মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে আজও জীবন্ত বিসর্জন ও অর্জন
টাঙ্গাইলের গোপালপুর পৌর এলাকার সুতিপলাশ গ্রামের শহীদুল ইসলাম লালু। মাত্র ১৩ বছর বয়সে ঝাঁপিয়ে পড়েন মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে। বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর সঙ্গে নেমে পড়েন হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে। ছিনিয়ে আনেন লাল-সবুজের পতাকা। একইভাবে যশোরের গাওঘরা গ্রামের সিদ্দিকুর রহমান বাংলাদেশের সর্বকনিষ্ঠ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন। নয় বছর বয়সে তিনি ঝাঁপিয়ে পড়েন মহান মুক্তিযুদ্ধে। স্টেনগান নিয়ে রুখে দাঁড়ান পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে। তাঁদের কথা ও ছবি ছাড়াও মুক্তিযুদ্ধের আরো অনেক স্মৃতি সংরক্ষণ করা হচ্ছে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় অবস্থিত মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে।
খুলনার দীঘলিয়া থানার সিনেহাটি গ্রামের চার মাস বয়সী রেহানার রক্তে রঞ্জিত জামাটিও সে রকম হৃদয়বিদারক স্মৃতির একটি। ১৯৭১ সালের ৩০ এপ্রিল পাকিস্তানি বাহিনী যখন চার মাস বয়সী রেহানাদের বাড়ি ঘেরাও করে, তখন তার মুক্তিযোদ্ধা বাবা আবদুস সালাম খান বাড়িতে ছিলেন না। পিতাকে না পেয়ে বর্বর পাকিস্তানি বাহিনী শিশু রেহানাকে উঠানে ফেলে পায়ের নিচে পিষে নির্মমভাবে হত্যা করে। তখন রেহানার পরনে ছিল এই জামা। রেহানার কোনো ছবি নেই, নেই কোনো স্মৃতিচিহ্ন। এই জামা কেবল নীরব সাক্ষী হয়ে আছে ইতিহাসের বর্বরতম গণহত্যার, একটি মৃত্যুর।
এমনই মুক্তিযুদ্ধের হাজারো স্মৃতিচিহ্ন নিয়ে গড়ে উঠেছে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। যুদ্ধের বারুদপোড়া গন্ধ, বধ্যভূমির গলিত লাশ, মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাঁথাই যেন তরুণ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরছে এ জাদুঘর।
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর প্রতিষ্ঠার ইতিহাস
মহান মুক্তিযুদ্ধ শেষ হওয়ার পরও বাংলাদেশের রাজনৈতিক বিভিন্ন পটপরিবর্তনের কারণে যখন প্রায় অতল গহিনে হারিয়ে যাওয়ার পথে ছিল মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি, তখনই কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা নিজেদের বিবেকের তাড়নায় ব্যক্তি উদ্যোগে গড়ে তোলেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। আটজন ট্রাস্টির অনুদানে প্রতিষ্ঠিত হয় এই মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। তাঁরা হলেন আক্কু চৌধুরী, সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, নাট্যব্যক্তিত্ব আলী যাকের, সারা যাকের, স্থপতি রবিউল হুসাইন, লেখক মফিদুল হক, প্রকৌশলী জিয়া উদ্দিন তারিক আলী ও ডা. সারওয়ার আলী।
