দুই বছরে ১০ লাখ নতুন কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতি
ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) ২০২২-২০২৪ মেয়াদের নির্বাচন আগামী ১৮ জুন। নির্বাচনকে সামনে রেখে অগ্রগামী প্যানেলের ভিশন ও নির্বাচনি ইশতেহার ঘোষণা করা হয়েছে, যেখানে দুই বছরের মধ্যে ১০ লাখ নতুন কর্মসংস্থান ও ৫ বিলিয়ন ডলারের ইন্ডাস্ট্রি তৈরির প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।
সম্প্রতি রাজধানীর একটি অভিজাত হোটেলে এই নির্বাচনি ইশতেহার ঘোষণা করেন প্রার্থী এবং ফুডপান্ডা বাংলাদেশের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আম্বারিন রেজা।
ই-কমার্স খাতে গত কয়েক বছরের অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরে স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমের উন্নয়নে ও ই-কমার্সে নতুন উদ্যোক্তাদের এগিয়ে নিতে একটি স্টার্টআপ অ্যাকাডেমি ও ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপন করার ঘোষণা দেন আম্বারীন রেজা। দেশীয় স্টার্টআপের গ্লোবাল কানেক্টিভিটি বাড়ানো, ইনভেস্টরদের সঙ্গে সংযোগ তৈরি করা, বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের আরও দক্ষ করা হবে সেই স্টার্টআপ অ্যাকাডেমির কাজ। এক কথায়, একটি স্টার্টআপকে গ্লোবালি এগিয়ে নিতে সহায়তা ও মেন্টরশিপের ব্যবস্থা করা হবে ই-ক্যাবের মাধ্যমে।
অগ্রগামী প্যানেলের ইশতেহার ঘোষণা করেন দেশের লজিস্টিকস খাতের অন্যতম সফল উদ্যোক্তা পেপারফ্লাই লিমিটেডের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী শাহরিয়ার হাসান। সদস্যদের জন্য অগ্রাধিকার সেবা ও তাদের দক্ষতার উন্নয়নে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে জানিয়ে শাহরিয়ার হাসান বলেন, সদস্যদের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তার পরিধি বাড়ানো হবে ও উদ্যোক্তাবান্ধব নীতিমালা প্রণয়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। পাশাপাশি ডিজিটাল নিরাপত্তা বিষয়ে উদ্যোক্তাদের সচেতন রাখতে তাদের জন্য আলোচনা ও কর্মশালা আয়োজন করা হবে। সর্বোপরি, দীর্ঘমেয়াদে আগামী চার বছরের মধ্যে বাংলাদেশের ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানকে বিশ্ববাজারে নিয়ে যেতে ই-ক্যাব অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে।
নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি ও সদস্যবান্ধব ই-ক্যাবের কথা উল্লেখ করে অগ্রগামী প্যানেলের প্রধান শমী কায়সার বলেন, আমরা ই-ক্যাবকে একটি সদস্যবান্ধব সংগঠন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই। পাশাপাশি, জেন্ডার সমতা নিশ্চিত করার জন্য আমরা ই-ক্যাবের সদস্যদের মধ্যে নারীদের অংশগ্রহণ ৫০ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্য ঠিক করেছি। নারী উদ্যোক্তার সংখ্যা বাড়ানোসহ সদস্যদের দক্ষতা উন্নয়নেও কাজ করব। এ ছাড়া আমরা দক্ষ জনবল ও সদস্যদের অংশগ্রহণে একটি শক্তিশালী কর্মীবাহিনী গড়ে তুলতে চাই, যারা আমাদের দেশের ই-কমার্স খাতকে সামনে এগিয়ে নেবে।
