অলিম্পিকে সুযোগ পেয়েছেন। যাদের মধ্যে বেশ আলোচনায় একটি নাম—ইউসরা মারদিনি।
ইউসরা মূলত একজন সিরিয়ান নাগরিক। সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধের কারণে ২০১৫ সালে বোন সারাকে নিয়ে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন তিনি। সে সময় তার বয়স ছিল মাত্র ১৬ বছর। প্রথমে তারা পাড়ি জমান লেবাননে। আর সেখান থেকে তুরস্ক। পরবর্তীতে তুরস্ক থেকে নৌকায় চড়ে যাত্রা করেন গ্রিসের উদ্দেশ্যে।
কিন্তু সেই যাত্রায় এক ভিন্ন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হন দুই বোন। তাদেরকে বহনকারী নৌকাটি অতিরিক্ত যাত্রীর কারণে ডুবতে শুরু করে। এক পর্যায়ে তারা দুই বোন নৌকা থেকে পানিতে নেমে বাকিদের প্রাণ বাঁচান। দুই বোনের ওপর দায়িত্ব পড়ে সাঁতরে নৌকাটিকে তীরে নিয়ে যাওয়ার। প্রায় তিন ঘণ্টা সাঁতার কেটে নৌকাটিকে তীরে পৌঁছে দেন তারা। গ্রীসে পৌঁছালেও তাদের সংগ্রাম কিন্তু শেষ হয়নি।
পরবর্তীতে গ্রিস থেকে জার্মানি যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন ইউসরা। পর্যাপ্ত অর্থ না থাকায় দীর্ঘ পথ পায়ে হেঁটে অতিক্রম করার সিদ্ধান্ত নেন তারা। চোরাকারবারিদের সাহায্য নিয়ে কোনোমতে তারা ২০১৫ সালে সেপ্টেম্বরে জার্মানির বার্লিনে পৌঁছান। সেখানে একটি স্থানীয় ক্লাবে শুরু করেন সাঁতারের অনুশীলন। এর কদিন পরই ইউসরা জানতে পারেন উদ্বাস্তুদের নিয়ে আলাদা দল গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে অলিম্পিক কমিটি।
সেই সুযোগ আর হাতছাড়া করেননি ইউসরা। ভালো সাঁতারু হওয়ায় রিও ডি জেনিরো অলিম্পিকের উদ্বাস্তু দলেও সুযোগ মেলে তার। সেবার সাঁতারের ১০০ মিটার বাটারফ্লাই ইভেন্টে অংশ নিয়েছিলেন তিনি। এরইমাঝে শরণার্থীদের নিয়ে শুরু করেন কাজ। ২০১৭ সালে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার (ইউএনএইচসিআর) এর শুভেচ্ছাদূত হিসেবে যোগ দেন। যা বিশ্বব্যাপী তার পরিচিতি আরও বাড়িয়ে দেয়।
এরই ধারাবাহিকতায় ২০২০ টোকিও অলিম্পিকেও অংশ নেন তিনি। এভাবেই চলতে থাকে ইউসরার জীবন। তার অসীম সংগ্রামে অনুপ্রাণিত হয়ে ২০২২ সালে তৈরি হয় সিনেমা ‘দ্য সুইমারস’। উদ্বাস্তুদের অধিকারের পক্ষে কথা বলে ইউসরা এখন বিশ্বব্যাপী অনুপ্রেরণার এক নাম।