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ব্যবস্থাপক মাহবুব আলম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘১৯৯২ সাল থেকেই মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের চিন্তা শুরু হয়। তবে শুরুতেই কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর হিসেবে যাত্রা হয়নি। হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি ট্রাস্ট হিসেবে। পরে ১৯৯৬ সালের ২২ মার্চ ঢাকার সেগুনবাগিচায় ভাড়া বাড়িতে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের যাত্রা শুরু হয়। শুরুতেই বিভিন্ন বধ্যভূমির মাটি আমরা সংগ্রহ করি। পরে দেশের মানুষ এ বিষয়ে খুব আগ্রহ দেখিয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রথমেই এগিয়ে আসেন খুলনার মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সালাম খান, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যার চার মাস বয়সী শিশুটিকে উঠোনে পায়ে পিষে মারে। তাঁর কাছে মেয়ের আর কোনো স্মৃতি ছিল না। তিনি তা আমাদের দিয়ে দেন। এভাবেই তিলতিল করে গড়ে উঠেছে এই জাদুঘর। পরে ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সহায়তায় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মিরপুর মুসলিম বাজার ও জল্লাদখানা বধ্যভূমি খননের কাজ সম্পন্ন করে এবং পরে ২০০৮ সালে জল্লাদখানা বধ্যভূমিতে একটি স্মৃতিপীঠ নির্মাণ করে। এ ছাড়া বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের চত্বরের বধ্যভূমি এর আওতাধীন।’
এই জাদুঘরে যা আছে
সেগুনবাগিচায় ছিমছাম তিনতলা এক ভাড়া বাড়িতে গড়ে উঠেছে এই জাদুঘর। জাদুঘরের প্রবেশপথেই রয়েছে শিখা চিরন্তন। রয়েছে শহীদ বুদ্ধিজীবী ডাক্তার ফজলে রাব্বির ব্যবহৃত গাড়িটি। ডাক্তার রাব্বি গণহত্যায় শিকার ব্যক্তিদের মৃত্যুর ঘটনায় ভুয়া ‘ডেথ সার্টিফিকেট’ প্রদানে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন। বাঙালিদের প্রতি পাকিস্তান সরকারের বৈষম্যমূলক চিকিৎসাসেবার প্রতিবাদ হিসেবে ‘বেস্ট প্রফেসর অব কম্বাইন্ড পাকিস্তান’ পুরস্কার গ্রহণেও অসম্মতি জানিয়েছিলেন তিনি। মূলত জাদুঘরকে ছয়টি গ্যালারিতে ভাগ করা হয়েছে। এসব গ্যালারিতে ফুটে উঠেছে মুক্তিযোদ্ধাদের অজস্র সব স্মৃতি।
প্রথম গ্যালারি
বাংলার অতীত ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের সূচনা স্বাধীনতার জন্য বাঙালিদের সংগ্রামের পরিচয় তুলে ধরা হয়েছে। এখানে তিতুমীরের বাঁশের কেল্লার রেপ্লিকা, প্রাচীন আমলের যুদ্ধাস্ত্র, ঢাল-বর্মসহ দুর্গ ও নকশার প্রতিকৃতিসহ বিভিন্ন স্মৃতিচিহ্নি রয়েছে।
দ্বিতীয় গ্যালারি
এই গ্যালারিতে পাকিস্তানি শাসনামল থেকে ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচন পর্যন্ত, এ ছাড়া ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে মুসলমি লীগের ভরাডুবি ও যুক্তফ্রন্টের বিজয়। এ ছাড়া ১৯৬৯ সালের পাকিস্তানের নানা বৈষম্য ও শোষণের বিরুদ্ধে আন্দোলনের নানা সময়ের চিত্র রয়েছে। একই সঙ্গে করে নিয়েছে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার অন্যতম অভিযুক্ত সার্জেন্ট জহুরুল হকের ব্যবহৃত ঘড়ি, চিরুনি, ব্যবহৃত রং-তুলিও।
তৃতীয় গ্যালারি
