সাদা পোশাকে পাকিস্তানের বিপক্ষে ঐতিহাসিক জয় বাংলাদেশের
ঠিক ২১ বছর আগের ঘটনা। ২০০৩ সালে মুলতানে তিন ম্যাচের টেস্ট সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচ হারলেও তৃতীয় টেস্টে দারুণ লড়াই করেও এক উইকেটে হেরেছিল বাংলাদেশ। সেই হারের আক্ষেপ এবার রাওয়ালপিন্ডিতে মেটাল নাজমুল শান্তর দল। সাকিব-মিরাজদের ঘূর্ণিতে অবিশ্বাস্য এক জয় পেল সফরকারীরা। যা পাকিস্তানের বিপক্ষে সাদা পোশাকে বাংলাদেশের প্রথম জয়।
আজ রোববার (২৫ আগস্ট) রাওয়ালপিন্ডিতে পঞ্চম দিনে ৯৪ রানে পিছিয়ে থেকে ব্যাটিংয়ে নামে পাকিস্তান। তবে, স্কোরবোর্ডে খুব বেশি রান তুলতে পারেনি তারা। পাকিস্তান ১৪৬ রানে থামলে জয়ের জন্য ৩০ রানের সহজ লক্ষ্য পায় বাংলাদেশ। যা মাত্র ৬.৩ ওভারেই তুলে ফেলেন ব্যাটাররা। ৩০ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে দেখেশুনে শুরু করে দুই ওপেনার সাদমান ইসলাম ও জাকির হাসান। লক্ষ্য ছোট হওয়ায় কোনো উইকেট না হারিয়েই জয় তুলে নেয় সফরকারীরা।
এর আগে, পঞ্চম দিনের শুরুতেই দলকে সাফল্য এনে দেন হাসান মাহমুদ। রিভিউ নিয়ে শান মাসুদকে ফেরায় বাংলাদেশ। ডানহাতি পেসারের অফ স্টাম্পের একটু বাইরের বল ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্ট দিয়ে খেলতে চেয়েছিলেন মাসুদ। ব্যাটের কানা ছুঁয়ে জমা পড়ে লিটন দাসের গ্লাভসে। হাসান জোরালো আবেদন করলেও প্রথমে আম্পায়ার সাড়া দেননি। সঙ্গে সঙ্গেই রিভিউ নেন নাজমুল হোসেন শান্ত। আল্ট্রাএজে মেলে ব্যাটের কানা স্পর্শের প্রমাণ। ফিরে যান পাকিস্তান অধিনায়ক। ৩৭ বলে ২ চারে ১৪ রান করেন মাসুদ।
এরপর দুইবার ভাগ্যের জোরে বেঁচে যাওয়া বাবর আজমকে ফেরান পেসার নাহিদ রানা। এই পেসারের বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন বাবর। অফ স্টাম্পের বেশ বাইরের ডেলিভারিতে কাভার ড্রাইভ করেছিলেন পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক। তবে টাইমিং করতে পারেননি। সুইং করে ব্যাটের কানায় লেগে বল আঘাত হানে লেগ স্টাম্পে। তিন চারে ৫০ বলে ২২ রান করেন তিনি।
বাবর আজমকে ফেরানোর পর আরেক উইকেট হারায় পাকিস্তান। শূন্য রানে সৌদ শাকিলকে ফেরান সাকিব আল হাসান। বাঁহাতি স্পিনারের বল বেরিয়ে এসে খেলতে গিয়ে স্টাম্পড হন শাকিল। চার বল খেললেও তিনি খুলতে পারেননি রানের খাতা। শাকিলের পর সাকিবের শিকারে পরিণত হন আবদুল্লাহ শফিক। ঝুলিয়ে দেওয়া বল উড়িয়ে মারতে গিয়েছিলেন শফিক। ব্যাটে লেগে বল উঠে যায় আকাশে। দৌড়ে সহজ ক্যাচ নেন সাদমান ইসলাম। পাকিস্তান হারায় তাদের পঞ্চম উইকেট। যার ফলে মধ্যাহ্ন বিরতিতে যাওয়ার আগে পাকিস্তানের সংগ্রহ ছিল ৬ উইকেট হারিয়ে ১০৮ রান।
বিরতি থেকেই ফিরেই আঘাত হানেন মিরাজ। তার একটু নিচু হওয়া ডেলিভারি ধরতেই পারলেন না আফ্রিদি। জায়গায় দাঁড়িয়ে খেলতে চেয়েছিলেন আফ্রিদি। কিন্তু ব্যাট ফাঁকি দিয়ে বল গিয়ে আঘাত হানে প্যাডে। জোরালো আবেদন আঙ্গুল তুলে দেন আম্পায়ার। ১৬ বলে ২ রান করেন আফ্রিদি। এরপর লেজের সারির ব্যাটারদের নিয়ে লড়াই চালিয়ে যান রিজওয়ান। তবে, শেষদিকে মিরাজের ঘূর্ণিতে টিকতে পারেননি তিনিও। স্কোরবোর্ডে ৮০ বলে ৫১ রান তুলে ফেরেন সাজঘরে। এরপর এলবিডব্লিউ এর ফাঁদে পড়ে মোহাম্মদ আলী বিদায় নিলে ১৪৬ রানে থামে স্বাগতিকরা। বাংলাদেশের হয়ে মিরাজ ৪টি ও সাকিব ৩টি উইকেট নেন।
এর আগে, ৬ উইকেটে ৪৪৮ রান তুলে প্রথম ইনিংস ঘোষণা করে পাকিস্তান। জবাবে, মুশফিক, সাদমান ও মিরাজের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে স্কোরবোর্ডে ৫৬৫ রান তোলে বাংলাদেশ। ৩৪১ বলে সর্বোচ্চ ১৯১ রান করেন মুশফিক। ১১৭ রানের লিড পায় বাংলাদেশ। সেই লিডকে পুঁজি করেই পাকিস্তানকে সহজে হারাল চন্ডিকা হাথুরুসিংহের শিষ্যরা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
পাকিস্তান ১ম ইনিংস: ৪৪৮/৬ (ডি.)
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ৫৬৫
পাকিস্তান ২য় ইনিংস: (আগের দিন ২৩/১) ৫৫.৫ ওভারে ১৪৬ (শাফিক ৩৭, মাসুদ ১৪, বাবর ২২, শাকিল ০, রিজওয়ান ৫১, সালমান ০, আফ্রিদি ২, নাসিম ৩, শাহজাদ ৫*, আলি ০; শরিফুল ১১-২-২০-১, হাসান ১০-২-২০-১, সাকিব ১৭-৩-৪৪-৩, নাহিদ ৬-০-৩০-১, মিরাজ ১১.৫-২-২১-৪)।
বাংলাদেশ ২য় ইনিংস: (লক্ষ্য ৩০) ৬.৩ ওভা ৩০/০ (জাকির ১৫*, সাদমান ৯*; আফ্রিদি ২-০-৮-০, নাসিম ৩-১-৭-০, সালমান ১.৩-০-৯-০)।
ফল: বাংলাদেশ ১০ উইকেটে জয়ী।
ম্যান অব দা ম্যাচ: মুশফিকুর রহিম।