আগামী সপ্তাহেই বাখমুত ছাড়বে ওয়াগনার, জানালেন প্রিগোজিন
রাশিয়ার হয়ে ইউক্রেনে লড়ছে রুশ ভাড়াটে সৈন্যদল ওয়াগনার গ্রুপ। গত গ্রীষ্ম থেকে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় ছোট শহর বাখমুতে রুশ বাহিনীর সঙ্গে মিলে লড়ছে গ্রুপটি। তাদের প্রধান উদ্দেশ্য শহরটির নিয়ন্ত্রণ নেওয়া। সেখানে বেশ অগ্রগতি হলেও আজ শুক্রবার (৫ মে) এক আকস্মিক ও নাটকীয় ঘোষণা দিয়েছেন ওয়াগনার প্রধান ইয়েভজেনি প্রিগোজিন। তিনি বলেছেন, ‘আগামী সপ্তাহেই বাখমুত ছেড়ে চলে যাবে আমাদের গ্রুপটি।’ খবর রয়টার্সের।
ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে চলা যুদ্ধে সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী ও দীর্ঘ লড়াই চলছে বাখমুতে। এ লড়াইয়ে বেশ ক্ষতি হয়েছে ভাড়াটে সৈন্যদলটির। এমনকি তাদের পর্যাপ্ত গোলাবারুদও সরবরাহ করা যাচ্ছে না। এর জেরেই শহরটি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রিগোজিন বলেন, ‘মে মাসের ১০ তারিখের মধ্যে আমরা শহরটি ছাড়ব।’ শহরটিতে তাদের জায়গায় রুশ সৈন্যদের অবস্থান নিতে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা প্রধানকে আহ্বান জানিয়েছেন ওয়াগনার বস।
এক বিবৃতিতে প্রিগোজিন বলেন, ‘আমি ওয়াগনার যোদ্ধাদের ও গ্রুপটির কমান্ডার হয়ে ঘোষণা করছি যে, আগামী ১০ মে ২০২৩ তারিখে আমাদের বাখমুত ইউনিটের স্থানে প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যরা থাকবে। আমাদের সৈন্যদের স্থানান্তর করে নিরাপদ স্থানে নেওয়া হবে ও আহতদের সুস্থ করা হবে।’
বাখমুত থেকে ওয়াগনারের ভাড়াটে সৈন্যদের সরিয়ে নেওয়া কারণ দেখিয়ে বিবৃতিতে প্রিগোজিন বলেন, ‘আমাদের কাছে পর্যাপ্ত গোলাবারুদ নেই। এ জন্য আমাদের সদস্যরা ধ্বংস হয়ে যেতে পারে।’
প্রতিবেদনে রয়টার্স বলছে, বাখমুত দখলের জন্য রাশিয়ার দীর্ঘ এবং ব্যয়বহুল প্রচেষ্টার নেতৃত্ব দিচ্ছে ওয়াগনার গ্রুপ। আর তিন সপ্তাহ আগে প্রিগোজিন বলেছিলেন, তার লোকেরা শহরটির ৮০ শতাংশেরও বেশি এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে।
তবে, প্রিগোজিনের সেই দাবিকে উড়িয়ে দিয়েছিল ইউক্রেনীয় বাহিনী। এমনকি পর্যাপ্ত গোলাবারুদ সরবরাহ করতে না পারায় রাশিয়ার প্রতিরক্ষা বাহিনীর ওপর ক্ষোভ বাড়ছিল ভাড়াটে গ্রুপটির।
প্রিগোজিনের কথা কতটুকু সত্য এ নিয়ে সংশয় রয়েছে। কারণ এর আগেও সৈন্য প্রত্যাহারের কথা জানিয়েছিলেন ওয়াগনার বস। অবশ্য পরে সেটিকে তামাশা হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন তিনি।
আজ দিনের শুরুর দিকে একটি ভিডিও বার্তা দেন প্রিগোজিন। যেখানে তার চারপাশে কয়েক ডজন মৃত ওয়াগনার সদস্যদের মরদেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়। ভিডিওতে প্রিগোজিন বলেন, ‘ওয়াগনার যোদ্ধারা চিৎকার করে শপথ করছিল প্রতিরক্ষা মন্ত্রী সের্গেই শোইগু ও চিফ অফ জেনারেল স্টাফ ভ্যালেরি গেরাসিমভকে। তবে, গোলাবারুদের অপর্যাপ্ততায় আজ ওয়াগনার সদস্যদের এই অবস্থা। এর জন্য দায়ী তারা।’
বিষয়টি নিয়ে এখনও কোনো মন্তব্য করেনি রাশিয়। এমনকি ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভকে রয়টার্সের পক্ষ থেকে মন্তব্যের জন্য অনুরোধ করা হলেও তিনি প্রিগোজিনের বিবৃতির প্রতিক্রিয়ায় কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
যুদ্ধের আগে বাখুমত ৭০ হাজার মানুষের শহর ছিল। ছোট এই শহরটির গুরুত্ব অপরিসীম ও দুপক্ষই এটির নিয়ন্ত্রণ নিতে মরিয়া। ওয়াগনার সৈন্যদের বাখমুত প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে সুপ্রিম কমান্ডার সম্বোধন করা এক বিবৃতিতে।
ওই বিবৃতিতে ওয়াগনার বস বলেন, ‘গোলাবারুদের অপর্যাপ্ততা ও প্রতিদিন ক্রমাগতভাবে আমাদের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। গোলাবারুদ ছাড়া বাখমুতে আমার সৈন্যরা অকেজো ও অযৌক্তিক ক্ষতির শিকার হবে না। যদি, আপনার ঈর্ষার কারণে, রাশিয়ান জনগণকে বাখমুতে বিজয় দিতে না চান, তবে এটি আপনার সমস্যা।’