মৃৎ শিল্পীর ডেরায়
একঘেয়ে নগর জীবনে কি ক্লান্ত হয়ে গেছেন? তাহলে বের হয়ে পড়ুন নতুন কোনো ভ্রমণ গন্তব্য। ভ্রমণ আপনার মনে এনে দিতে পারে প্রশান্তি। আপনার ভ্রমণ গন্তব্য হতে পারে নিভৃত গ্রামের কোনো মৃৎ শিল্পীর আঙিনা। ঘোরাঘুরি আপনার দেহে ও মনে ভরে দেবে প্রশান্তিতে। এছাড়া ভ্রমণের কারণে বিভিন্ন জায়গায় নিত্যনতুন অভিজ্ঞতা হবে আপনার, যা পরবর্তী জীবনে অনেক কাজে দেবে। ঢাকার থেকে কাছের দূরত্ব গাজীপুরের ছাতিয়ানি গ্রামে ঘুরে দেখে আসতে পারেন প্রাচীন মৃৎশিল্পীদের জীবনধারা। সেখানকার পাল পরিবারের বংশ পরম্পরায় শত বছর ধরে বসতি তাদের। শত দারিদ্র্যতা থাকার পরে ও তারা তাদের পূর্বপুরুষের আদি পেশা বদলাননি।
বিশ্বজুড়ে প্রত্যেকটি দেশের রয়েছে নিজস্ব শিল্প ও সংস্কৃতি। এই শিল্প ও সংস্কৃতির পরিচয়েই পরিচিত হয় সেই দেশ বা জাতি। একেকটি শিল্পের বিস্তারের পিছনে রয়েছে একেকটি দেশ বা জাতির অবদান। তেমনই একটি শিল্প হচ্ছে মৃৎ শিল্প। মৃৎশিল্প শব্দটি ‘মৃৎ’ এবং ‘শিল্প’ এই দুই শব্দের মিলত রূপ । ‘মৃৎ’ শব্দের অর্থ মৃত্তিকা বা মাটি আর ‘শিল্প’ বলতে এখানে সুন্দর ও সৃষ্টিশীল বস্তুকে বোঝানো হয়েছে। এজন্য মাটি দিয়ে দিয়ে তৈরি সব শিল্পকে কর্মকেই মৃৎ শিল্পবলা যায়। এই ধরনের কাজের সাথে জড়িত তাদেরকে কুমার বলা হয়। প্রাচীনকাল থেকে বংশাণুক্রমে গড়ে ওঠা গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী মৃৎ শিল্প আজ বিলুপ্তির পথে। অতীতে গ্রামের সুনিপণ কারিগরের হাতে তৈরী মাটির জিনিসের কদর ছিলো অনেকাংশ বেশি। পরিবেশ বান্ধব এ শিল্প শোভা পেত গ্রামের প্রত্যেক বাড়িতে বাড়িতে।
গ্রামীণ পথ নেই কোনো কোলাহল গ্রামীণ মেঠো পথ পাড়ি দিয়ে আপনাকে পৌছাতে হবে পাল পাড়ায়। অতি সাধারণ পরিবেশ নেই কোনো কোলাহল। যে যার কাজে ব্যস্ত। ১১০টি পরিবার আছে যাদের জীবন ধারণ এই কাজের ওপর নির্ভরশীল। পাল পাড়ায় প্রবেশের পর দেখবেন প্রত্যেকের বাড়ির আঙিনায় তাদের তৈরি কৃত দ্রব্য সামগ্রী রোডে শুকাতে দিয়েছে। বিভিন্ন ধরনের মাটির খেলনা, পাতিল, প্রদীপ, কলস, পাখির ঘর আরও কতো কি। কেউ মাটির পুতুল বানাচ্ছে, কেউ বানাচ্ছে মঙ্গল প্রদীপ। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হল এখানকার সবাই এই কাজ করেন। আট বছরের বালক থেকে শুরু করে নব্বই বছরের বয়স্ক লোকটি কাজ করছেন। দশ পুরুষ ধরে এই কাজ করে যাচ্ছেন।
যাবেন যেভাবে-
ঢাকা থেকে বিভিন্নভাবে যেতে পারবেন গাজীপুরে ছাতিয়ানি গ্রামে যাবার প্রথম পথ হলো গুলিস্তান থেকে নরসিংদীগামী বাসে উঠে নামতে হবে নরসিংদীর পাঁচদোনায়। সেখান থেকে কালিগঞ্জগামী বাসে উঠতে হবে। নামতে হবে কাপাসিয়া মোড়ে। সেখান থেকে সি এন জি করে চলে যান ছাতিয়ানি। মহাখালী থেকে যেতে চাইলে আপনাকে উঠতে হবে চলনবিল/ বাদশা বাসে। নামতে হবে কাপাসিয়া মোড়ে। কাপাসিয়া মোড় থেকে সি এন জি করে চলে যান ছাতিয়ানী গ্রামে। আপনি গাড়ি ভাড়া করে যেতে পারেন কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে।