ঘুরে আসুন রায়েরকাঠির প্রাচীন মন্দির
মুঘল সম্রাট শাহজাহানের শাসনামলে, ১৬৫৮ সালে শ্রীনাথ রায়ের ছেলে রাজা রুদ্র নারায়ণ রায় চৌধুরী বর্তমান পিরোজপুর অঞ্চলে প্রতিষ্ঠা করেন জমিদারি। তখন এখানেই জঙ্গল কেটে পরিষ্কার করে গড়ে তোলেন রাজবাড়ি। নির্মাণ করেছিলেন এক মন্দির। প্রায় ৪০০ বছর আগে নির্মিত মন্দিরটি আজও কালের সাক্ষী হয়ে আছে। খসে পড়েছে মন্দিরের পলেস্তারা। তবু এই নিদর্শন নিজ চোখে দেখতে প্রতিদিন ছুটে যাচ্ছে ইতিহাস-ঐতিহ্য সন্ধানপিয়াসীরা।
পিরোজপুর শহর থেকে তিন কিলোমিটার উত্তরে রায়েরকাঠি গ্রামে রাজবাড়িটির অবস্থান। ২০০ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত রাজবাড়ির পূর্ব দিকে অবস্থিত এ মন্দির। প্রাচীন এ মন্দিরে রয়েছে ৭৫ ফুট উচ্চতার ১১টি মঠ। অযত্ন-অবহেলার মধ্যেও মনোমুগ্ধকর হয়ে আছে সেসব শৈল্পিক স্থাপনা। প্রায় ৩০ ইঞ্চি মোটা ইটের গাঁথুনি, চুন-সুরকির মিশ্রণে তৈরি মন্দিরের ছাদ, পাথরের শিবমূর্তিসহ বহু প্রাচীন স্মৃতিচিহ্ন বহন করে আছে মন্দিরটি। কষ্টিপাথরের মহামূল্যবান কালী ও শিবমূর্তি এখানকার মূল আকর্ষণ। সাড়ে পাঁচ ফুট দৈর্ঘ্যের ২৫ মণ ওজনের শিবলিঙ্গের কষ্টিপাথরের মূর্তি রয়েছে এখানে। যেটি উপমহাদেশের সর্ববৃহৎ শিবমূর্তি।
মন্দিরটি দর্শনার্থীদের কাছে আকর্ষণের অন্যতম কারণ এখানকার টিয়া পাখি। প্রাচীনকাল থেকে মন্দির দেয়ালের প্রকোষ্ঠে বাস করছে অসংখ্য টিয়াপাখি। স্থানীয়রা জানায়, এসব টিয়া পাখিকে স্থানীয়রা বিরক্ত করে না। ফলে স্থানটি পাখির অভয়াশ্রমে পরিণত হয়েছে। টিয়া পাখিরা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মন্দিরটির অন্যতম অনুসঙ্গে পরিণত হয়েছে। মন্দির এলাকার ভেতরেই রয়েছে বিশাল পদ্মপুকুর। পদ্মফুলের হাসিতে দারুণ রূপ ধারণ করে পুকুরটি।
কালের বিবর্তনে ধ্বংসের পথে মন্দিরের বেশির ভাগ ভবন। সংস্কারের অভাবে সুউচ্চ মঠগুলো ভেঙে যাচ্ছে। জানা যায়, রাজপ্রথা বিলুপ্তির পর চালু হয় জমিদারি প্রথা। আর রুদ্র নারায়ণের উত্তরসূরিরা রাজা থেকে পরিণত হন জমিদারে। একসময় রাজবাড়িতে মহিষ বলি দিয়ে ঘটা করে কালী পূজা হতো। তবে জমিদারি প্রথা বিলুপ্তির পর রাজবাড়ি জৌলুশ হারায়। তবে প্রাচীন ঐতিহ্য হিসেবে এখনো এ মন্দিরে বছরে দুবার মেলার আয়োজন করা হয়। ভৈমী একাদশী ও শিব চতুর্দশীতে আয়োজিত মেলায় সনাতন ধর্মাবলম্বীরা মিলিত হন এখানে।
যাতায়াত : ঢাকা থেকে লঞ্চ কিংবা বাসে যাওয়া যাবে পিরোজপুর। এরপর শহরের সিএ মোড় থেকে স্থানীয় অটোরিকশায় ১০ টাকা জনপ্রতি ভাড়ায় যাওয়া যাবে মন্দির অবধি। থাকা-খাওয়ার জন্য ‘ডাক দিয়ে যাই’ বা ‘উদ্দীপন’ এনজিওর রেস্ট হাউস ভালো হবে। এ ছাড়া আবাসিক একাধিক হোটেল তো রয়েছেই। তাই একবার ঘুরে আসুন রায়েরকাঠির প্রাচীন মন্দির থেকে। পিরোজপুর গেলে ভৈরব ব্রিজে গোধূলি লগ্ন কাটাতে ভুলবেন না যেন।