ডিজিটাল পেমেন্টের ওপর গুরুত্বারোপ করে অগ্রগামী প্যানেলের অন্যতম সদস্য আব্দুল ওয়াহেদ তমাল বলেন, ই-ক্যাবের কার্যক্রমকে সুসংহত করতে ও সংগঠনের নিজস্ব সচিবালয় ভিত্তিক কার্যক্রমকে শক্তিশালী করতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণে আমাদের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছি। যার মাধ্যমে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হবে বলে আমি বিশ্বাস করি। বাংলাদেশের ই- কমার্স খাতকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আমরা ক্রস বর্ডার পলিসি ও ডিজিটাল পেমেন্টকে জনপ্রিয় করতে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করব।
সারকারি নীতি অনুযায়ী সোশ্যাল মিডিয়ার কুটির উদ্যোক্তাকে মূল ধারায় নিয়ে আসতে এই প্যানেলের সদস্যরা কাজ করবে বলে জানিয়েছেন ই-হেলথ প্রতিষ্ঠান ডায়াবেটিস স্টোর প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ সাহাব উদ্দিন শিপন।
এই প্রতিশ্রুতির বাস্তবতা তুলে ধরে গণমাধ্যম কর্মীদের প্রশ্নের জাবাবে উই সভাপতি এবং রিভারি প্রধান নির্বাহী নাসিমা আক্তার নিশা জানিয়েছেন, এফ-কমার্স নারী উদ্যোক্তাদের ই-ক্যাবের মূল ধারায় নিয়ে আসতে আমরা কোভিড সময়ে উদ্যোক্তা হতে প্রশিক্ষণ দিয়েছি। আইসিটি বিভাগের অর্থায়ন সহায়তায় আগামী কয়েক মাসের মধ্যে এক হাজার নারী উদ্যোক্তা নিজেদের ওয়েব সাইটের অধীনে আসবে।
ইশতেহার ঘোষণার সময় অগ্রগামী প্যানেলের সদস্যসহ প্রযুক্তি খাত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। অগ্রগামী প্যানেলের সদস্যরা হচ্ছেন : শমী কায়সার (ধানসিঁড়ি ডিজিটাল), মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াহেদ তমাল (কম্পিউটার জগৎ), মোহাম্মদ সাহাব উদ্দিন শিপন (ডায়াবেটিস স্টোর), নাসিমা আক্তার নিশা (রিভারি), আসিফ আহনাফ (ব্রেকবাইট), মোহাম্মদ সাইদুর রহমান (ডিজিটাল হাব), এম ডি রুহুল কুদ্দুস ছোটন (ফোকাস ফ্রেম), শাহরিয়ার হাসান (পেপারফ্লাই) ও সৈয়দা আম্বারীন রেজা (ফুডপ্যান্ডা)।
১৮ জুন হবে ই-ক্যাব নির্বাচন। এ নির্বাচনে ভোটার রয়েছেন ৭৯৫ জন।
এক নজরে অগ্রগামী প্যানেলের নির্বাচনি ইশতেহার
* প্রাধান্য পাবে সদস্যদের দক্ষতা উন্নয়নে বিভিন্ন উদ্যোগ, অগ্রাধিকার সেবা নিশ্চিত করা ও স্মার্ট সেক্রেটারিয়েট প্রতিষ্ঠা।
* দেশীয় পণ্য ও উদ্যোক্তাদের আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নেওয়ার জন্য ক্রসবর্ডার পলিসি প্রণয়ন ও ডিজিটাল পেমেন্টকে জনপ্রিয় করা।
* ই-কমার্সের পেনিট্রেশন ১ শতাংশ থেকে ৪ শতাংশে নেওয়া।
* দেশীয় স্টার্টআপের মানোন্নয়ন, বিনিয়োগের উপযোগী করে তোলা ও গ্লোবাল কানেক্টিভিটি জন্য স্টার্টআপ একাডেমি ও ইনকিউবেশন সেন্টার প্রতিষ্ঠা।
* ই- বিজনেস সাপোর্ট সেন্টার স্থাপন ও নতুন প্রতিষ্ঠান অর্থায়নে ঋণের ব্যবস্থা করা।
* উদ্যোক্তাবান্ধব নীতি প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া ও বাস্তবায়ন।
* নারী উদ্যোক্তাদের দক্ষতা উন্নয়ন ও ই-কমার্স খাতে তাদের অংশগ্রহণ ৫০ শতাংশ উন্নত করা।