স্মরণীয় হয়নি রিয়াদের বিদায়, হোয়াইটওয়াশ হলো বাংলাদেশ
একই মাঠ, একই উইকেট। অথচ ভারত-বাংলাদেশ দুই দলের ব্যাটিং হলো পুরো বিপরীত। প্রথম ইনিংসে যেখানে ব্যাটিং তাণ্ডব চালিয়ে ২৯৭ রান গড়ল ভারত। সেখানে দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের পুরোটাই হতাশায় মোড়ানো। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের বিদায়ী ম্যাচেও ব্যর্থতার বৃত্ত থেকে বেরোতে পারেননি ব্যাটাররা। যার ফলশ্রুতিতে হোয়াইটওয়াশের লজ্জা নিয়ে ভারত সফর শেষ হলো লাল-সবুজের প্রতিনিধিদের।
আজ শনিবার (১২ অক্টোবর) হায়দরাবাদের রাজীব গান্ধী স্টেডিয়ামে টস জিতে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে ৬ উইকেট হারিয়ে স্কোরবোর্ডে রেকর্ড ২৯৭ রান তোলে ভারত। জবাবে ২০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ১৬৪ রানে থামে বাংলাদেশ। ১৩৩ রানের জয়ে বাংলাদেশকে হোয়াইটওয়াশের লজ্জা দিল ভারত।
প্রায় অসম্ভব এক লক্ষ্য তাড়ায় প্রথম বলেই ড্রেসিং রুমের পথ ধরেন ওপেনার পারভেজ হোসেন ইমন। মায়াঙ্ক যাদবের গতিময় শর্ট বলে যেন দেখতেই পাননি বাঁহাতি ওপেনার। বেশ দেরিতে পুল করতে গিয়ে কানায় লেগে হাওয়ায় ভাসিয়ে দেন তিনি। স্লিপ সহজ ক্যাচ নেন রায়ান পরাগ। ইমনের বিদায়ের পর জীবন পান ওপেনার তানজিদ তামিম। তবে, জীবন পেয়েও কিছু করতে পারলেন না তিনি। চতুর্থ ওভারে স্পিন আক্রমণে আসতেই প্রথম বলে ড্রেসিং রুমে ফেরেন এই বাঁহাতি ওপেনার। ওয়াশিংটন সুন্দরের বলে শর্ট থার্ড ম্যানে বারুণ চক্রবর্তীর হাতে ক্যাচ দেন। ১২ বলে ১৫ রান আসে তার ব্যাট থেকে।
এরপর ব্যাট হাতে ভালো শুরুর ইঙ্গিত দেন ব্যাটার নাজমুল হোসেন শান্ত। রবি বিষ্ণই এর লেগ স্টাম্পে করা ডেলিভারি রিভার্স সুইপের চেষ্টায় ঠিকঠাক খেলতে পারেননি তিনি। ব্যাটের উল্টোপাশে লেগে বল উঠে যায় ওপরে। সহজ ক্যাচ নেন সানজু স্যামসন। ১১ বলে ১৪ রান করেন বাংলাদেশ অধিনায়ক।
শান্তর বিদায়ের পর তাওহিদ হৃদয়কে নিয়ে রানের চাকা সচল রাখেন টপঅর্ডার ব্যাটার লিটন দাস। এই দুইজনের ব্যাটিংয়ে সম্মানজনক হারের জন্য খেলতে থাকে বাংলাদেশ। যদিও সেট হয়েও ইনিংস বড় করতে পারেননি লিটন। দলীয় ১১২ রানের মাথায় রবি বিষ্ণোইর বলে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে বাউন্ডারিতে দাঁড়িয়ে থাকা তিলক ভার্মার হাতে ধরা পড়েন। সাজঘরে ফেরার আগে করেন ২৫ বলে ৪২ রান।
