অপরূপ গুলবুনিয়া পায়রাপাড়
ছায়া সুনিবিড় এক গ্রাম। সে গ্রামের পথে যেতে যেতে দেখা মিলবে সবুজের নান্দনিক বাহার। দেখা মিলবে প্রকাণ্ড বটগাছ, ফসলি মাঠসহ নানা কিছু। এমন দৃশ্য কমবেশি সব গ্রামেই দেখা যায়। তবে এ গ্রামে এসবের পাশাপাশি দেখা যাবে বিশেষ কিছু। গ্রামটির নাম গুলবুনিয়া। বরগুনা সদর উপজেলার পৌরসভা শহর থেকে মাত্র আট কিলোমিটার দূরত্বে এই গ্রাম। এ গ্রামের মূল আকর্ষণ পাশ দিয়ে বয়ে চলা পায়রা নদী। গুলবুনিয়া গেলেই দেখা যাবে প্রমত্তা পায়রার অপরূপ সৌন্দর্য। পাশাপাশি নদীর বুকে শত জেলের মাছ ধরার কর্মযজ্ঞ।
পায়রা নদীর আদি নাম বুড়িশ্বর। এ নদীর দৈর্ঘ্য ৯০ কিলোমিটার। নদীটির প্রস্থ একেক জায়গায় একেক রকম। গুলবুনিয়া উপকূলে এ নদীর প্রস্থ কমবেশি এক কিলোমিটার। নদীটি গুলবুনিয়া ছেড়ে কিছুদূর দক্ষিণে এগিয়ে মিলেছে বঙ্গোপসাগরে। আর তাই, ঢেউ ও জোয়ার-ভাটার চাপ গুলবুনিয়াকে করে তোলে ভাঙন-কবলিত। সেই ভাঙন থেকে গ্রামটিকে বাঁচাতে গুলবুনিয়ার পাড়ে গড়ে তোলা হয়েছে ব্লক-বাঁধ। সেই বাঁধটিই এখন ভ্রমণপিপাসুদের অন্যতম তৃপ্তির খোরাক হয়ে উঠেছে।
স্থানীয়রা এ জায়গাটির নাম দিয়েছে ‘বরগুনার সেন্ট মার্টিন’। মুক্ত বাতাসে বুক ভরে অক্সিজেন নিতে প্রতিনিয়ত এখানে ছুটে যান স্থানীয় প্রকৃতিপ্রেমিকরা। বরগুনায় কোনো অতিথির আগমন হলে তাঁরা একবার হলেও দেখে আসেন স্থানটি। নদীর ওপারেই বরগুনার আরেকটি উপজেলা ‘তালতলি’। তালতলি থেকেও ট্রলার নিয়ে অনেকে ঘুরতে যান গুলবুনিয়ায়। গুলবুনিয়া ইদানীং ভালোলাগার স্থানে পরিণত হয়েছে এ জেলার মানুষের কাছে। আর তাই নবদম্পতি কিংবা প্রেমিক-প্রেমিকা মিলে সময় পেলে বেড়িয়ে আসেন গুলবুনিয়ার পায়রাপাড় থেকে। জীবনের একান্ত সুন্দর কিছু মুহূর্তের সাক্ষী হয় গুলবুনিয়ার পায়রাপাড়। দু-চারজন একান্ত আপনজন নিয়ে জন্মদিন পালন করতে অনেকেই ছুটে যান সেখানে। নদীপাড়ে দাঁড়িয়ে সূর্যাস্ত দেখার অন্যতম জায়গা এটি। সূর্যাস্তের আলোয় দর্শনার্থীরা নিজের মনকে রাঙিয়ে তোলেন স্বপ্নরঙ্গে।
যাতায়াত : ঢাকার সায়েদাবাদ বা গাবতলী থেকে বাসে করে সরাসরি বরগুনা যাওয়া যাবে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা ভাড়ায়। অথবা লঞ্চে যাওয়া যাবে বরগুনা। এ ক্ষেত্রে দুজনের কেবিনের ভাড়া ২২০০ টাকা এবং একজনের কেবিন ভাড়া ১২০০ টাকা। ডেকে গেলে ভাড়া পড়বে ২০০ টাকা। এরপর লোকাল যানবাহনে গন্তব্যে। তবে হ্যাঁ, শুধু গুলবুনিয়া দেখার উদ্দেশ্যে বরগুনা গেলে আপনার ভ্রমণে শূন্যতা রয়ে যাবে। তাই বরগুনায় যান কমপক্ষে দুই-তিন দিনের ভ্রমণ পরিকল্পনা করে। গুলবুনিয়ার মতোই ঘুরে দেখুন বালিয়াতলি পায়রাপাড়, পাথরঘাটা উপজেলার হরিণঘাটা বনাঞ্চল, লালদিয়া, বিষখালী নদীর মাঝে জেগে থাকা মাঝের চর ও টুলুরচর, বেতাগীর বিবিচিনি মসজিদ, তালতলির সোনাকাটা ইকোপার্ক, শুভসন্ধ্যা সৈকত, রাখাইন পাড়াসহ অনেক কিছু। আর থাকার জন্য বরগুনায় রয়েছে একাধিক আবাসিক হোটেল।
যদিও করোনার কারণে স্থবির হয়ে আছে জনজীবন। সেই রেশ পড়েছে দর্শনীয় স্থানগুলোতে। করোনার প্রভাবে নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েছে পায়রাপাড়ের একাধিক দর্শনীয় স্থান। আর মানুষের চাপ কম থাকার সুযোগে প্রকৃতি সেজেছে তার আপন ইচ্ছেয়। পায়রাপাড়ের সবুজ গুলবুনিয়ার সেই অপরূপ সৌন্দর্যের ভুবনে আপনাকে স্বাগতম।