ব্যর্থ ম্যান ইউনাইটেডকে আলো দেখাতে পারবেন নতুন কোচ?
মাত্র ৩৯ বছর বয়সেই কোচিং দিয়ে ইউরোপীয় ফুটবলে হইচই ফেলে দিয়েছেন সাবেক পর্তুগিজ ফুটবলার রুবেন আমোরিম। গত কয়েক মৌসুম ধরে বড় কোনো ক্লাবের কোচের পদ খালি হলেই তাকে নিয়ে ছড়ায় গুঞ্জন। অবশ্য সেসবে পাত্তা না দিয়ে গত চার বছর ধরে লিসবনের ক্লাব স্পোর্তিংয়েই সুখে ছিলেন আমোরিম। তবে শেষ পর্যন্ত সে জায়গায় আর থিতু হয়ে থাকতে পারলেন না তিনি।
আগামী ১১ নভেম্বর থেকে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ডাগআউটে দেখা যাবে পর্তুগিজ এই কোচকে। ১০ মিলিয়ন ইউরোর বিনিমিয়ে স্পোর্তিং থেকে তাকে ম্যানচেস্টারে উড়িয়ে নিয়ে আসা হচ্ছে বলে আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছে ইউনাইটেড। ২০২৭ সালের জুন পর্যন্ত ওল্ট ট্র্যাফোর্ডে থাকবেন তিনি।
১৮ বছর বয়সে নিজ শহরের ক্লাব বেলেনেন্সেসের জার্সিতে পেশাদার ফুটবলে যাত্রা শুরু হয় ১৯৮৫ সালে লিসবনে জন্ম নেওয়া আমোরিমের। সেখানে ২০০৩ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত কাটিয়ে ফুটবলার হিসেবে তিনি উজ্জ্বল সময় পার করেন লিসবনেরই জনপ্রিয় ক্লাব বেনফিকায়। ২০১৭ সালে খেলোয়াড়ি জীবনের ইতি টানার আগে এই ক্লাবটির হয়ে তিনবার লিগ চ্যাম্পিয়ন হন তিনি।
অবসরের পরের বছরই কোচিং পেশায় নাম লেখান আমোরিম। পর্তুগালের তৃতীয় সারির ক্লাব সাসা পিয়ার কোচ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলেও কোচিংয়ের জন্য প্রয়োজনীয় প্রাতিষ্ঠানিক যোগ্যতা না থাকায় ফেডারেশন তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে। এরপর সাসা পিয়ার দায়িত্ব থেকে সরে গিয়ে জটিলতার অবসান করে এক বছর পরই আবার ফেরেন কোচিংয়ে।
২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে এবার পর্তুগিজ প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব ব্রাহার রিজার্ভ দলের কোচ হন তিনি। ওই বছরের ডিসেম্বর মাসেই ক্লাবটির তৎকালীন কোচ রিকার্দো সা পিন্তো বরখাস্ত হলে মুল দলের কোচ হিসেবে আমোরিমকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে তার অধীনে লিগ কাপ জেতে ব্রাহা।
২০২০ সালের মার্চে ব্রাহা ছাড়ার আগে দলটিকে মাত্র ১৩ ম্যাচের ১০টিই জেতান তিনি। ফলে দেশজুড়ে তার জনপ্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ে। তবে ইউরোপীয় ফুটবলের নজর কাড়েন তিনি ২০২১ সালে। সেই বছরের ৪ মার্চ স্পোর্তিংয়ের ম্যানেজার হয়ে আলোচনার জন্ম দেন এই কোচ।
তরুণ খেলোয়াড়দের নিজের ক্ষিপ্র গতি ও পজেশনাল ফুটবলের তালিম দিয়ে দুর্দান্তভাবে ২০২১-২২ মৌসুম শুরু করেন এই কোচ। নতুন এসব খেলোয়াড়দের দক্ষতা ও কোচের নতুন কৌশলের সঙ্গে মানিয়ে নিতে সময় লেগে যায় প্রতিপক্ষ দলগুলোর। আর সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ১৯ বছরের শিরোপাখরা কাটিয়ে স্পোর্তিংকে লিগ শিরোপা এনে দেন তিনি। এর পাশাপাশি ওই মৌসুমে আরও তিনটি ঘরোয়া ট্রফি জেতে স্পোর্তিং। গত চার বছরে তার অধীনে ২২৮ ম্যাচ খেলে তার ১৯৫টিতেই অপরাজিত স্পোর্তিং। এর মধ্যে ১৬২ ম্যাচে জয়, ৩৩ ম্যাচ ড্র এবং মাত্র ৩৩ ম্যাচ হেরেছে তার দল। ফলে স্পোর্তিংয়ে তার জয়ের হার ৭৩.৭ শতাংশ।
তাই স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসনের বিদায়ের পর থেকে ঠিক এমন একজনকেই যে খুঁজছিল ইউনাইটেড, তা বলাই বাহুল্য। অবশ্য ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে এসে তার কাজ শুরুর দিকে একেবারেই সহজ হবে না। এক দশকের বেশি সময় ধরে যে দুর্দশার মধ্যে দিয়ে চলেছে ক্লাবটি, সেখান থেকে খেলোয়াড়দের মনোভাবে পরিবর্তন এনে ইতিবাচক ধারায় ফেরাতে যথেষ্ট বেগ পেতে হবে এই কোচকে। হারের বৃত্তে ঘুরপাক খেতে খেতে ইউনাইটেডের খেলোয়াড়রাও খুঁজছে আশার আলো। তাই নাবিক হয়ে সেই আশার কূল দলটিকে তিনি দেখাতে পারেন কিনা, সেদিকে চাতকপ্রাণ হয়ে বসে থাকবে রেড ডেভিলস সমর্থকরা।