এরপর এক তাওহিদ হৃদয় ছাড়া আর কেউ পারেননি আস্থার প্রতিদান দিতে। লেজের সারির ব্যাটারদের নিয়ে হারের ব্যবধান কমানোর চেষ্টা করেন এই ব্যাটার। শেষমেশ ১৬৪ রানে থামে বাংলাদেশ। ব্যাট হাতে সর্বোচ্চ ৬৩ রান করেন হৃদয়।
এর আগে ব্যাটিংয়ে নেমে দারুণ শুরু করেন দুই ওপেনার অভিষেক শর্মা ও সানজু স্যামসন। তবে, অভিষেক বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। ইনিংসের তৃতীয় ওভারে বোলিংয়ে এসে প্রথম বলেই উইকেট নেন তানজিম হাসান সাকিব। তার বলে অভিষেক শর্মা পুল শট খেলতে গিয়ে মিডউইকেটে শেখ মেহেদীর হাতে ধরা পড়েন এই বাঁহাতি ব্যাটার। ৪ বলে ১ চারে ৪ রান করেন তিনি। এরপর পাল্টে যায় ম্যাচের দৃশ্যাপট। বাংলাদেশের বোলারদের তুলোধুনো করে ব্যাটিং তাণ্ডব চালায় অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদব ও সানজু স্যামসন। দুইজন মিলে গড়েন ৭০ বলে ১৭৩ রানের জুটি।
মাঝে মাত্র ৪০ বলে সেঞ্চুরি পূরণ করেন স্যামসন। ভারতের হয়ে এর চেয়ে কম বলে সেঞ্চুরি আছে শুধু রোহিত শার্মার, ৩৫ বলে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। ৩৩ ম্যাচের ক্যারিয়ারে প্রথম সেঞ্চুরি করার পথে ৯ চারের সঙ্গে ৮টি ছক্কা মেরেছেন স্যামসন। অবশ্য সেঞ্চুরির পর বেশিক্ষণ টেকেননি তিনি। দলীয় ১৯৬ রানের মাথায় মুস্তাফিজের বলে ডিপ স্কয়ার লেগে শেখ মেহেদীর হাতে ক্যাচ দিয়ে আউট হন তিনি। সাজঘরে ফেরার আগে করেন ৪৭ বলে ১১১ রান।
তার বিদায়ের পর আরেক ব্যাটার যাদবও ফেরেন দ্রুত। দ্বিতীয় স্পেলে ফিরেই বড় সাফল্য পান মাহমুদউল্লাহ। তার বল ছক্কায় ওড়ানোর চেষ্টায় ডিপ মিড উইকেটে রিশাদ হোসেনের হাতে ধরা পড়েন যাদব। তার ব্যাট থেকে আসে ৩৫ বলে ৭৫ রান। এরপর হার্দিক পান্ডিয়া-রিয়ান পরাগদের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে রেকর্ড সংগ্রহ দাঁড় করায় ভারত। এটি টি-টোয়েন্টিতে দলটির সর্বোচ্চ সংগ্রহ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
ভারত: ২০ ওভারে ২৯৭/৬ (স্যামসন ১১১, অভিষেক ৪, সূর্যকুমার ৭৫, পরাগ ৩৪, পান্ডিয়া ৪৭, রিঙ্কু ৮*, নিতীশ ০, সুন্দর ১*; মেহেদি ৪-০-৪৫-০, তাসকিন ৪-০-৫১-১, তানজিম ৪-০-৬৬-৩, মুস্তাফিজ ৪-০-৫২-১, রিশাদ ২-০-৪৬-০, মাহমুদউল্লাহ ২-০-২৬-১)
বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১৬৪/৭ (ইমন ০, তানজিদ ১৫, শান্ত ১৪, লিটন ৪২, হৃদয় ৬৩, মাহমুদউল্লাহ ৮, মেহেদী ৩, রিশাদ ০, তানজিম ৮; মায়াঙ্ক ৪-০-৩২-২, পান্ডিয়া ৩-০-৩২-০, ওয়াশিংটন ১-০-৪-১, নিতীশ ৩-০-৩১-১, রবি ৪-১-৩০-৩, বারুণ ৪-০-২৩-০, অভিষেক ১-০-৮-০)
ফল : ভারত ১৩৩ রানে জয়ী
সিরিজ : ভারত ৩-০ ব্যবধানে জয়ী