এই গ্যালারিতে রয়েছে মহামূল্যবান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ছবি ও ঘোষণাপত্র। এ ছাড়া ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি হানাদারদের নৃশংস গণহত্যাকাণ্ড, লাখো শরণার্থীর দুর্গতির চিত্র। এ ছাড়া ১৭ এপ্রিল অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের দুর্লভ কয়েকটি আলোকচিত্রও স্থান পেয়েছে। একই সঙ্গে স্থান করে নিয়েছে জয় বাংলা বেতার কেন্দ্রের যন্ত্রাংশ। সিরাজগঞ্জের জ্যোতি চৌধুরী ও সাত্তার আলফা নামের দুই তরুণের তৈরি ২৫ মাইল ব্যাসার্ধজুড়ে বিস্তারিত ক্ষমতাসম্পন্ন রেডিও ট্রান্সমিটার। ২৮ মার্চ স্বাধীনতার পক্ষে এই বেতারের প্রচার শুরু হয়। চূড়ান্ত বিজয় পর্যন্ত চলে এর অনিয়মিত প্রচার।
চতুর্থ গ্যালারি
এই গ্যালারিতে অস্থায়ী সরকারের মন্ত্রিসভা ও প্রশাসন সম্পর্কিত বিভিন্ন জিনিস ও দলিল, যুদ্ধকালীন বিভিন্ন দুর্লভ আলোকচিত্র রয়েছে। এ ছাড়া দর্শকের চোখে পড়বে মুক্তিযুদ্ধে নারী নির্যাতনের নানা চিত্র। এই গ্যালারিতে রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতার ব্যবহৃত ব্যাগ। তাঁকে ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি বাহিনী ধরে নিয়ে বাড়ির পাশের বাগানেই গুলি করে নির্মমভাবে হত্যা করে। মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের ব্যবহৃত শার্ট ও সোয়েটার, অস্থায়ী সরকারের মন্ত্রিপরিষদের সদস্য এ এইচ এম কামরুজ্জামানের চশমা, পাঞ্জাবি ও পানের বাটা। রয়েছে মুক্তিবাহিনীর প্রধান সেনাপতি ও সেক্টর কমান্ডারদের ব্যবহৃত ক্যামেরা, শার্ট, টাই ও চশমা। এই গ্যালারিতে ঢুকলে চোখে পড়বে একটি বড় ‘দা’, যা দিয়ে সকিনা ওরফে ঘটকী বেগম মুক্তিযুদ্ধে পাঁচ রাজাকারকে ঘায়েল করেন।
এ ছাড়া চতুর্থ থেকে পঞ্চম গ্যালারিতে যাওয়ার পথে ব্যালকনিতে রয়েছে ১১টি সেক্টরে বিভক্ত বাংলাদেশের বিশাল মানচিত্র। সেক্টরের কমান্ডার এবং আঞ্চলিক বাহিনীর প্রধান যোদ্ধাদের ছবিসংবলিত এ মানচিত্রে আছে ১১ সেক্টর নিয়ে বিস্তারিত বিবরণ। তৎকালীন দেশি-বিদেশি পত্রপত্রিকায় বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ বিষয়ক প্রতিবেদন।
পঞ্চম গ্যালারি
এ গ্যালারিতে রয়েছে মুক্তিযোদ্ধা ও পাকিস্তানি হানাদারদের ব্যবহৃত অস্ত্রের এক বিপুল প্রদর্শনী। মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যবহৃত এলএমজি, রাইফেল, পিস্তল, অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক মাইন, পাকিস্তানি ঘাঁটি থেকে প্রাপ্ত সেনাবাহিনীর উচ্চতর অফিসারের পদক, মর্টার শেল, ট্যাঙ্কবিধ্বংসী রাইফেলসহ বিভিন্ন অস্ত্রশস্ত্র। রয়েছে জর্জ হ্যারিসনের কনসার্ট ফর বাংলাদেশের পোস্টার এবং কনসার্টে রবিশঙ্কর, বব ডিলান, রিঙ্গো স্টার, এরিক ক্ল্যাপটন, বিলি প্রিস্টানের গাওয়া গানের রেকর্ড। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সহায়তায় বিশ্বের নানা প্রান্তের মানবতাবাদী বিভিন্ন শিল্পী, যেমন : লি ব্রেনন, পেটি থমাস, জন ব্রাউনসহ বহু শিল্পীর গাওয়া গানের অডিও ক্যাসেটও সংরক্ষিত আছে। ৫ নম্বর গ্যালারিতে ঢোকার মুখে চোখে পড়ে ১৯৭১ সালের ঢাকা খিলগাঁও রেলগেটের পাশে একটি ডোবায় পড়ে থাকা শহীদ মুক্তিযোদ্ধা বাকী ও সহযোদ্ধা বাদলের লাশের চিত্র।
