সাতলার বিলে শাপলার খোঁজে
ভোরের অপেক্ষায় ছিলাম। কারণ আমাদের গন্তব্য শাপলার জন্য বিখ্যাত বিল ‘সাতলা’। বিলজুড়ে শাপলা। আগে শুনেছি, সাতলার শাপলার রূপে মুগ্ধ না হয়ে উপায় নেই। রোদের তীব্রতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে লজ্জা পেয়ে বন্ধ হয়ে যায় ফুটন্ত রক্তলাল শাপলাগুলো। তাই সকাল-সকাল যাত্রা করা ছাড়া উপায় নেই।
বৃষ্টিভেজা বাতাস ঠেলে ছুটে চলছে আমাদের বাস। বরিশাল নথুল্লাবাদ বাস স্ট্যান্ড থেকে আমাদের যাত্রা শুরু হয়। আমার সঙ্গে আটজন সফরসঙ্গী, সবাই আজ উৎফুল্ল শাপলার বিল সাতলায় যাচ্ছে বলে। বাসের জানালা দিয়ে হু হু করে আসা হাওয়া শরীরটাকে ঠাণ্ডা করে দিচ্ছিল। এমন শীতল হাওয়ার পরশ নিতে নিতে আমাদের বহনকারী বাসটি সাতলা পৌঁছে গেল মাত্র দেড় ঘণ্টার ব্যবধানে।
পথের একপাশে সন্ধ্যা নদী, আর অন্য পাশে লাল শাপলার সাতলা বিল। বিলের দিকে তাকাতেই যত দূর চোখ যায় লাল শাপলার মুগ্ধকর শোভা চোখ জুড়িয়ে দেয়। বরিশাল সদর থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার দূরত্বের উজিরপুর উপজেলার সাতলা গ্রামে অবস্থিত এই শাপলা বিল। এ যেন সত্যিই প্রাকৃতিক স্বর্গ।
সাতলা বিলের বেশির ভাগই লাল শাপলা, তবে কম হলেও সাদা শাপলা আছে। জ্যৈষ্ঠ থেকে কার্তিক মাস পর্যন্ত এ অঞ্চলের বিলগুলোতে পানি আটকে থাকে। ভাদ্র-আশ্বিন-কার্তিক এই তিন মাস এ অঞ্চলের বিলগুলোতে প্রচুর শাপলা জন্ম নেয় প্রাকৃতিকভাবে। শুধুই সৌন্দর্যের জন্য নয়, এখানকার দরিদ্র মানুষগুলোর শাপলানির্ভর কাজ করে আর্থিকভাবে টিকে থাকে। সকালের আলোর তীব্রতা বাড়ার আগেই শাপলাগুলো নিয়ে হাটে যেতে হয়। তাই খুব সকাল থেকে শুরু হয় পারিবারিক এমন কর্মযজ্ঞ। স্থানীয় বাজারে প্রতিটি শাপলার আঁটি বিক্রি হয় ৮ থেকে ১০ টাকায়।
এ অঞ্চলে বড়-ছোট প্রায় ২০টি শাপলার বিল রয়েছে, যেখানে প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নেয় এই ফুল।
আমরা একটি নৌকা ভাড়া করলাম, বড় কালবিলা ঘাট থেকে নৌকা নিয়ে মাঝ বিলে ঘুরে আসা ছিল আমাদের ভ্রমণের প্রধান উদ্দেশ্য, শাপলার মাঝে যখন আমাদের নৌকা ছুটে চলছে। ঘুরতে আসা সবাই যেন নিশ্চুপ হয়ে শুনছিল শাপলার সঙ্গে শাপলার কথোপকথন। এই রূপ বিমোহিত করে পর্যটকদের, তাই প্রতিনিয়ত শাপলার গ্রামে বাড়ছে পর্যটকদের আগমন।
যাতায়াত : প্রথমে লঞ্চ বা বাসে নিজের মতো করে বরিশাল সদরের নথুল্লাবাদ অবধি যেতে হবে। সেখান থেকে সাতলার উদ্দেশে বাস ছেড়ে যায়। নথুল্লাবাদ থেকে রিজার্ভ গাড়িতেও যাওয়া যাবে সাতলা পর্যন্ত।