ষষ্ঠ গ্যালারি
সর্বশেষ এ গ্যালারিতে রয়েছে মিরপুর মুসলিম বাজার ও জল্লাদখানা বধ্যভূমি থেকে উদ্ধার করা কঙ্কাল, শহীদদের ব্যবহৃত বস্তুসামগ্রী, পত্র, ডায়েরি, নোটবুক ইত্যাদি। এ ছাড়া পরাজিত পাকিস্তানি বাহিনীর ফেলে যাওয়া অস্ত্রসম্ভারের নমুনা, সাত বীরশ্রেষ্ঠর ছবি ও তাদের যুদ্ধের বিবরণী, রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে পড়ে থাকা বুদ্ধিজীবীদের লাশের আলোকচিত্র। এ ছাড়া আলবদর, আলশামস, রাজাকার বাহিনীসহ পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের চিত্র এবং তাদের কাপুরুষোচিত জঘন্যতম হত্যাযজ্ঞের নিদর্শন। ১৯৯৯ সালে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের উদ্যোগে মিরপুর ১২ নম্বর সেকশনের ডি ব্লকে নূরী মসজিদসংলগ্ন মুসলিম বাজার বধ্যভূমির একটি পরিত্যক্ত কুয়া থেকে মাথার খুলিসহ পাঁচ শতাধিক হাড় উদ্ধার করা হয়। একই বছর মিরপুর ১০ নম্বর সেকশনের ডি ব্লকের ১ নম্বর এভিনিউতে জল্লাদখানা বধ্যভূমি থেকে ৭০টি মাথার খুলি এবং পাঁচ হাজার ৩৯২টি ছোট-বড় হাড় পাওয়া যায়। এসব হাড় এ গ্যালারিতে রাখা আছে। এককথায় মুক্তিযুদ্ধের প্রায় পূর্ণাঙ্গ বিবরণী সংরক্ষিত আছে।
ভ্রাম্যমাণ জাদুঘর
মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন নিদর্শন দিয়ে সাজিয়ে ২০০১ সালে তৈরি করা হয়েছে ভ্রাম্যমাণ জাদুঘর। সারা দেশে জেলা-উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে ভ্রাম্যমাণ জাদুঘরের মাধ্যমে প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। একটি বৃহৎ আকারে বাসের অভ্যন্তরে এ জাদুঘরের প্রদর্শনী করা হয়।
প্রস্তুত হচ্ছে নতুন জাদুঘর
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে আড়াই বিঘা জমির ওপর নির্মিত হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের স্থায়ী ভবন। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসেই সেখানে জাদুঘর স্থানান্তর করা হবে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস উপস্থাপনের জন্য নতুন জাদুঘর ভবনে দুই ধরনের প্রদর্শনীর ব্যবস্থা থাকবে। স্থায়ী প্রদর্শনীর জন্য গ্যালারির আয়তন হবে সুপরিসর এবং নিয়মিতভাবে অস্থায়ী প্রদর্শনী আয়োজনের জন্য পৃথক গ্যালারি থাকবে।
এ বিষয়ে জাদুঘরের ব্যবস্থাপক মাহবুব আলী এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘দুই লাখ ২০ হাজার বর্গফুটের এই জাদুঘরে দুটি গবষেণা ইনস্টিটিউট হবে, যাতে একশ কি দুইশ বছর পরও গবেষকরা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কাজ করতে পারবেন।’ তিনি আরো বলেন, ‘বর্তমানে আমাদের কাছে ১৭ হাজার স্মৃতিচিহ্ন রয়েছে। স্থান স্বল্পতার কারণে মাত্র এক হাজার ৩০০ স্মৃতিচিহ্ন বা নিদর্শন প্রদর্শন করছি।’ মাহবুব আলীর কথা থেকেই জানা গেল, জাদুঘর নির্মাণে মোট ১০২ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। এর প্রায় ৩০ কোটি টাকা দিয়েছেন সাধারণ মানুষ।